ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বেনাপোল-খুলনা ও বেনাপোল-ঢাকা ট্রেন চোরাচালানীদের প্রধান রুট

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৩:৩৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

চলছে তীব্র গরম। আর এই গরমে প্রতিদিন শত শত শীতের কম্বল, বিভিন্ন চকলেট, প্রসাধনী দ্রব্যাদি সীমান্তের অবৈধ পথে চোরাকারবারিরা নিয়ে আসছে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা থেকে। পরে এসব পণ্য যশোর, খুলনা, নোয়াপাড়া, দৌলতপুর ও খুলনা থেকে আসা শতাধিক নারী পুরুষ মহিলা চোরাকারবারিরা বেনাপোল-খুলনা-মোংলাগামী কমিউটার ট্রেন ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ ও বেনাপোল-ঢাকাগামী ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ এ করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে।

প্রতিদিনের দৃশ্য এটা বেনাপোল রেলস্টেশনে। রেল পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, আনসার সদস্য ও থানা পুলিশের আদায়কারী দালালের সহযোগিতায় প্রতিদিন এ কারবার চলছে। আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের চোখের সামনে এ ব্যবসা চললেও তারা এ ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব ট্রেনে কোন তল্লাশি চালানো হয় না। যাত্রীদের সামনেই চোরাচালানীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা যায় এ সব বাহিনীর লোকদের। মাঝে মধ্যে বিজিবি সদস্যরা এসে ঘুরে ফিরে চলে যায়।

সড়ক পথে বেনাপোল চেকপোস্ট সীমান্ত পার হলে ঢাকা-বেনাপোল সড়কের আমড়াখালি নামক স্থানে বিজিবি চেকপোস্ট, বেনাপোল বন্দর থানা, নাভারণ হাইওয়ে ফাঁড়ি, শার্শা থানা, ঝিকরগাছা থানা অতিক্রম করা ঝুঁকিপুর্ণ। অথচ ট্রেনের চোরাই পণ্য পরিবহন অনেক সহজলভ্য ও খরচ কম। বেনাপোল থেকে যশোর, খুলনা আর কোথাও বাধা নেই, নেই কোথাও বিজিবি বা পুলিশ। তাই অধিকাংশ চোরাকারবারীরা বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া বেতনা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুইটিকে তাদের মালামাল পাচারের নিরাপদ বাহন হিসাবে ব্যবহার করছে। ট্রেনের মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত রেলওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হারে টাকা পেয়ে এসব চোরাকারবারী পণ্যকে বৈধ্যতা দিচ্ছে। আর নির্দিষ্ট থানা পার হতে চোরাকারবারীরা থানার দালালদের দিচ্ছে টোপলা প্রতি একটি অংকের টাকা। যখনি কোন চোরকারবারী এসব দালালদের টাকা দিতে অস্বীকার করেন তখনি দালাল ও চোরাকারবারীদের মাঝে তুলকালাম শুরু হয়। অকথ্য ভাষায় চলে চোরকারবারী মহিলাদের গালিগালাজ।এভাবেই চলছে বেনাপোল থেকে খুলনাগামী ও ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রী সেবা।

বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন বেনাপোল থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ও বিকেল ৫টায় দুইবার যাওয়া আসা করে থাকে। আর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর একটায় ছেড়ে যায় বেনাপোল থেকে। এসব ট্রেনে কম্বল এর সাথে মাদক, থ্রি-পিস, চকলেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী, ইমিটেশন গহনা, সিগারেট, মোবাইল, কাপড়, কিসমিস, নিম্নমানের চা পাতা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধসহ বড় বড় চালান নির্বিঘ্নে নিয়ে যাচ্ছে যশোর খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে। যার ফলে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এসব পণ্য আগে বৈধ পথে আমদানি হয়ে আসলেও এখন সবই আসছে চোরাই পথে। 

নতুন করে গজিয়ে উঠা বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকার বিভিন্ন দোকানসহ আশেপাশের গ্রামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। সকালের ট্রেনে শত শত মহিলা চোরাকারবারী চলে আসে বেনাপোল রেলস্টেশনে। সেখানে নেমে ইজিবাইকে করে চলে যায় চেকপোস্টসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে চোরাই মালামাল কিনে আবরো ইজিবাইক ভর্তি করে মাল নিয়ে আসে রেলস্টেশনে। 

বেনাপোল থেকে যশোর যাওয়াতকারী রেল যাত্রী আনারুল ইসলাম জানান, আমি প্রতিদিন ব্যবসার কাজে যশোর থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে থাকি। আসা যাওয়ার পথে যে ভাবে মহিলা চোরাচালানীরা ভারতীয় কম্বলসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে ওঠে তা কল্পনা করা যায় না। আগে এসব মালামাল আমদানি করে আনা হতো। সরকারও রাজস্ব পেতো। সরকার এসব মালামালের মূল্য ও ডিউটি বাড়িয়ে দেওয়ায় চোরাই পথে আসছে। এতে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হলে চোরকারবারীদের তৎপরতা কমবে বলে তিনি জানান। 

বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, আমরা যাত্রীদের ভালো সেবা দিতে কাজ করছি। চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য রেল পুলিশ রয়েছে। এটা তাদের কাজ।

এ ব্যাপারে বেনাপোল রেলওয়ে ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই মনিরুল ইসলাম জানান, রেলওয়ের যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষ, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফিটসহ রেলের সকল স্থাপনায় সংঘটিত অপরাধ বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ দেখভাল করে থাকে। ট্রেনে অভিযান চালানো হচ্ছে। চোরাচালানরোধে রেল পুলিশকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি