ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিড়ালের জন্য চাকরি ছাড়লেন এই যুবক!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৭, ১১ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

চাকরির জন্য শখ ছাড়েন অনেকেই কিন্তু শখের জন্য চাকরি ছাড়তে দেখা যায় কজনকে? তাও আবার ভ্রমণ সঙ্গী নিজের পোষা বিড়ালকে নিয়ে?

রিচার্ড ইস্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷ গোটা অস্ট্রেলিয়া ঘুরবেন স্লিপার ভ্যানে৷ তবে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কোনও মানুষকে রাখছেন না তিনি৷ সঙ্গে থাকবে তার পোষা বিড়ালটি৷ উইলো তার খুব পছন্দের পোষ্য৷ দু’জনের পারস্পরিক বোঝাপড়াও বেশ জোরালো৷

সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিশ্বের মানুষকে একত্র করেছে এক জায়গায়৷ এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতেও যেমন দেরি হয়নি তেমনি লাখ লাখ লাইক কমেন্ট পরতেও দেরি হয়নি৷ শুধু তাই নয়৷ বহু মানুষ রিচার্ডকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন৷ রিচার্ড ও উইলোর বন্ডিং দেখে অনেকেই ভাবছেন এমন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলবেন৷

ইস্ট এটিকে বলছেন ‘দ্য মোস্ট ওয়েল-প্রিপেয়ার্ড মিড-ওয়াইফ ক্রাইসিস ইন হিস্টরি’৷ রিচার্ড চান তিনি ও তার ৬ বছরের বিড়াল উইলো পুরো অস্ট্রেলিয়ার যত রাস্তা আছে একটাও বাদ না দিয়ে শুধু ঘুরেই বেড়াবেন৷ এরপরই বেড়িয়ে পড়েন দুজন৷ তিন বছর পরেও তাদের ভ্রমণ শেষ হয়নি৷ তারা দুইয়ে মিলে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান৷ একসঙ্গে মনে গেঁথে রাখার মত সুন্দর জায়গায় মনের আনন্দে বেড়ান৷

এভাবেই একে অপরকে সময় দিয়ে চলেছেন দুজনে৷ যেখানে কোনও দেনা পাওনার হিসাব নেই৷ নেই কোনও বাধ্যবাধকতা৷ সেখানেই মজেছেন তামাম ইন্টারনেট ইউজার্স৷ চাওয়া পাওয়ার হিসাবের বাইরে থেকে এরকম বেহিসাবি ঘুরে বেড়াতে কে না চায়?

এই গল্পের শুরু হয় ২০১৪ সালে৷ সে বছরই বেড়ানোর জন্য আইটির চাকরিটা ছেড়ে দেন ইস্ট৷ ‘আমি দশ বছর ওই সংস্থার সঙ্গে চাকরি করেছি৷ তারপরেও আমার প্রতিশ্রুতিময় লাগছিল না আমার পেশাটি৷ আমি লোকসান করেছি বলে মনে হতে থাকে৷’ জানিয়েছেন ইস্ট৷ ‘তখন আমি ভাবি মাস ছয়েকের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসব৷ কিন্তু সেই একই সমস্যার মধ্যে ফিরতে আমায়৷ এই ভাবনাটা মাথায় আসতে থাকে৷ এরপরই ভাবি নাহ৷ ছ’মাসের বেশি সময় দরকার৷ ছ’মাসে হবে না৷’

তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার ভকসওয়াগন ভ্যানটি রিমডেল করবেন৷ সেটাকে বাড়ির মত তৈরি করে ফেলতে হবে৷ যাতে থাকবে বাড়ির মত সবরকম সুবিধা৷ তিনি জানান ‘তারপরেই ভ্যান লাইফের কথা মাথায় আসে৷ আমি নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিই৷ যা কিছু আমি কিনেছিলাম সব বিক্রি করে দিই৷ আমার মাথার মধ্যে ছিল আমি কিভাবে জীবন কাটাব৷ তাই তারপর আমি কম খরচে জীবন যাপন শুরু করে দিই৷’

ইস্ট তার সব মায়ার জিনিস বিক্রি করে দেন৷ কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি একটি জিনিস৷ তা হল তার পোষ্য বিড়াল উইলোকে৷ উইলোর থেকে আলাদা করে নিজেকে ভাবতে পারেননি ইস্ট৷ ‘সত্যি কথা বলতে কি উইলো আমার জীবনের প্লানের মধ্যে ছিল না৷ কিন্তু এটা ঘটে যায়৷ আমি বুঝতে পারি যে উইলোকে পেছনে ফেলে রেখে আমি যেতে পারব না৷ সে সব সময় আমার পাশে ছিল৷ তাই আমি প্রমিস করি আমি কোনও দিনও তাকে ছেড়ে দেব না৷ এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত৷’ জানান ইস্ট৷

কিন্তু বিষয়টা বলতে যতটা সহজ ঘটানোটা তত সহজ ছিল না৷ একটা বিড়ালকে ‘ট্রাভেলিং ক্যাট’ তৈরি করা সহজ নয়৷ কারণ সে সারা জীবন ঘরের ভিতরে থেকেছে৷ ‘যখন আমি ভ্যানটা তৈরি করছিলাম সসময় উইলো অনেকটা সময় আমার সঙ্গে কাটিয়েছে৷ তখন সে বুঝতে পারে এটা তার জন্য নিরাপদ ঘর হবে৷ এবং সে শিখে ফেলে তার ভিতরে থাকা৷’ জানান ইস্ট৷

যদিও তিনি উইলোকে ভ্রমণের পাঠা খুব ধীরে ধীরে পড়িয়েছেন৷ ‘আমি প্রথমে উইলোকে নিয়ে উইকেন্ড ট্যুরে যেতে শুরু করি৷ তারপর পুরো সপ্তাহ৷ এরপর সে শুধু শিখেই ফেলে না বেড়ানোকে ভালবেসে ফেলে৷’ এমনটাই নিজের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন ইস্ট৷

‘আমরা দুজনেই শিখে ফেলি কীভাবে একটা ছোট্ট জায়গায় থাকতে হয়৷ তবে এখন আমরা সত্যিই আমাদের ‘পা’ খুঁজে পেয়েছি৷’ জানান তিনি৷ এই জুটি সপ্তাহে প্রায় ৪০ মাইল ভ্রমণ করে৷ উইলো ইতিমধ্যেই ট্রপিক অফ ক্যাপ্রিকর্ন পার করে ফেলেছে ছ’বার৷ উইলোর এই ভ্রমণে সবথেকে প্রিয় বিষয় হল বেড়ানোর সময় বেড়ালের ঘুমনোর সবথেকে ভালো জায়গা কোনটা সেটা খুঁজে বের করা৷ ইস্ট জানিয়েছেন ‘উইলো সবসময় খুঁজতে থাকে সবচেয়ে ভাল জায়গা কোনটা আর সবথেকে নরম ঘাস কোন মাঠে আছে৷ তবে সে সবথেকে পছন্দ করে ধুলোয় স্নান করা৷’

‘ধুলোয় চান করা উইলোর আগেকার অভ্যাস৷ সেই ধুলো ভর্তি গা নিয়েই ভ্যানের ভিতর চলে আসে উইলো৷’ ইস্ট তার এই জীবনকে ‘ক্যাট লাইফ’ বলে ডাকেন৷ যেটা তাকে অনেক বেশি জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে৷ ‘যদি উইলো মনে করে এক জায়গায় সে ভ্যানের বাইরে ঘুমোবে৷ তাহলে কিছুতেই তাকে তখন ধরে ভ্যানের ভিতর আনা যাবে না৷ সেখানেই তখন কিছুক্ষণ থেকে যাই৷ একটা বেড়ালের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে সময় নিয়ে বসতে শেখা যায় এবং দেখা যায় বিশ্বের সময় কিভাবে এগোচ্ছে৷’

আর কিছু ভাবতে চান না ইস্ট৷ এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান সময়৷ তিনি ও তার উইলো মিলে যা ইচ্ছে তাই করতে চান৷ সেটাই করে চলেছেন৷ সেটাই করে যাবে ন৷ দুজনের এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়৷

সূত্র: কলকাতা ২৪x৭

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি