ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বের উষ্ণতা কমানোর ৫ উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৪, ৯ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘এখনই কিছু করুন নাহলে সংকটের ঝুঁকিতে থাকুন!’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবেদন অনুযায়ী তাপমাত্রায় বিপজ্জনক বৃদ্ধি এড়াতে বিশ্বকে ‘দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’।

জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ক আন্ত: সরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের গ্রহটি ১২ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। যেটা কি-না প্রাক-শিল্পযুগের মাত্রার থেকেও বেশি।

এতে করে আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নেবে বিশেষ করে চরম দুর্ভিক্ষ, দাবানল, বন্যা সেইসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।

তাপমাত্রার এই সীমা অতিক্রম এড়াতে, বিশ্বের উচিত, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তন আনা।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে আপনি কি ধরণের সাহায্য করতে পারেন? সত্যি অর্থে প্রত্যেকের একক প্রচেষ্টা বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ক ওই প্রতিবেদনটির প্রধান সমন্বয়কারী লেখক অরোমার রেভির মতে, ‘সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে’।

‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বড় ধরণের পদক্ষেপ নিতে নাগরিক এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।’

প্রতিদিনের জীবন থেকে এমন পাঁচটি ভূমিকার কথা তুলে ধরা হল, যেগুলো আপনি চাইলে আজ থেকেই পরিবর্তন করতে পারেন।

১. গণপরিবহন ব্যবহার করুন

ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে হাঁটা, সাইক্লিং বা গণপরিবহনের ব্যবহার কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার পাশাপাশি আপনাকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে।

আইপিসিসি এর উপ চেয়ারম্যান ড. ডেব্রা রবার্টস বলেছেন, ‘আমরা শহরে চলাচলের বিকল্প উপায় বেছে নিতে পারি। যদি গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকে। তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি এমন রাজনীতিবিদদের নির্বাচন করছেন যারা গণপরিবহনের বিকল্প ব্যবস্থাগুলো সরবরাহ করবে।’

এছাড়া দূরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাহন ব্যবহার করুন বা ট্রেন যাত্রাকে বেছে নিন। এছাড়া ব্যবসায়ী সফর বাতিল করে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করতে পারেন।

২. শক্তির অপচয় রোধ করুন

ওয়াশিং মেশিনে যদি কাপড় ধুতেই হয় তাহলে সেটি শুকানোর কাজ মেশিনের টাম্বেল ড্রায়ারে না করে, বাইরের রোদে বা বাতাসের মধ্যে দড়িতে মেলে দিন। এতে কাপড় শুকানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এছাড়া বিদ্যুতের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো এড়ানো যাবে।

ঘরকে ঠাণ্ডা করতে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার এর চাইতে বাড়িয়ে রাখুন। এবং ঘর গরম করতে হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে ব্যবহার করুন।

পরের বার যখন আপনি কোনও বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিনবেন, তখন এটি নেবেন যে যন্ত্রটি শক্তি সঞ্চয়ে দক্ষ কি-না। যন্ত্রের গায়ে শক্তি সঞ্চয়ের তারকা চিহ্নযুক্ত লেবেল, ইকো ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি অথবা ইনভার্টার যুক্ত আছে কি-না দেখে নিন।

নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কাজের জন্য আপনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: পানি গরম করতে সৌরশক্তিতে চালিতে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করতে পারেন।

শীতকালে বাড়ির স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ছাদে ঠাণ্ডা প্রতিরোধক স্তর স্থাপন করুন। গরমকালেও ছাদ ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা নিন।

যেসব বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলো আনপ্লাগ করে সুইচ বন্ধ করে রাখুন।

এই বিষয়গুলোকে খুব ছোট পরিবর্তন মনে হলেও শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়।

৩. মাংস খাওয়াকমিয়ে নিরামিষভোজী হয়ে যান

মুরগির মাংস, ফল, শাকসবজি বা শস্যের উৎপাদনের চেয়ে লাল মাংসের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায়।

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১১৯টি দেশ কৃষিখাতে কার্বন নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। তবে তারা কিভাবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারপরও আপনি চাইলে এই কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করতে পারেন। আর সেটা সম্ভব হবে যদি আপনি তিনটি বিষয় মেনে চলেন।

# খাদ্যাভ্যাসে মাংসের পরিবর্তে সবজি এবং ফলের ওপর নির্ভরতা বাড়ান। যদি এটি খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, তাহলে সপ্তাহের অন্তত একদিন মাংস না খেয়ে কাটান।

# দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া কমিয়েও আপনি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা এসব খাদ্যের উৎপাদন ও পরিবহণে প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়।

# আমদানি করা খাবারের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি খাদ্য বেছে নিন। এবং খাবারের অপচয় এড়িয়ে চলুন।

৪. প্রতিটি জিনিস পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা করুন-এমনকি পানিও

আমাদের বারবার পুনর্ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে বলা হয়। কিন্তু কোনও বস্তুকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করতে যে উপকরণ লাগে সেটার পরিবহন এবং প্রক্রিয়াকরণে প্রচুর পরিমাণে কার্বনের ব্যবহার হয়।

তারপরও এটি নতুন পণ্য তৈরির চেয়ে কম শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু পণ্যগুলো পুনঃব্যবহারের ফলে আরও নানা ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেতে পারে। পানির ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।

অরোমার রেভির মতে, ‘আমাদের পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের কাজে জড়িত থাকার চেষ্টা করতে হবে।’

৫. অন্যদের এসব বিষয়ে জানান এবং শেখান

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সবদিকে ছড়িয়ে দিন এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলুন। একটি টেকসই কমিউনিটি জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করুন।

একটি অংশীদার-ভিত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। যেন বিভিন্ন সম্পদ ভাগ করে ব্যবহার করা যায়। যেমন: ঘাস কাটার যন্ত্র বা বাগানের সরঞ্জামাদি।

এতে একটি সবুজ জীবনযাত্রার মান অর্জন করা যাবে।

অরোমার রেভি বলেছেন ‘এই সব পরিবর্তনগুলো যখন কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন অনুশীলন করবে, তখন তারা তাদের কল্যাণে প্রায় কোনও রকম প্রভাব ফেলা ছাড়াই টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।’

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি