ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বুক রিভিউ : সাদা পালকের নির্জনতা

সুপ্রিয়া দেব নাথ

প্রকাশিত : ১০:৫২, ২৭ এপ্রিল ২০২১

Ekushey Television Ltd.

একুয়া রেজিয়া ছদ্মনামে লিখলেও লেখকের প্রকৃত নাম মাহরীন ফেরদৌস। সাহিত্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত হন ২০১০ সাল থেকে। মূলত সৃজনশীল জগতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৩ সালে একুশে বইমেলার মধ্য দিয়ে। প্রথম উপন্যাস ‘কিছু বিষাদ হোক পাখি’। বর্তমানে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সাত।

লেখক স্বাধীনচেতা ও অন্যমনা। ব্যবসা শিক্ষা এবং চার্টার্ড একাউন্টেন্সি নিয়ে পড়ালেখা করলেও হৃদয়ের টানে বারবার ফিরে এসেছেন সাহিত্যের ভুবনে। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় তিনি প্রাণ খুঁজে পান। নিজ ভূখণ্ডের বাইরে প্রিয় লেখকের তালিকায় আছেন ম্যাক্সিম গোর্কি, হেনরি ও পাওলো কোয়েলহো। উপন্যাসের বাইরে লিখেছেন গল্প, ফিচার ও ভ্রমণকাহিনী। বর্তমানে বসবাস করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসে।

লেখকের লেখনীতে দৃশ্যমান কিছু বৈশিষ্ট্য :
১. চেতনাপ্রবাহ (stream of consciousness) এর উপস্থিতি। অনবরত চিন্তা ধারা একের পর এক উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমান থেকে অতীত, অতীত থেকে বর্তমান বারবার চরিত্রের ভাবনায় সাড়া ফেলেছে।
২. নির্দিষ্ট কিছু ঘটনায় জাদুবাস্তবতার (magic realism) মিশেল অনুভূত হয়। বিশেষ করে প্রধান চরিত্র ঋতু ও তার ভাই ইমনের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাটিতে, মিনিম্যান ও ঋতুর পরস্পরের প্রতি মানসিক আবদ্ধতার ঘটনায়।
৩. চমৎকার শব্দচয়ন ও সুন্দর উপমার ব্যবহার। যেমন: দলছুট কীট, অলীক জল, শীতল সন্ধ্যা, নীল মাছি ইত্যাদি।
৪. ওয়েস্টার্ণ মিউজিকের উল্লেখ।যেমন: জ্যাজ মিউজিক, কান্ট্রিরক, কোয়ের সং, ক্লাসিক সং।
৫. বর্তমান যুগের আধুনিক মানুষের আত্মিক দ্বন্দ্ব ও নিঃসঙ্গতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
৬. নারীবাদী না হলেও লেখনীতে নারীদের শক্ত অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে।
৭. চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমের উল্লেখ।যেমন: গ্ৰাফিতি, সিলুয়েট, মুরাল চিত্র ইত্যাদি।
৮. বিভিন্ন তত্ত্বের বর্ণন। যেমন: মারলো'স হায়ারার্কি অফ নীডস, আউট অফ দা বক্স, হিউম্যান সিনার্জি।
৯. কিছু বিশেষ শব্দের ব্যবহার। যেমন: পটলাক, জেটল্যাগ, প্রলেতারিয়েত, ব্রেক থ্রু ব্লিডিং, মিনিমালিস্ট, এমবিভার্ট, দা পাওয়ার অফ লোক্যালিটি, স্কেপ মেকানিজম।
১০. বিভিন্ন প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ ও   প্রকৃতির পালাবদলের দিকটিও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু কথা :
প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে তিনটি নীল ফুলের মাঝে একটি লাল শাড়ি পরিহিতা নারী এবং তার বিপরীত পাশে একটি পুরুষ নীল রঙের পোশাকে আচ্ছাদিত। প্রচ্ছদের লাল নীল রঙের ব্যবহার কাহিনীর অন্তর বয়ানের সহায়ক। লাল ভালোবাসার আর নীল বেদনার রং। আপাতদৃষ্টিতে নারীর প্রতিচ্ছবি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ও পুরুষের প্রতিকৃতির মাঝে মগ্নতা যিনি বেদনায় নীল। কাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাব প্রধান চরিত্র ঋতু তার জীবনের বহু পাঠ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে মিনিম্যানের কাছে এসে পূর্ণতা খুঁজে পায়। তাকে খুব বেশি কাছে পেতে চায় কিন্তু বিপরীত দিকে অজানা অতীতের পিছুটান থেকে মিনিম্যান কিছুতেই নিজেকে মুক্ত করতে পারেনা। তাই তাদের মধ্যে আসে বিচ্ছেদ। এই বিচ্ছেদের পরিণতি কি তা ঋতুর অজানা। কিন্তু বহুদিনের খোলস থেকে মুক্ত হতে পেরে ঋতু স্বাধীন জীবনের ও প্রেমের প্রকৃত স্বরুপকে আলিঙ্গন করতে সক্ষম হয়। প্রচ্ছদের সার্থকতা এখানেই যে ঘটনার আমি সার্থক রূপে প্রতীয়মান হয়।

নামকরণ :
আধুনিক জীবনে মানবজীবন কোন একরৈখিক ঘটনার সমন্বয় নয় বরং দিন শেষে তা হয়ে ওঠে এক ডার্ক কমেডি।মানুষের এই মন যেন পালকের মতোই সজীব কিন্তু বুদবুদের ন্যায় ভাসমান যা নিজর্নতায় পরিপূর্ণ।

তাই কাছের মানুষকে ভালোবাসার কথাগুলো কিংবা হৃদয়ের একান্ত অনুভূতি গুলো কখনও বলা হয়ে ওঠে না।

ঋতুর ভাষায়- ‘মাঝে মাঝে বেঁচে থাকা হয়তো একটি রহস্যময় ও অনিশ্চিত কিছুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম’। ঋতুর ভাস্যে- ‘যেন কোন মস্ত বড় পাখির সাদা পালকের নির্জনতায় ঢাকা পড়েছে রোজকার পৃথিবী’। লিলিয়ানা চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়েও ঋতু বলে লিলিয়ানাকে দেখতে একটা ধবধবে সাদা পাখির মতো মনে হচ্ছে যার পলকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পুরুষ। 

‘সাদা পালকের নির্জনতা’ উপন্যাসের নামকরণের ক্ষেত্রে লেখক মানুষের জীবনকে সাদা পালকের মতো শুভ্র ও অস্থিতিশীল ও এর পিছনে লুকিয়ে থাকা নির্জনতাকেই দৃকপাত করেছেন। ঋতু বলছে- ‘একটা সময় ওর মনে হলো সমস্ত শরীর পালকের মতো হালকা হয়ে যাচ্ছে। ও ভাসছে দুলছে স্রোতের মতো এগোচ্ছে পেছাচ্ছে। ওর মন উৎকর্ণ, অতল, গহন।সবচেয়ে চলমান ও গতিময় ওর চিন্তাটুকু’।

ঘটনার মূলে গেলেও আমরা দেখি প্রধান চরিত্র ঋতু, লিলিয়ানা ও কেলেন ছাদের নিচে বসবাস করেও কতটা নিঃসঙ্গ। তাই উপন্যাসের নামকরণ যথার্থ।

প্রাককথন :
আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে মানবীয় জীবন হয়ে উঠেছে গভীর রহস্যময়, যার প্রতিটি কোঠরে কোঠরে কোন পেলবতা নেই আছে নিদারুণ বাস্তবতার ছোঁয়া। সেখানে দাঁড়িয়ে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষের মাঝে অসহায়ত্ব ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ‘সংকটের সাথে এমন কোনো দুঃখ-বেদনার সংমিশ্রন থাকতে হয় যাতে করে দুজন মানুষ প্রবেশ করতে পারে কোন বইয়ের একই অধ্যায়ে একই পাতায়’। 

‘বাস্তবতা হলো, পথে নেমেই মানুষ হারায় পথ আর পৃথিবীতে কেউ কারো ভ্রমণ সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে না। প্রত্যেকেই তার নিজের জীবনের উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র।পারে কিন্তু পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব নয়।মানুষ বাঁচে তার চারপাশের সবকিছু ও সবার স্পর্শ নিয়ে- স্মৃতি নিয়ে।  যারা তার জীবনে এসেছিল বা এসেছে তাদের সবাইকে নিয়ে জুড়ে থেকে বাঁচে’। জীবন বলতে ভালো-মন্দ দিক নয় বরং কোন গোপন সুড়ঙ্গে গাঢ় প্রলেপ জমাতে থাকে মলিনতা আর বিষন্নতা।

কাহিনী বিন্যাস :
প্রধান চরিত্র ঋতুর নামকরণও খুব প্রাসঙ্গিক। ধরিত্রীতে ঋতুর যেমন পালা বদল ঘটে তেমনি কেন্দ্রীয় চরিত্র ঋতুর জীবনেও পালাবদল ঘটেছে একাধিকবার। তার জীবনের সঙ্গে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় একাধিক চরিত্র যুক্ত হয়েছে।সেই একেকটা অধ্যায় পর্ব আকারে উঠে এসেছে উপন্যাসে। মোট বিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে সমগ্ৰ উপন্যাসটিকে। একেকটা অধ্যায় একেকটা ঘটনাক্রমকে তুলে ধরেছে যা একাধারে সুখপাঠ্য ও কাহিনী অনুধাবনের ক্ষেত্রে সহায়ক।

কাহিনী সংক্ষেপ :
কেন্দ্রীয় চরিত্র ঋতু প্রবাসে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বসবাস করছে আমেরিকান মিডওয়েস্ট শহরে।তার চিন্তা ও চেতনার জগতের প্রবাহের মধ্য দিয়ে কাহিনী উন্মোচিত হতে থাকে। ঋতু অতীতকে নিয়ে ভীত, বিষাদগ্রস্ত আর শূন্যতায় লীন। তার আবদ্ধ জীবনে আনন্দেরও মুক্তির ছায়া ফেলে মিনিম্যান। মিনিম্যান আসার পূর্বে ঋতু তার মা ও অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছিল। একমাত্র ছোট ভাই ইমন যখন তার চোখের সম্মুখে আত্মহত্যা করে সে চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ছিল সে। এই গ্লানি থেকে মুক্ত হতে একাধিক বিষয় থেকে নিজেকে সে বিযুক্ত রেখেছে। জীবনে রবিন পরে রানা এরও বহু পরে হোয়াইট অ্যামেরিকান জ্যাক এলেও ঋতু মিনিম্যানের পরশ পেয়েই জীবনকে ভিন্ন রূপে দেখতে শিখে। ঋতু জীবনের প্রয়োজনে একাধিক স্থল পরিবর্তন করলেও লিলিয়ানা ও কেলেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন অবস্থান করে। লিলিয়ানা ও কেলেনের জীবনের গল্পও একেবারে ভিন্ন। কাহিনীর শুরুতে যে ঋতুকে একেবারে স্বার্থপর ও এমবিভার্ট মনে হয় কাহিনীর শেষে সেই ঋতুকেই একেবারে ভিন্ন মানুষ রূপে দেখা যায়। ভালোবাসার মুক্তদ্বার তার হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। আর সে প্রশান্তি তাকে প্রশ্বস্ত থেকে গভীর ও গভীরতর করে তুলে।মিনিম্যানকে সকল কিছু উজাড় করে দিয়ে তার বুকের ভেতরটা হয়ে উঠে ফাঁপা। ‘যেন শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। আবার যেন পরাবাস্তব কোন বৃষ্টিতে ভিজে উঠছে বারবার। তারপরও সেখানে অনন্তকালের তৃষ্ণা আর শূন্যতা।অলীক জলের শিহরণে বিদ্ধ হতে থাকে ঋতু’।

কাহিনীর বাইরেও ছোট ছোট উপকাহিনী আছে। যেমন- ঋতুর প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আয়দিন তার মৃত স্ত্রীকে আজও অসম্ভব ভালোবাসেন। রাত দশটা বাজলেই তিনি স্ত্রীর স্মৃতির টানে ফিরে যান ঘরে। কেলেন যাকে আপাত দৃষ্টিতে প্রচন্ড অসহনীয় মনে হয় কিন্তু এই কেলেনই ম্যারিলিন নামক একজন অপরিচিতের কাছে নিজের সকল সত্যকে প্রকাশ করে হালকা অনুভব করে। সাক্ষাতের শুরুতে যাকে সে তীব্র ভৎর্সনা করে ছিল একসময় সেই মানুষটিই হয়ে ওঠে তাঁর খুব কাছের বন্ধু। জীবন এমনই বিচিত্র। যাকে কিছু মুহূর্ত আগেও প্রচন্ড বিরক্তিকর মনে হচ্ছিল সেই মানুষটাই পরক্ষণেই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কাছের।

উপন্যাসের ক্লাইমেক্স বলা যায় সেই জায়গাটিকে যেখানে ঋতু, কেলেন ও লিলিয়ানা নিজ নিজ স্থানে অসহায়ত্বের স্বীকার। লিলিয়ানা তার কাঙ্খিত মানুষের স্বরূপ উন্মোচন করে। বুঝতে পারে ডাস্টিন উপরে উপরে যতই ভালোবাসার বুলি আওড়াক না কেন কিন্তু যা তার নেই তা হলো গভীরতা ও অন্তর্দৃষ্টি। ঠিক সেই মুহূর্তে কেলেন ঈগল ক্যাসিনো থেকে রাত ১১ টায় তার ৬০০ ডলার হেরে বের হয়ে আসে ক্ষিপ্র গতিতে। তখন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের কাছে নিজের সম্পর্কে সত্যটুকু জেনে প্রথমবার নিজেকে বড় করুণার পাত্র মনে হয় নিজের কাছেই। অন্যত্র ঋতু যে কিনা গ্যাস স্টেশনের সামনে নিয়মিত এক ভিয়েতনামি বৃদ্ধকে একাধিক দিন স্যান্ডউইচ কিনে দিতে চেয়েছে সেই ব্যক্তিটির আকস্মিক মৃত্যু তার ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়। ‘কি আশ্চর্য, যেন পথে নেমে তিনজন একই সাথে পথ হারিয়েছে ভিন্নভাবে, বিভ্রান্ত হয়ে। কিংবা যেন ননস্টপ চলতে চলতে কোন গতিময় বাস তিনজন ভিন্ন যাত্রীকে একই স্টেশনে ফেলে চলে গেছে। যেখানে হয়তো তাদের কোনদিন থামবার কথাই ছিলনা’।

ঋতুর জীবনের পালাবদলের আরেক অংশে আসে জ্যাক, এক হোয়াইট আমেরিকান। ঋতু বারবার অভিনয় করেছে রবিন, রানা আর জ্যাকের সঙ্গে। কিন্তু যে মিনিম্যানকে সে একান্ত করে নেয় সেই মিনিম্যান তার কাছে সহজ হতে পারে না। নিজেকে সে সরিয়ে নেয় দূরে বহুদূরে।

কাহিনীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাকে ঘিরে একাধিক চরিত্র এসেছে। মিসেস মরিসন ঋতুর মা, জাতীয় ঋতু এড়িয়ে এসেছে, পরিশেষে তার সঙ্গে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়েছে। এভাবে কাহিনীর শেষে দেখি শুরুতে যে চরিত্রগুলি অনেক দ্বিধান্বিত শেষে তারাই নিজেদের জীবনের সুখ খুঁজে নিয়েছে। লিলিয়ানা বিয়ে করে পলকে, কেলেনের স্ত্রী সোফিয়ার বিয়ের ঘোষণায় যে কেলেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে ও তার জীবনকে মেনে নেয়।আর ঋতুও জীবনের স্রোতধারায় মিশে যায়। দূর হয় তার সমস্ত গ্লানিবোধ।

স্নেহের অর্গলছায়ায় দিজত্ব বাড়ে
ক্রমাগত ছায়া- রোদে মেলে ধরে আপনারে
ক্ষণিকের মিলনমেলায়
বুঝিতে নারে স্ব স্থান
ক্রমানয়ে দূরাগত, বোধের পাহাড় লুন্ঠিত
অর্গল ভেদ করি প্রবেশ করে
যেজনা 
মাল্যদান করি তাহার তরে।।

চরিত্র সমুদয় :
ঋতু- প্রধান চরিত্র ঋতু তার পরিমন্ডলে ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরে। সুবিধাবাদী শব্দ দিয়ে ঋতু নিজেকে নিজেই অভিহিত করেছে। উপযুক্ত সময়ে ঠিক কথাটি না বলার জন্যে বারবারই ঋতুর আফসোস হয়েছে। ঢাকাবাসী ঋতু এখনও অনেক বেশি নস্টালজিক। নিজের অতীতের বোধাগার থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে অক্ষম।তাই রবিন পরে রানা এবং আরও পরে জ্যাকের প্রস্তাবেও‌ ঋতু নিজেকে মেলে ধরতে সমর্থ হয় না। নিজের মার সঙ্গে দূরত্ব বারবার প্রকটভাবে উত্তাল তরঙ্গের মতো তাদের মধ্যে আছড়ে পড়েছে।ঋতু ইচ্ছা করেই তা অটুট রেখেছে। নিশাচর ঋতু পড়তে, গান শুনতে, সিরিজ দেখতে তার ভালো লাগে। চরিত্রের দিক থেকে এমবিভার্ট ঋতু না চাইতেও নিজের চারিপাশে দেয়াল গড়ে নিয়েছে। তবে প্রফেসর আয়দিন ও পরে মিনিম্যানকে নিজের কথাগুলো সে জানিয়েছে। সকল সম্পর্কে জড়িয়ে সে অভিনয় করেছে। আর দিনে দিনে অন্তরের গভীরে গোপনে পালিয়ে বেঁচেছে।

কৈশোরে আদরের ভাই ইমনকে হারিয়ে সে গ্লানি নিয়ে পথ চলেছে দীর্ঘকাল। ইমনের আত্মহত্যাকে তার কাছে স্ব লিখিত মৃত্যুদন্ড মনে হয়েছে। লিলিয়ানাকে উপকার করতে যেয়ে সে অলক্ষ্যে তার ক্ষতিই করছে। জীবনের স্তরে স্তরে জমে থাকা মুষ্ঠিমেয় আক্ষেপ তাকে বারবার আলিঙ্গন করেছে। তবে সে হার মানেনি।শৈশবে পিতা-মাতার সম্পর্ক ঋতু কেবলই দেখেছে সন্তান পালনের অদৃশ্য চুক্তি হিসেবেই।তারই প্রতিফলন ঘটেছে তার ভবিষ্যৎ জীবনে। মৃত্যুই তার কাছে ধ্রুব সত্য তা বারবার তাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে।

স্বাধীন জীবনের স্বাদ ও অসহনীয় বাসস্থান ঋতুকে ক্রমান্বয়ে তাড়িয়ে বেড়ালেও ঋতু বিশ্বাস করেছে সুখী জুটি তারাই যারা জানে কখন পরস্পরকে ছাড় দিতে হবে ও নিজের জগতে ডুবে আবারও ফিরে আসতে হবে।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ঋতুকে স্বার্থপর মনে হলেও সে মূলত পরিস্থিতির স্বীকার। দীর্ঘদিনের জমে উঠা ধূলো যখন নিমেষে উড়ে গেছে তখনই প্রথম ঋতু নিজেকে মেলে ধরেছে।

মিসেস মরিসন :
ঋতুর মা যার সম্পর্কে ঋতু নিজেই বলেছে: ‘কেমন বিচিত্র একজন মানুষ। জীবনের এত উত্থানপতন, পরিস্থিতির পালাবদল, স্বামীর মৃত্যু, দ্বিতীয় বিয়ে, দেশ বদল, আচমকা নানা ক্ষরণ, অপ্রচলিত কিংবা প্রাপ্তি, ইমনের মৃত্যু কিংবা ঋতুর সাথে দূরত্ব; কোনোকিছুই তাকে বদলাতে পারেনি’। এ যেন চিরায়ত মাতৃরুপ যিনি সকল পরিস্থিতিতেই নিজ সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন।

লিলিয়ানা : 
ঋতুর রুমমেট যাকে দিয়ে বিভিন্ন ট্রিক খাটিয়ে ঋতু নানা কাজ করিয়ে নিয়েছে।প্রাক্তন প্রেমিক ডাস্টিনকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে দেখে আক্রোশে ফেটে পড়েছে। কিন্তু এই ডাস্টিন তখন দ্বিতীয় বার তার জীবনে এসেছে কোনভাবেই তাকে আর মানতে পারেনি। ‘একদিকে ডাস্টিনকে হারানোর ভয়, তার প্রতি আকর্ষণ এবং অন্যদিকে মনের ভেতরে কোথায় যেন ঘৃণা-ঘূর্ণির আলোড়ন’।

একসময় ডাস্টিনের সঙ্গে মিলনের পরে সাময়িক ভাবে ট্রমাটাইজড হয়েছে। অবাঞ্চিত মাতৃত্ব থেকে রক্ষা পেতে অতিরিক্ত পিল গ্ৰহনের ফলে ‘ব্রেক থ্রু ব্লিডিং’য়ের স্বীকার হয়েছিল।হয়তো তার মধ্যেও তার মার মতো একাকী হবার ভয় ছিল।তাই এমন পরিণতি সে চায়নি।

লিলিয়ানা তার সৎ বাবা ম্যাথিউয়ের কাছেই বড় হয়েছে আর তাকেই বাবা বলে মানে।প্রচন্ড বিলাসী সূন্দরী ও পরিপাটি লিলিয়ানাও টলে উঠে প্রেমের স্বরুপ জানতে। তার ভাষায় তার মা যেমন সঙ্গীহীনতায় ভুগেছে কারন তার পিতা মি: ম্যাথিউ প্রচন্ড দায়িত্ববান হলেও তিনি সর্বদাই স্থায়ী সঙ্গী খুঁজেছেন, কাউকে প্রকৃত ভালো বাসেননি।লিলিয়ানাও নিজ জীবনে প্রকৃত সঙ্গী খুঁজেছে আর পলকে বিয়ে করে তা পূর্ণতা লাভ করেছে।

কেলেন :
জার্মানির পাসাও শহরের অধিবাসী। অ্যাকাউন্টিংয়ে বেশ ভালো রেজাল্ট করেও সে ব্যাংকে কর্মরত ছিল। ঋতুদের ফ্লাটে শারীরিক ভাবে স্থূল এ পুরুষটি ধীরে ধীরে তাদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। কেলেনকে অগভীর মনে হলেও তার ক্ষত সে লুকিয়েই রেখেছে।

ষোলো বছরের প্রেম ও তেরো বছরের দাম্পত্য শেষে তার বর্তমান স্ট্যাটাস সে সিঙ্গেল ও ডিভোর্সি।এর বেশি সে কাউকে বলেনি।তবে ক্যাসিনোর সামনে প্রথমে মেরিলিন নামক বৃহন্নলাকে সে অবঙ্গা করলেও মেরিলিনই তাকে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচায়। মেরিলিন তাকে বলে সব থাকতেও‌ কেন সে জীবনটাকে জটিল করে তুলেছে। ‘আসলে মানুষ যে কিসে সুখ পায় কেউ জানে না’। মেরেলিন কেলেনের দুঃখকে মেনে নিয়ে অকপটে বলে-কেউ মারা গেলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে তুমি হয়তো কিছু হারাবে কিন্তু ডিভোর্সে তুমি যা বা যাকে হারাচ্ছ তার সাথেই তোমার একই পৃথিবীতে ভিন্নভাবে বাঁচতে হবে’। মেরেলিনের সম্মুখেই কেলেন স্বীকার করে বিগত বছরগুলোতে সে অনেক অঘটন ঘটিয়েছে। স্ত্রীকে অবহেলা, উপেক্ষা করা, অফিসের নারী কলিগদের সাথে অস্থায়ী প্রেম, একজনকে বাজেভাবে স্পর্শ পর্যন্ত করেছে সে তার অনুমতি ছাড়াই, আরেকজনকে নিয়ে বিছানায়ও গিয়েছে। এতো কিছুর পরেও হয়তো তার প্রত্যাশা ছিল সোফিয়া ফিরে আসবে। কিন্তু সাবেক স্ত্রীর বিয়ের দিন ঠিক হলে সে সংবাদে সে অসুস্থ হয়ে পড়লেও শেষে নিজেকে সামলে নিয়েছে।

মিস্টার আয়দিন :
মি: আয়দিন ঋতুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিখ্যাত ও মানবহিতৈষী প্রফেসর। ঋতু সবসময়ই তার ব্যাপারে উৎসাহী ছিল। কেননা প্রফেসর আয়দিন খুঁজে খুঁজে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতেন। সফলতার শীর্ষে থাকা এই বয়স্ক প্রফেসর অনেক বার ঋতুকেও সহায়তা করেছেন। কিন্তু তার ক্ষতের কথা ঋতু অন্য কারো মুখে শুনেছে।বিষন্নতায় ঋতু যখনই ডুবে গেছে প্রফেসর তাকে এমিলি ডিকিনসনের কবিতা বিশেষত ‘হোপ’ পড়তে বলেছেন। মৃত স্ত্রীর প্রতি প্রবল প্রেম তাকে এক বিশেষ প্রেমিক রুপেই উপস্থাপন করেছে। ঋতু সকংটের মুহূর্তে তার শরনাপন্ন হয়েছে। লিলিয়ানার সৎ ভাই কর্তৃক লাঞ্চিত হবার মুহূর্তেও প্রফেসরই ঋতুকে তার ফ্ল্যাট অবধি পৌঁছে দিয়েছে।

মিনিম্যানকে ঘিরে ঋতু যখন প্রবল আলোড়নের স্বীকার তখন প্রফেসরই তাকে ভালোবাসার সঙ্গায় বলেছেন- এই অনুভূতি তখনই তোমাকে নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে প্রকট ধারণা দেবে যখন তুমি অনুভব করবে কাউকে নিয়ে তোমার ভাবতে অনেক ভালো লাগছে। তোমার চারপাশের নানা দৃশ্যে তুমি তাকে আনতে ও বসাতে চাইছো। তাকে বুঝতে পারছ অনেক শব্দ, বাক্য, কথা, যতিচিহ্ন ছাড়াই। সেটাই ভালোবাসা। তিনি আরও বলেছেন কোন অংকের মত যে বারবার মানুষকে ধাঁধায় ফেলে।

‘এই গণনাতীত আলোড়ন,ব্যাখা, আর না পাওয়া অজস্র উত্তরের জন্যই এই অনুভূতি অমর’।

ফারজানা :
পুরো উপন্ন্যাসে এই চরিত্রটি অল্প সময়ের জন্য এলেও ঋতুর মনের স্বাধীন সত্তা গঠনে এ চরিত্রটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারীবাদী না হলেও নারীর কর্মযজ্ঞে পুরুষ হবার প্রবল বাসনার প্রতিফলন এ চরিত্রের মধ্যে ঘটেছে। ফারজানার মধ্যে একটি ধারনাই কাজ করেছে যে পুরুষ হলেই পৃথিবীর সমস্ত কিছু একবাক্যে উপভোগ করা যায়।তার কন্ঠে যেন লেখক নারীহৃদয়ের প্রচ্ছন্ন চাওয়াকেই তুলে ধরেছেন। ‘আমার প্ল্যান হইলো আবার কোনদিন দুনিয়াতে জন্ম নিলে আমি আমেরিকার সাদা চামড়ার পুরুষ হইয়া জন্মাইতে চাই। সবচেয়ে পাওয়ারফুল আর সুবিধাবাদী এরা’।

এই ফারজানাই তার মুহূর্তে জড়িয়ে পড়ে অফিসের কলিগের সঙ্গে। তার বিয়ের খবরে ঋতু ধাক্কা খেলেও পরে ফারজানাই তাকে জানায় সে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।

মিনিম্যান :
মিনিম্যান জীবন সম্পর্কে বলে- ‘মানুষের বেঁচে থাকাই যেন সার্বক্ষণিক একটা পেশা। কে জানে হয়তো মানুষ নিঃশ্বাস নেওয়া এক বিহ্বল প্রাণ, যে শুধু আকস্মিক মৃত্যুর বিপরীতে জেগে থাকে। কেলেনের মুখেই আমরা মিনিম্যান সম্পর্কে জানতে পারি।সে মিনিমালিস্ট, এক জায়গায় বেশিদিন অবস্থান করেনা। আর মিসৌরির এক ক্যাম্পিংয়ে তার সাথে কেলেনের পরিচয় হয়।তবে খুব যাদুময়তায় এক অদৃশ্য বন্ধনে সে আবদ্ধ হয় ঋতুর সঙ্গে।আর ঋতু মুক্ত হয় আর প্রতিবন্ধকতা থেকে। নিজের সম্পর্কে মিনিম্যানকে বলতে শুনি- ‘এত কিছু ঘটে গেছে এক জীবনে যে আগের সব ভন্ডামি ছেড়ে সৎ ও ভদ্র মানুষের জামা গায়ে দেওয়ার পথে নেমেছি।
মানুষ সম্ভবত যত গভীর, নিজের কাছে সে ঠিক ততই রহস্যময়। নিজেকে আমার তাই একই সাথে দুর্বল ও দুর্বোধ্য মানুষ মনে হয়’। ঋতুকে সে আশ্বাস দেয় ঘুরে গিয়ে পাল্টা ফিরে আসার নামও জীবন।অথচ কি আশ্চর্য! এই মানুষটিই নিজেকে নিজেই সংঙ্গায়িত করতে ব্যর্থ হয়। ঋতুর ভালো বাসার উত্তরে সে জানায়- আমার ভায়ের পিছুটান আমার চলন্ত ক্ষত, ঘাতকের মতো আবার ফিরে ফিরে আসছে। এবং... এবং... আমি... দুঃখিত...

পাঠ-পরিক্রমা :
‘সাদা পালকের নির্জনতা’ উপন্ন্যাসের পরতে পরতে জমে আছে নিবিড় আত্মোপলব্ধি ও গভীর জীবনবোধ।অন্তরালে চিত্রিত হয়েছে মানব-মনের নিগূঢ় সত্য। একই সঙ্গে উঠে সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও সমকালীন জীবন যাপন।

ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে যেমন ডায়ানার মৃত্যু প্রসঙ্গ হাজার ১৮৬৫ সালের দাসপ্রথা, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও ৪ঠা জুলাইয়ের কথা। এগুলো প্রসঙ্গক্রমে এলেও কাহিনীর ভাবধারায় তা মিশে গেছে। স্বপ্নালু ভাষায় লেখক একাধিক স্থলে তুলে ধরেছেন সংগীত ও সভ্যতার নানাদিক। লেখক ঋতুর কন্ঠৈ বলিয়েছেন- ‘উন্নত দেশ, উন্নত জীবন আসলেই কি খুব উন্নত নাকি একটা ঘোর লাগা সময়ের সুররিয়ালিজম’? এ যেন সবার প্রতি ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। অসফল সম্পর্কের ট্রমা যা সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক তাই প্রতিটি চরিত্রকে ভোগ করতে হয়েছে। ঋতু, কেলেন,লিলিয়ানা কেউ এর বাইরে নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি নারীর অবঙ্গা ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। লেখককে নারীবাদী না বলেও সাম্যবাদী বললেই যথার্থ হবে। ফারজানার কন্ঠে যেন তিনিই বলছেন- ‘দেখা যাইবো আমি প্রেমের তপস্যা ভাইবা একজনরে ভালবাসতেছি ওইদিকে সে কম বয়সী একখান সুন্দরীরে বিয়া কইরা দিব্যি সোহাগ রাত করতেছে। লজিক্যালি তাইলে আমার কি ঠ্যাকা এই প্রেম বা প্রেমিকের ওয়েটিং লিস্টে খাড়ায় থাকার? ফাক ইট’!

