ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এখলাছ উদ্দিন আর নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫১, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ | আপডেট: ১৪:২৯, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বীর, কিংবদন্তী রাজনীতিক ডা. এখলাছ উদ্দিন (৮৫) আর নেই। 

সোমবার (২৭ নভেম্বর ২০২৩) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শহরের মেহেদীবাগের চউক শিশুকানন বিদ্যালয় মাঠ, সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়মাঠ ও বহরপুর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। 

চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের সঙ্গে একলাছ উদ্দিনের নামটি একাকার হয়ে আছে। আগাগোড়াই যিনি ছিলেন একজন নির্ভেজাল রাজনীতিক। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে যাঁর প্রবাদতুল্য অবদান। জীবন-যৌবনের বেশিরভাগ সময় যিনি ব্যয় করেছেন রাজনীতির অলিতে-গলিতে, দুই দশকেরও বেশি সময় যিনি ছিলেন সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সীতাকুণ্ডের মাটি ও মানুষের সাথে ছিল যাঁর নিবিড় সম্পর্ক। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের কাছে যার ছিল ঈর্ষণীয় গ্রহণযোগ্যতা, সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

ডা. এখলাছ ১৯৩৮ সালের ২০ এপ্রিল সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দুর রহমান বার্মা রেলওয়ের হিসাব কর্মকর্তা ও পরে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাগদাদেও কর্মরত ছিলেন তাঁর বাবা। 

ডা. এখলাছ ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। আইএসসি পাশ করেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা (মিটফোর্ড) মেডিকেল স্কুলে এলএমএফ কোর্স সম্পন্ন করেন। এমবিবিএস পরীক্ষা চলাকালীন স্বাধীনতাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তা আর শেষ করতে পারেননি। পরে ভারতীয় দুটি মেডিকেল সংগঠন তাঁকে ফেলোশিপ দেয়। ১৯৬২ সালে আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার বৃত্তি পেলেও বাবার গুরুতর অসুস্থতার কারণে আর যাওয়া হয়নি।

’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে জাতির প্রতিটি অপরিহার্য আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মেডিকেল স্কুলে ১৭০ দিন ধর্মঘট করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ স্থাপনে তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসনের সময়েও হুলিয়া জারি হলে তাঁকে বগুড়া, কুষ্টিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। 

১৯৬৮ সালে সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সক্রিয় কমিটি হলে ডা. এখলাছ ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়ার সামরিকবাহিনীর সদস্যরা তাঁর ওপর চরম নির্যাতন চালায়। 

১৯৭১ সালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের হরিণা ক্যাম্পে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও মোটিভেটর ছিলেন তিনি। এছাড়া যুবশিবির ও শরণার্থী শিবির দেখভাল করার দায়িত্বও তাঁর ওপর ছিল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর ডা. এখলাছ সীতাকুণ্ডের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সিভিল প্রশাসন স্থাপন করেন। স্থানীয় এমপি’র অনুপস্থিতিতে তিনি ডেপুটি এডমেনিস্ট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

সার্বক্ষণিক রাজনীতি করতে গিয়ে ডা. এখলাছকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। ’৭১ সালে সীতাকুণ্ডের বড়দারোগাহাটে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এছাড়া বহরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় পাকবাহিনী। 

১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সময় সীতাকুণ্ড বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বার পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি