ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বিস্ময়কর এক নারী হেলেন কেলার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৯, ১ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১৮:৫৩, ১ জুন ২০২৪

হেলেন কেলার বাকশ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিস্ময়কর প্রতিভাধর এক নারী। ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন।

বিস্ময়করভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও মাত্র ২৪ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে অর্জন করেন ডক্টরেট ডিগ্রি। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী।

তার বাবার নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট অ্যাডামস। মাত্র ১৯ মাস বয়সেই হেলেন কেলার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।

হেলেনের বয়স যখন মাত্র ছয় বছর তখন মা-বাবা তাকে ওয়াশিংটনের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শের জন্য নিয়ে যান। গ্রাহাম বেল হেলেন কেলারকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, মেয়েটি আর কোনোদিন চোখে দেখতে পাবে না এবং কানেও শুনতে পাবে না। 

হেলেনের আট বছর বয়সে অ্যানি সুলিভান নামের এক গৃহশিক্ষিকা পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এখানে থেকেই তাদের ৪৯ বছরের সম্পর্কের শুরু। অ্যানি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। অ্যানি প্রথমে আঙুল দিয়ে হেলেনের হাতে বিভিন্ন চিহ্ন এঁকে এবং এরপর বর্ণমালা কার্ড দিয়ে বর্ণমালা শেখান। তারপর ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করান। ১০ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন হেলেন। ১৯০০ সালে হেলেন রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে বিশ্বখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। 

সমাজে তার মতো আরো যারা বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন- তাদের জন্য কিছু করার মানসিকতা তার মধ্যে গড়ে উঠেছিল। তিনি এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের সহায়তা অর্জনে সচেষ্ট হন। এতে ব্যাপক সাফল্যও পান। তার জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, মার্ক টোয়েন, চার্লি চ্যাপলিনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সহায়তা পেয়েছেন। হেলেন ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনও বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন। তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ছিলেন অথচ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি সঙ্গীত উপভোগ করতে পারতেন। আশ্চর্য বুদ্ধিমত্তায় হাতের স্পর্শ দিয়ে তিনি শ্রবণের কাজ করতেন। গায়ক-গায়িকার কণ্ঠে হাত দিয়ে অনায়াসে বলতে পারতেন কী সঙ্গীত গাইছেন তারা। তার এমন আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, বহুদিনের পরিচিত মানুষের সঙ্গে করমর্দন করে বলে দিতে পারতেন তার পরিচয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি নৌকা চালাতে পারতেন খুব ভালো। নদীতে সাঁতার কাটতে পারতেন। দাবা ও তাস খেলতে পারতেন। ঘরে বসে নকশিকাঁথা সেলাই করতে পারতেন। হেলেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও লেখালেখি করেছেন। তিনি ছিলেন আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থক। এ পার্টিতে যোগ দেন ১৯০৯ সালে। তিনি আয়ের সুষম বণ্টন দেখতে চাইতেন। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অসমতার শেষ দেখাই ছিল তার ইচ্ছা। তার বই ‘আউট অব দ্য ডার্ক’-এ এ ইচ্ছার কথা লিখে গেছেন তিনি।

বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জীবনের বিড়ম্বনা ও দুঃখ-দুর্দশাকে উপজীব্য করে নির্মিত ডেলিভারেন্স চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন হেলেন কেলার। ট্রেভলিন মিলার রচিত এ নির্বাক ছবি পরিচালনা করেন জর্জ ফস্টার প্ল্যাট। এ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি নিজেই।

নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তিনি বলতেন আসল অন্ধকার হলো অজ্ঞতা, মুর্খতা, অসহিষ্ণুতা, ভুল জীবন দৃষ্টি। তিনি হাজার হাজার নারীর জীবনে রোল মডেল হিসেবে কাজ করেছেন।

১৯৫৯ সালে হেলেন কেলার জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। তার স্মৃতি অম্লান করে রাখার জন্য আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয় হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল। অসাধারণ প্রতিভা ও মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন এ নারী ১৯৬৮ সালের ১ জুন মারা যান।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি