বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট না ওঠায় মোদির সমালোচনা
প্রকাশিত : ১০:৫০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:১৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সদ্যসমাপ্ত মিয়ানমার সফরে নরেন্দ্র মোদি-আং সান সু চির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো আলোচনা না হওয়ায় মোদির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি রাখাইনে চরমপন্থী সহিংসতা তীব্র নিন্দা করলেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিন দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকালেই দিল্লিতে ফিরেছেন মোদি।
আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংগঠনগুলো মোদির নীরবতার জন্য সমালোচনা করে বলেন তার নীরবতা একটি ভুল বার্তা দিচ্ছে । ইয়াঙ্গুনের কালীমন্দিরে মিয়ানমারের প্রতি তার মুগ্ধতার কথা জানালেও টুইটার বা যৌথ সংবাদ সম্মেলন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। বরং সু চি-র পাশে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, "রাখাইন প্রদেশে জঙ্গী সহিংসতা যেভাবে সেনাবাহিনী ও নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে- তার সেই উদ্বেগের শরিক ভারতও। মিয়ানমারের একতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে, এমন যে কোনো কিছুর তীব্র বিরোধিতা করবে ভারত।"
দিন কয়েক আগে নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদিই প্রথম বড় মাপের বিশ্বনেতা, যার সঙ্গে আং সান সু চি-র মুখোমুখি বৈঠক হল। কিন্তু সেই সঙ্কট সমাধানে কোনো বার্তা না-আসায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং ভারতেও অনেকেই হতাশ।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা শশী থারুর রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও সিনিয়র বামপন্থী পার্লামেন্টারিয়ান মহম্মদ সেলিমও বলছেন "ভারত চিরকালই অত্যাচারিত ও দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর আজ ভারত যখন বিশ্বের একটা প্রধান শক্তি হতে চাইছে, বা একটা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও যখন আমাদের ঘরের পাশে এত বড় একটা মানবিক সঙ্কট চলছে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা মানুষ দেশছাড়া হচ্ছেন তখন সেই বিষয়টা অবশ্যই তোলা উচিত ছিল।"
ভারতে বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মানুষ যখন দেশছাড়া হচ্ছেন তখন সেই বিষয়টা ভারতের অবশ্যই তোলা উচিত ছিল।
মহম্মদ সেলিম মনে করেন সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকাই প্রমাণ করে দিয়েছে কোন দেশ কতটা মানবিক আর গণতান্ত্রিক। শরণার্থীদের প্রতি তাদের আচরণে আর সেই মানবিকতার পরীক্ষাতে নরেন্দ্র মোদির সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যে ধোঁয়াশা ও পাল্টাপাল্টি প্রচারণা চলছে, মোদি ও সু চি-র বৈঠক তা মেটাতে সাহায্য করতে পারত। অথচ সেটা একেবারেই হয়নি বলে মনে করছেন মার্কিন মানবাধিকার সংস্থার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।
গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলছিলেন, "রোহিঙ্গারা না রাখাইনরা কারা দোষী, তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করছে রোহিঙ্গারা না কি নিজেরাই নিজেদের গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানাচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বাচ্চাদের গলা কেটে ফেলে দিচ্ছে।"
সূত্র:বিবিসি
এফ/টিকে
আরও পড়ুন