ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত যৌন নির্যাতন বিরোধী নীতিমালা (ভিডিও)

ফারজানা শোভা, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে যৌন নির্যাতন বিরোধী নীতিমালা। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বাধ্যবাধকতা থাকা সত্তেও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও প্রতিকারে নেই তেমন কোন নজরদারির ব্যবস্থা। অধিকাংশ পাবলিক ও  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র কমিটি থাকলেও তা নিষ্ক্রিয়।

শিক্ষাঙ্গনে অশালীন উক্তি, সহপাঠী, শিক্ষক বা কর্মকর্তার অনৈতিক দৃষ্টি ও প্রস্তাব এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যার মধ্যে সিংহভাগই নারী। অথচ ১৩ বছর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

জনস্বার্থে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির ২০০৮ সালে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা ও কর্ম পরিবেশ তৈরিতে ২০০৯ সালে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে হাইকোর্ট। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নির্দেশনাই আইন।  

রিটকারী সালমা আলী বলেন, “গাইডলাইনটা সুন্দরভাবে দেওয়া আছে। ছাত্রছাত্রী শুধু নয় শিক্ষকদেরও জানতে হবে এই বিষয়টা। তাদের প্রত্যেকটা জায়গায় বিষয়টা থাকতে হবে। যারা এটাকে বাস্তবায়িত করবে তারা কিন্তু সেভাবে করেনি।”

তবে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ বছরেও চিত্র খুব একটা বদলায়নি। নীতিমালা অনুসারে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট অভিযোগ কমিটি গঠন করার কথা। তবে বিএনডব্লুএলের সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে ৭১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি থাকলেও কার্যকর মাত্র ৪৪ শতাংশ। শতকরা ১৯ ভাগ প্রতিষ্ঠান এই কমিটি গঠনে কোনো তথ্যই দিতে পারেনি। আর ৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো অভিযোগ বাক্স।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এ সংক্রান্ত নীতিমালা বা কমিটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাই রাখেন না। 

শিক্ষার্থীরা জানান, কমিটির বিষয়ে ওই রকম কিছু জানি না। এধরনের সমস্যা সমাধানের কোনো তথ্য নাই তাদের কাছে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কমিটি প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাক ইউনিভার্সিটি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির দায়িত্বশীলরা এই কমিটি গঠন ও কার্যকারিতা বিষয়ে কোন তথ্য দিতে নারাজ। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে স্বপদে। 

রায় প্রয়োগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাইকোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দেয়ার কথা থাকলেও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই তা মানছে না। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর মৌলি আজাদ বলেন, “তারা আমাদের কাছে কোনো রিপোর্টই দেয়না। মাত্র ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা তথ্য দিয়েছে এবং তথ্যটা আমাদের কোনো কাজে লাগেনি। দেখা যায় যে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম মাসের পাঠিয়েছে আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরের ছয় মাসের পাঠিয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ হলো না। তারা বিষয়টিকে ততোটা অনুধাবন করতে পারছে না। শুধুমাত্র কমিটি গঠন করে রেখেছে, সুতরাং কাজের কাজ হচ্ছে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রধান জিনাত হুদা ফোনে বলেন, “না আমরা রিপোর্ট জমা দেইনি। কেন দেবো? এটা গোপনীয় বিষয়।”

ডেফোডিল ইন্ট্যারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কমিটি প্রধান ড. শরিফা সুলতানা বলেন, “বছরে ১৫ থেকে ২০টি কেস পাওয়া গেছে। খোঁজ নেওয়া হবে কেন পূর্বের রিপোর্টটা দেওয়া হয়নি। আমার রিপোর্ট প্রস্তুত রয়েছে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে গঠিত অভিযোগ কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “সেই তদন্ত রিপোর্টটা পুনরায় আরেকটি কমিটি চূড়ান্ত করে এবং সেটা সিন্ডিকেটে পাস হয়। তারপরে জমা দেয়ার বিষয়টা প্রশাসনের কাজ। এটা সরাসরি কমিটির কাজ নয়।”

যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি