পর্ব-৬
বেশি লাশের ঠাঁই আজিমপুর গোরস্থানে
প্রকাশিত : ১৪:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৫:১৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
রাজধানীর দুই সিটিতে বর্তমানে ৮টি কবরস্থানে প্রতিদিন সরকারিভাবে ৯০ থেকে ১১০ জনের লাশ দাফন করা হচ্ছে। এ হিসেবে বছরে সরকারিভাবে প্রায় ৩৬ হাজার লাশ দাফন করা হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ওই কবরস্থানগুলোতে। ঢাকাতে সরকারিভাবে ৮টি কবরস্থানে মৃত ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থা থাকলেও সবচেয়ে বেশি লাশ দাফন হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থানে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৩৭ একর জায়গার উপর আজিমপুর পুরাতন এবং নতুন কবরস্থান নির্মিত। এ দুই কবরস্থানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ জনকে দাফন করা হচ্ছে। সে মতে বছরে প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ লাশ দাফন করা হচ্ছে। আজিমপুর নতুন কবরস্থানের অবস্থান ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে। নতুন কবরস্থানটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত। এখানে নতুন করে কারও কবর বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এখানে যার নামে কবর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো, তার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয় না।
পুরোনো কবরস্থানের পুরোটাই ৬২ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এটি ৩৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে কিছু সংখ্যক কবর স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া আছে। আর বাকিটা সাধারণ লোকদের জন্য। ৩৫ একরের মধ্যে ৫ হাজার ৪০০ কবর স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া আছে। এছাড়া নতুন অংশে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য ৩ হাজার ৩০০ বর্গফুট নির্ধারিত রাখা হয়েছে। এ করবস্থানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করেন।
এবার জেনে নিই অন্যান্য কবরস্থানে কি পরিমাণ লাশ দাফন হচ্ছে প্রতিদিন:
জুরাইন কবরস্থান: ঢাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম কবরস্থান জুরাইন। ঢাকার পশ্চিম জুরাইনে ১০ দশমিক ১ একর জায়গার উপর জুরাইন কবরস্থান অবস্থিত বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাধারণ কবরের আয়তন ৭ দশমিক ১ একর ও সংরক্ষিত কবরের আয়তন ৩ একর। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জনকে দাফন করা হচ্ছে। বর্তমানে সংরক্ষিত এ কবরস্থানে ১ একর জায়গা সংরক্ষিত কবরের জন্যে খালি রয়েছে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান: ঢাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ দশমিক ৫ একর জমির উপর অবস্থিত। এখানে সাধারণ কবরের পরিমাণ ৫ একর ও সংরক্ষিত কবরের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ একর। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত মোট ৮৬টি কবরের মধ্যে ৪২টি কবর দেয়া শেষ হয়েছে ও ৪৪টি কবরের জায়গা খালি আছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জনকে দাফন করা হচ্ছে এখানে। বছরে ৫ হাজার দাফন করা হয় এ কবরস্থানে।
উত্তরা কবরস্থান: উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে ১ দশমিক ১০ একর জমির উপর এ কবরস্থানটি অবস্থিত। এখানে স্থায়ী কবরের সংখ্যা ৮৪ ও অস্থায়ী কবরের সংখ্যা ৫৮০ মিলিয়ে মোট ৬৬৪ লোকের কবর দেওয়া ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। প্রতিদিনে ৪ থেকে ৫ জনের মৃতদেহ দাফন করা হচ্চে। সে হিসেবে বছরে প্রায় ১৫৫০ জন মৃতদেহ সৎকার করা হয় এখানে।
বনানী কবর স্থান: ৪ দশমিক ৫ একর জায়গা নিয়ে বনানী কবরস্থানের অবস্থান। এ কবরস্থানের দশমিক ৫ একর ছাড়া বাকি ৪ একর পুরোটাই সংরক্ষিত। সাধারণ এলাকায় প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫টি লাশ দাফন করা হয়।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর: ৬ একর জমিতে ২ হাজার ৫০০ লোকের কবর দেওয়ার ধারণ ক্ষমতা আছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি লাশ দাফন করা হচ্ছে এখানে।
খিলগাঁও কবরস্থান: খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ৫ দশমিক ৩৭ একর জমিতে নির্মিত এই কবরস্থানে অন্তত দুই হাজার ৭০০ লাশের দাফন করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন এখানে ৮ থেকে ১০ টি লাশ দাফন করা হয় এখানে।
রায়েরবাজার কবরস্থান: রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনে দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান নির্মাণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। রায়েরবাজার কবরস্থানে মোট জমির পরিমাণ ৯৬ দশমিক ২৩ একর। মূল কবরস্থান ৮১ দশমিক ৩০ একর। ৮৫ হাজার মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবে দৈনিক ৫ থেকে ৬ টি লাশ দাফন করা হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, রাজধানীতে ৮ টি কবরস্থান থাকলেও সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে আজিমপু কবরস্থানে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ লাশ এখানে দাফন করা হচ্ছে। সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পযর্ন্ত এখানে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কবর সংকটের কারণে প্রতিবছরই পুরানো কবরের ওপরে ১ ফুট মাটি ভরাট করে নতুন করে পুন:সংস্কারের কাজ করা হয়। সাধারণত দেড় থেকে দুই বছর পরপর এক কবরের ওপর আরেক লাশ দাফন করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো দরকার কবরস্থানের সংখ্যাও, এমনটাই বলছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি রায়ের বাজার কবরস্থানের মতো আরও বেশ কয়েকটি গোরস্থান স্থাপন করা হলে কবর সংকট অনেকটাই হ্রাস পাবে।
টিআর/ এমজে