বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী
প্রকাশিত : ১১:২৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
১৬ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের এইদিনে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অসামাণ্য বীরত্বের জন্য তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্মুখযুদ্ধে শাহীদ হন তিনি।
দিবসটি উপলক্ষ কেক কাটা, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মোস্তফা কামালের পিতা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মাতা মালেকা বেগম। ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই স্কুলের পড়াশোনার চেয়ে ভালো লাগত সৈনিকদের কুচকাওয়াজ ও মার্চ করা। নিজেও স্বপ্ন দেখেন সৈনিক হওয়ার। ১৯৬৭ সালে কাউকে কিছু না বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি।
১৯৭১ সালে মোস্তফা কামাল ২৪ বছরের যুবক। ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে আন্দোলিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সিপাহি মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি দল ব্রাম্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। সংখ্যায় বেশি ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানীদের মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিলো অদম্য মনোবল।
১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ, ১১টার দিকে শুরু হলো প্রচণ্ড বৃষ্টি। একইসাথে শুরু শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করলো। শুরু হলো সম্মুখযুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগল। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন স্টেনগান।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আধুনিক অস্ত্র ছিলোনা, সংখ্যায়ও অনেক কম তারা। আর পাকিস্তানি সৈন্যরা সংখ্যায় ছিলো বেশি, ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তারা। হয় সামনা সামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয় পিছু হটতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এই মহান দায়িত্ব? এমন সময় আরও এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে বিঁধল গুলি।
এমন মুহূর্তে মোস্তফা কামাল সকল সহযোদ্ধাদের সরে যেতে বল্লেন, পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলে তিনি আবারও সবাইকে নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থেমে যেতে হয়। মারা পড়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সৈন্য। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা নিরাপদে চলে যান।
একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। তখন হঠাৎ করেই একটি গুলি লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন মোস্তফা কামাল।
তাঁর এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পায়।
দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয় জাতির এই শ্রেষ্ঠ বীরকে। তিনি আমাদের গর্ব ও গৌরব।
এএইচ/