ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

বেজার ওএসএস সেন্টার হতে নতুন ১১টি অনলাইন পরিষেবা উদ্বোধন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০৮, ২২ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এর ঢাকা কার্যালয়ে স্থাপিত ওএসএস সেন্টার হতে "নতুন ১১টি অনলাইন পরিষেবা উদ্বোধন, জমি বরাদ্দে চুক্তি এবং বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি শোধনাগার স্থাপনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনায় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর" সংক্রান্ত বিষয়ে আজ দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস  ১১টি অনলাইন সার্ভিসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য ইতোপূর্বে ২১টি সেবা বেজার ওএসএস সেন্টার হতে অনলাইনে প্রদান করা হতো যা বর্তমানে ৩২ এ উন্নতি হলো। 

বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপন করার ক্ষেত্রে এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর হতে বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। এসকল অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল বিধায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হন। বেজা বিনিয়োগকারীদের এ সকল অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থান হতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল ধরনের সেবা প্রদান করা যাবে। 

সে উদ্দেশ্যে বেজা’র উদ্যোগী ভূমিকায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮ পাশ করা হয়। এ আইনের আওতায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) বিধিমালা, ২০১৮ জারি করা হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে যথাসময়ে সেবা প্রদানের বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। 

এ আইনের ফলে ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরির ১২৫ টি সেবা এক জায়গায় পাওয়া যাবে। ফলে কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর বিভিন্ন কার্যালয়ে যেতে হবে না। অনলাইনেই সকল সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে । বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা কত দিনের মধ্যে দিতে হবে, তা বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেজার ওএসএস সেন্টার হতে বর্তমানে ২১ টি সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে ( ভূমি বরাদ্দের আবেদন,  প্রজেক্ট ক্লিয়ারেন্স,  প্রজেক্ট রেজিস্ট্রেশন, ভিসা এসিসটেন্স,  ভিসা রিকোমেন্ডেশন, ওয়ার্ক পারমিট, ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন, এক্সপোর্ট পারমিট,  ইমপোর্ট পারমিট,  লোকাল সেলস পারমিট,  লোকাল পারচেজ পারমিট, স্যাম্পল ইমপোর্ট পারমিট, স্যাম্পল এক্সপোর্ট পারমিট, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ,ল্যান্ড ইউজ প্ল্যান,  কমার্সিয়াল অপারেশন, জেনারেটর ইমপোর্ট, বিল্ডিং অকুপেন্সি, নামের ছাড়পত্র, সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন ) । আজ হতে আরও ১১ টি সেবা (Application for EIA, ECC (Red,   ECC Renewal (Red),   ECC (Green),  ECC (Green),  Renewal, ECC (Orange A ),  Renewal ECC (Orange A ), ECC (Orange B ), Renewal ECC (Orange B ),  Approval of Repatriation of Technical Knowhow and Assistance Fee, Approval of Repatriation of  Royalty ) প্রদান করা হবে। 

বেজার ওএসএস সেন্টার হতে ইতোমধ্যে ৫৬টি প্রকল্পের অনুমোদন, ৬৬৯টি ভিসা সুপারিশ, ১৮১ ওয়ার্ক পারমিট, ১৪১১ রপ্তানী অনুমোদন, ৭২০২টি আমদানি অনুমোদন এবং ৪৩ টি ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস  বলেন,  ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এ কারণে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলার উন্নয়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছি। শুধু সেবার মান বাড়িয়ে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সূচকের অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। তিনি বলেন বেজার সাথে সাথে সরকারের সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে উত্তোরত্তর উন্নয়নে নিরলস কাজ করছে। 

বিডার চেয়ারম্যান বলেন, “বেজার  ওএসএস সেবাসমমূহ বিনয়োগ আকর্ষনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে যা বিনিয়োগের সার্বিক সূচক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে” 

ভূমি সচিব বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় বেজাকে শিল্প ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। আগামীতে শিল্প ব্যবহারের ভূমি প্রদানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর। 

পরিবেশ সচিব বলেন,  ১১টি সেবার মধ্যে ০৯টি সেবাই পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়ক। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিনিয়োগকারীগন এখন থেকে আরও দ্রুত পরিবেশ বিষয়ক সেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। তিনি শিল্পায়নের সাথে সাথে শিল্প কারখানার আশেপাশে উন্মুক্ত স্থানে সবুজায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার মতামত ব্যক্ত করেন। 

বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বিজিএমইএ ও বেজা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে একটি গার্মেন্টস পার্ক প্রতিষ্ঠায় যৌথভাবে কাজ করছে। আমি আশা করি বিজিএমইএসহ অন্যান্য বিনিয়োগকরীগন বেজার ওএসএস সেন্টার হতে সকল সেবা নির্ধারিত সময়ে নিয়ে দ্রুত ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।  

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বেজার ওএসএস  শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবিক অর্থেই বিনিয়োগকারীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করছে এবং আগামীতে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। তিনি আরও বলেন করোনাকালীন সময়েও বেজার ওএসএস সেন্টার হতে সকল প্রকার সেবা প্রদান অব্যাহত ছিলো যার কারণে নতুন নতুন বিনিয়োগ প্রস্তব এসেছে। তিনি আশা করেন, সংযোজিত নতুন সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। 
  
সভায়  সিঙ্গাপুর ভিত্তিক  প্রতিষ্ঠান  ইন্টার এশিয়া গ্রুপ প্রাইভটে লিমিটেড এর সাথে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে জমি বরাদ্দে চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি মূলত হোটেল -মোটেল, পর্যটন, লাইফ স্টাইল ও অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে জড়িত।  প্রস্তাবনা অনুযায়ি প্রতিষ্ঠানটি সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে  ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যাদুঘর, ওপেন এয়ার অ্যাম্ফিথিয়েটার, বিনোদন পার্ক, হোটেল / রিসোর্ট ইত্যাদি নির্মাণ করবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তাবিত বিনিয়োগের ফলে প্রায় ৬০০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি আশা প্রকাশ করছে ।

এছাড়া ডাটা সফট এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চারস লিমিটেড এর সাথে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ট্যুরিজম বিষয়ক অবকাঠামো উন্নয়নে জমি বরাদ্দে চুক্তি হয়। প্রস্তাবনায় জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি ৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে। 

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে  ৫০ একর জমি বরাদ্দে লিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পিজিসিবি ইতোমধ্যে একটি গ্রিড সাব-স্টেশন ও ২৩০ কেভিএ বিদুৎ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। 

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে  পানি শোধনাগার ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনে পরামর্শ সেবা প্রদানে Institute of Water Modelling এবং বেজার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালন, রক্ষনাবেক্ষণ ও বিলিং কার্যক্রমের জন্য  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বেজার মধ্যে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুর রহমান পাটোয়ারি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পবন চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারম্যান,বেজা । দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী, সরকারের ওএসএস সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগন সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি