বেক্সিমকো-সামিটসহ ৫ শীর্ষ শিল্পগ্রুপের ব্যাংক হিসাব তলব
প্রকাশিত : ১৭:৫৩, ২২ আগস্ট ২০২৪
দেশের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) বেক্সিমকো, ওরিয়ন, সামিট, নাসা ও বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে এ চিঠি দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, কর ফাঁকি তদন্তে বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বা এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।
পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন, ২০০৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক কার্যক্রম নেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়কর ফাঁকির তথ্য অনুসন্ধান বা উদঘাটনে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এরই মধ্যে কাজ গুরু করেছে।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা ও নানাভাবে হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ।
হয়রানিমূলক এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
তারা বলেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। তাদের ওপর দমন-পীড়ন করা হলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কখনো ধরে রাখা যাবে না, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না।
বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে না। তাই সরকারের এখন জরুরি ভিত্তিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা উন্নত করা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেওয়া দরকার।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৫ বছরের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সব ব্যবসায়ী এক হয়ে কাজ করছেন, এ সময় দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে, এমন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হামলা ও মামলা করা হলে পুরো ব্যবসায়ী সমাজে অস্থিরতা তৈরি করবে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি স্থবির হবে। তদন্ত ছাড়া এ রকম মামলা ও হয়রানি দেশের কল্যাণে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না।
একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার অনেক ত্যাগের বিনিময়ে যে আন্দোলন তার সুফল থেকে বঞ্চিত হবে দেশের সাধারণ মানুষ।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। দেশের শিল্প-কারখানায় লাখ লাখ মানুষ চাকরি করে। যদি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা চালু রাখতে না পারেন, তাহলে অর্থনীতিতে সংকট বাড়বে। আমাদের আবেদন, সরকার এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের হয়রানি যেন না করে।’
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘মামলা দিতে হলে তার মেরিট থাকতে হবে। কোনো মেরিট নেই, গণহারে মামলা দিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের ধরতে গিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা এ ধরনের কাজ করেননি তাদের যেন হয়রানি না করা হয়।’
কেআই//
আরও পড়ুন