বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ প্যানেলে লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন
প্রকাশিত : ১০:৪০, ২৩ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:৩৩, ২৩ মে ২০২০
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে হেপাটাইটিস নির্মূল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হলেন দেশের বিখ্যাত লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)। তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডা. মামুন বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুক্রবার (২২ মে) মেইল করে আমাকে এ বিষয়ে জানায়। প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি কাজ করবো। পরে সময় আরও বাড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হেপাটাইটিস সর্ম্পকিত স্ট্যাটেজিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপে (এসটিএজি) ১১ জন সদস্য তারা নির্বাচিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে আমি একা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে হেপাটাইটিস বি ও সি নির্মূলের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ মাত্র শুরু হয়েছে। যেহেতু এসব অঞ্চলে রোগী অনেক বেশি তাই হেপাটাইটিস বি ও সি বিষয়ে কী করে কাজ করা যায়, কী করে ২০৩০ সালের মধ্যে এটা নির্মূল করা যায় সে বিষয়ে সরকারকে ইনপুট দেওয়া এবং গাইড করার কাজ করবে এ প্যানেল।
আগামী জুনে বিষয়টি নিয়ে প্রথম মিটিং হবে এবং তারা সেখানে দায়িত্ব ভাগ করে দেবে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান এবং লিভার বাংলাদেশের স্টাডি ফর ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি তিনি হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল–এর এসোসিয়েট এডিটর মনোনীত হয়েছেন। যা বর্তমানে পৃথিবীর পঞ্চম শীর্ষস্থানীয় লিভার বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জার্নাল। ২০১৮ সালে জার্নালটির ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ছিল ৫.৮৪। লিভার বিশেষজ্ঞদের বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এশিয়ান প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দি লিভার এই জার্নালটি প্রকাশ করে থাকে।
এছাড়াও তিনি ইউরো-এশিয়ান জার্নাল অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি এবং জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ড এক্সপেরিমেন্টাল হেপাটোলজি সহ লিভার বিষয়ক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ডে আছেন। তিনি এশীয়-প্রশান্তমহাসাগরীয় লিভার এসোসিয়েশনের হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিউর এবং লিভার ফাইব্রোসিস সংক্রান্ত গাইডলাইন কমিটিগুলোর সদস্য।
ডা. মামুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এম.বি.বি.এস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এম.এস.সি এবং ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোলজিতে এম.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আমেরিকান কলেজ অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অব আয়ারল্যান্ড এবং রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অব লন্ডনের ফেলো।
বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসাবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি তিনি জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও মেটাবোলজিম বিভাগের ভিজিটিং রিসার্চার।
বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন ‘এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশ’-এর তিনি জেনারেল সেক্রেটারী, ‘ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, ‘সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব ডি লিভার’-এর ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর। তিনি ‘ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
এ পর্যন্ত তিনি লিভার বিষয়ক বেশ কয়েকটি টেক্সট বই সম্পাদনা করেছেন। এর মধ্যে ‘লিভার’ প্রকাশ করেছে এলসেভিয়ের, ‘টেক্সট বুক অব হেপাটাইটিস বি’, ‘টেক্সট বুক অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ ও ‘হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি প্রেসক্রাইবার’- এর প্রকাশক জেপি ব্রাদার্স, ইন্ডিয়া আর ‘ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ ও ‘হেপাটাইটিস ম্যানেজমেন্ট আপডেট’ বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে ম্যাকমিলান পাবলিশার্স থেকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বৈজ্ঞানিক জার্নালে তার দুই শতাধিক প্রকাশনা রয়েছে।
হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় নতুন ওষুধ ন্যাসভেক নিয়ে গবেষণা অধ্যাপক স্বপ্নীলের অন্যতম কৃতিত্ব। এ দেশে ন্যাসভেকের ফেইজ ১/২ ও ফেইজ ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তিনি প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর। তার গবেশনালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবা, নিকারাগুয়া, ইকুয়েডর, বেলারুশ ও এ্যাঙ্গোলায় রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে এবং বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধটির রেসিপি অনুমোদন করেছে। এতে হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নতুন সম্ভবনার সৃষ্টি হয়েছে।
অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশের লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি ট্রান্স-আর্টারিয়াল কেমো-এম্বোলাইজেশন (টেইস) এরও পুরোধা এবং এদেশে নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতিতে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকেন।
পাশাপাশি লিভার ফেইলিওরে অটোলোগাস স্টেম সেল থেরাপি চিকিৎসা ও লিভার ডায়ালাইসিসেরও পথিকৃত অধ্যাপক স্বপ্নীল। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। ভয়েস অব আমেরিকা ও বিবিসি বাংলা এ নিয়ে তার সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছে।
তিনি ২০১৩ সালে ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দা লিভার’-এর ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন’ অর্জন করেন আর ২০১৪ সালে ‘ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশন’ কর্তৃক ‘অর্ডার অব মেরিট’-এ ভূষিত হন। ভারতের ‘কলিঙ্গ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন’ তাকে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক ‘ব্লুমবার্গ ওরেশন’ প্রদান করে। ২০১৬ সালে তিনি ভারতের চেন্নাই-এর ‘ভেনাস রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ থেকে ‘ডিসটিংগুইশড সাইন্টিস্ট (হেপাটোলজি)’ পদক লাভ করেন। ২০১৭ সালের ‘হুজ হু’-তে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি ২০১৮-তে ‘মার্কুইস হুজ হু’ কর্তৃক ‘এলবার্ট নেলসন মার্কুইস লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হন। ‘বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ তাকে ‘বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো স্বর্ণ পদন ২০১৮’ প্রদান করেছে।
এছাড়া তার গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দি লিভার’, ‘ওয়ার্ল্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অর্গানাইজেশন’, ‘এশিয়ান-প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দি লিভার’, ‘এশিয়ান-প্যাসিফিক প্রাইমারী লিভার ক্যান্সার এক্সপার্ট গ্রুপ’, ‘জাপান সোসাইটি অব হেপাটোলজি’, ‘টার্কিশ সোসাইটি অব হেপাটো-বিলিয়ো-প্যানক্রিয়াটোলজি’ এবং ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দি লিভার’ কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন।
এনএস/