লেখক আধুনিক চেতনা সম্বৃদ্ধ। কেননা একজায়গায় ঋতু বলছে- ‘একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ঢাকা নামের সবচেয়ে আধুনিক শহরের যানবাহনে পাঁচ শতাংশতেও কোনো নারী চালক পাওয়া যাবে না’। আর এ সত্য অস্বীকারের উপায় নেই।

উপন্ন্যাসে গ্লোবাল ইস্যু ও মানবীয় দিকগুলো নিয়েও কথা এসেছে।বিশ্বায়ন যে একটা হোক্স ও ইউটোপিয়ান সোসাইটির অস্তিত্ব থাকলে তার মধ্যে কোনো সৃজনশীলতা থাকবেনা। কেননা এর মূলমন্ত্র হবে লজিক, আবেগ নয়। পলের পার্টিতে সিনথিয়া বারনেটকে বলতে শুনি সব কিছু বাদ দিলেও খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বাদ দেয়া যাবে না। তাহলে মাসলোর হায়ারারকি নতুন রুপে সাজাতে হবে।

উপন্ন্যাসের বাঁকে বাঁকে ভালোবাসার আকুতি ও নির্জনতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

মিনিম্যানের সংস্পর্শে এসে ঋতু অনুভব করেছে নামহীন, পরিচয়হীন, অচেনা এক বাস্তব যা স্বপ্নের মতো আবছা ও প্রচ্ছন্ন। ঋতুর মনই তাকে জানান দেয় কোথাও একটা সুন্দর অঘটন ঘটে গেছে যার পরশে সে পরিবর্তিত হচ্ছে ঋতু বদলের মতোই। ফারজানা একবার ঋতুকে বলেছিল- ‘একজন কামুক পুরুষ ক্যান জানি খুব অসুন্দর; কিন্তু প্রেমিক পুরুষ  একই সাথে প্রেমিক-কামুক। আমার চোখে সুন্দর’। ঋতু তাই মিনিম্যানের চলে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে আর বলেছে- ‘মানুষ যখন জানে কেউ একজন তাকে ভালবাসে না তখন সে সবার আগে কী অনুভব করে? নিশ্চয়ই তাৎক্ষণিকভাবে শূন্য হয়ে যায়? আর মানুষ যখন বুঝতে পারে কেউ একজন অনুভব করার পরও থাকতে পারছে না তখন সে হয়ে ওঠে নীরব। হয়ে ওঠে একটা নিঃসঙ্গ সেতু,যার অনেক অনেক নীচে জল, যেখানে কোন ছায়া পড়ে না। কেউ আসেও না...’

অসংগতি :
উপন্ন্যাসটি বেশ সুখপাঠ্য হলেও কিছু কিছু বানানে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। কিছু বানানে ও দু একটি বাক্য গঠনে শব্দের অনুপস্থিতি বাক্যগঠনে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করে। যদিও একজন প্রকৃত পাঠক তা উদ্ধারে সচেতন হবেন ও ঘটনার রসাস্বদনে উন্মুখ হবেন।

সমাপ্তি :
উপন্ন্যাসে অধ্যায় বিভাজন কাহিনীর ও নামকরণের সাথেই সম্পৃক্ত। এছাড়া সম্পর্কের রদবদলের সাথে সাথে উপন্ন্যাসে ফুটে উঠেছে সমকালীন বাস্তবতা।একজন প্রবাসী ছাত্রীর জীবন আলেখ্য নয় বরং কাহিনীর গভীরে সম্বৃদ্ধ চেতনাবোধ ও মানবকথনের দিকটিই   আলোকপাত করা হয়েছে। উপন্ন্যাসের শুরুতে যে অনুরণন ও হাহাকার দৃশ্যমান হয় তা শেষে এক আশার বানী শোনায়।ঋতু জানে- ‘এটি কোন অলীক স্বপ্ন নয়। আর নিজেকে এভাবে আবিস্কার করার জন্য এবং সত্যটুকু উপলব্ধি করার জন্যই হয়তো ও অপেক্ষায় ছিল সমগ্র জীবন’। তাই উপন্ন্যাসের শুরুতে Jim Morrison এর কবিতার অনুরণন মিলিয়ে যেতে থাকে ঋতুর সমগ্ৰ অবয়বে, তার অস্তিত্বে।
‘The days are bright and filled with pain
Enclose me in your gentle rain
The time you ran was too insane
We'll meet again, we'll meet again...’
                                      -Jim Morrison

লেখক : মাহরীন ফেরদৌস
ধরণ : উপন্যাস
ভাষা : বাংলা
প্রচ্ছদ : আজিজি ফাওমি খান
প্রকাশনী : পেন্সিল পাবলিকেশনস
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২১
মূদ্রিত মূল্য : ৪৮০
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ২৪৭
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি