বিষাক্ত পার্থেনিয়াম ছড়িয়ে পড়ছে ফসলি জমিতে (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৩৯, ১১ অক্টোবর ২০২৩
বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়াম ছড়িয়ে পড়ছে দেশের ফসলি জমিতে। অন্তত ৩৫ জেলায় পাওয়া গেছে এর উপস্থিতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাক্ত এই ঘাস বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। এছাড়া ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ আরও কিছু ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। পাশাপাশি পার্থেনিয়াম গবাদিপশু ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন তারা।
একটি বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়াম। এটি সূর্যমুখীর একটি উপ-প্রজাতিভুক্ত অত্যন্ত আগ্রাসী উদ্ভিদ। উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার সাব-ট্রপিক্যাল অঞ্চল, মেক্সিকো এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে পার্থেনিয়ামের উৎপত্তি।
তবে কালের বিবর্তনে নানাভাবে এটি ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটেছে।
উদ্ভিদবিদরা বলছেন, যশোরে ২০০৮ সালে প্রথম পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। প্রথম অবস্থায় এটি রাস্তার দুই পাশে দেখা। পরে তা ফসলের ক্ষেতেও ছড়িয়ে পড়ে। এখন বিভিন্ন দানা জাতীয় ফসল, ডাল ও তেল বীজ, সবজি, মসলা জাতীয় ফসল, কন্দ জাতীয় ফসল এমনকি ফল বাগানেও পার্থেনিয়ামের দেখা মিলছে।
পার্থেনিয়াম সবচেয়ে বেশি বিস্তার করে আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদ খেতে। এছাড়া গম, ভুট্টা, মরিচ, শিম, টমেটো ও বেগুনের ফুলে আক্রমণ করে ও দানা গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। ধান, ছোলা, সরিষা, গম, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া ও মরিচের বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধি কমিয়ে ফসলের ফলন অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জেলায় পার্থেনিয়ামের উপস্থিতি দেখা গেছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি এ পরগাছা দিনে দিনে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
গবাদিপশুর গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়। এছাড়াও তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। আর পেটে গেলে বিষক্রিয়ায় পশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গাভী পার্থেনিয়াম খেলে দুধ তিতা হয়। আর ওই দুধ কেউ অনবরত পান করলে মৃত্যুঝুঁকি আছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “আশেপাশে সে অন্য কাউকে গ্রো করতে দেয় না এবং সে খুব দ্রুত গ্রো করে। এজন্য পানি বেশি নিয়ে নেয়, নিউট্রেনস বেশি নেয়, তাদের রি-প্রোডাকশন রেট হাই, তাদের সীড ছোট কিন্তু তাড়াতাড়ি বিস্তার ঘটায়, সীডসের গায়ে পালক থাকে ফলে সে উড়ে অনেক দূরে চলে যায়।”
শুধু পশু নয়, আগাছাটি কারো হাতে-পায়ে লাগলে ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হতে পারে।
ড. জসিম উদ্দিন বলেন, “এটা খেলে গরু-ছাগল অসুস্থ হয়ে যায়। স্কিনসহ মানুষেরও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।”
পার্থেনিয়াম ঘাস সাবধানে তুলে পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া আগাছা নির্মূলকারী বিষ দিয়ে এর বংশ বিস্তার কমানো সম্ভব।
ড. জসিম উদ্দিন বলেন, “ফুল আসার আগেই তুলে ফেলতে হবে এটাকে। তারপর আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।”
পার্থেনিয়ামের বীজ অত্যন্ত হালকা, যা বাতাসে ছড়ায়। এছাড়া পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনের মাধ্যমেও সীমান্ত পাড় হয়ে এর বীজ দেশে ঢুকছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এর বিস্তার রোধে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের।
এএইচ