বিশ্লেষণ: সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির স্বপ্ন মারা গেছে
প্রকাশিত : ১৩:৩২, ১৫ মে ২০১৮
জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলা ও ফিলিস্তিনিদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অর্ধশতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন। শুধু তাই নয়, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির স্বপ্নের করুণ মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয় টেলিভিশনটির অনলাইন প্রতিবেদনে।
২৭ বছরের নির্বাসন জীবন শেষে ইয়াসির আরাফাত যখন মিশর থেকে গাজায় প্রবেশ করছিলেন তখন লাখ লাখ উৎসুখ জনতা তাকে দেখার জন্য ভীড় করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ১লা জুলাই তিনি মিশর থেকে গাজায় ফেরেন। সেনা প্যারেডের মাধ্যমে তিনি রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেন। ওই সময় শিশুরা তাদের বাবাদের কাঁধে চড়ে হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে তাকে স্বাগত জানান। নারীরা তার গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। ছেলে-মেয়েরা তার গাড়ির দুপাশে ঘিরে দৌড়াদৌড়ি করছিল। এ যেন মহান নেতার মহান আবির্ভাব।
নরওয়ের অসলোতে শান্তি আলোচনা শুরুর এক বছর না যেতেই তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল (১৪ মে) শান্তিকামী ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বর্বরতায় ৫৮ মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনায় শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই দিন ইসরায়েলি সেনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কাসহ মার্কিন প্রশাসনের লোকজন রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নাচ-গান করেছেন। উদযাপন করেছেন জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার দিনটিকে। একইসঙ্গে সমগ্র ইসরায়েলজুড়ে হয়েছে আনন্দ উদযাপন।
ইসরায়েলি ও মার্কিনিরা গাজায় রক্তপাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে সেখানে কিভাবে শান্তি প্রক্রিয়া আরম্ভ হবে সে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। নেই কোনো পরিকল্পনাও। গত সোমবারের হামলার ফলে আরব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে তারাও আর মার্কিন শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে আপাত ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিরা আর কত কাঁদবে, আর কত রক্ত ঝঁরাবে, আর কত বিক্ষোভ করবে? ইতোমধ্যে আরবলীগ জরুরি সভা ডেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি-আরবও মার্কিন ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এদিকে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, মিশরের সিনাই উপদ্বীপের মতো গাজা উপত্যকায়ও যুদ্ধ নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর গাজার শান্তিকামী মানুষ আইএসের কবলে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
আজকে ফিলিস্তিনিরা একা হয়ে পড়েছে। সিরিয়া যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ক্ষমতার জন্য মুসলিম বিশ্বের নেতারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বললেও তারা জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিবে না। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই কয়েকটি গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের ২০ লাখ নাগরিকের কেউ বাপ-দাদার সম্পত্তি ছেড়ে যাবে না। আবার তারা ইসরায়েলি আগ্রাসনও মেনে নিবে না। তাই সেখানে সামনে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে। যেহেতু ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামরিক সহায়তা পাবে না, সেহেতু আইএসসহ জঙ্গিগোষ্ঠী সেখানে আস্তানা গাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাই অদূর ভবিষ্যতেও সেখানে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সিএনএন অবলম্বনে লিখেছেন
নিজামুল ইসলাম জুয়েল
আরও পড়ুন