ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদ ও আমাদের করণীয়

প্রকাশিত : ১৭:৫৯, ১৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৮:১১, ১৮ মে ২০১৯

জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। খবরের কাগজ খুললেই কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে মাঝে মাঝে দৃষ্টিগোচর হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশলে জঙ্গি হামলার মত নৃশংস ঘটনা; এবং সেই হামলার দায়ও কোন না কোন জঙ্গি সংগঠন স্বীকার করছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গর্বের সাথে। জঙ্গিদের দৃষ্টিতে এমন সব হামলা করে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের রক্তে হলি খেলা মহা পুণ্যের কাজ। অর্থাৎ শান্তির ধর্ম ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সত্যিকারের ইসলামের মূল্যবোধ থেকে নিজেদের শান্তির পথচ্যুত করে জঙ্গিরা এমন জিহাদের কথা বলে মানুষ হত্যা করছে যেই জিহাদের কথা আমাদের ইসলাম ধর্মে বলা হয়নি। শান্তির ধর্ম ইসলামে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে একত্রে যার যার ধর্ম পালন করতে বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য। নৈতিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে শালীন এবং পরিমার্জিত জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করাই ইসলাম ধর্মের মূল উপজীব্য।

ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যারা সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে তারা মুসলমানের লেবাজে আদৌ সন্ত্রাসী বাহিনী ছাড়া কিছুই নয়। জঙ্গিবাদ এমন একটি বিষয় যারা প্রতিনিয়ত আক্রমণের ভঙ্গি পরিবর্তন করে সারা পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত।

জঙ্গিবাদের মতো এমন একটি বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধমূলক কর্মকান্ড গুলোই যথেষ্ট নয় বলে আমি মনেকরি। সাম্প্রতিক ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা এবং কল্যানপুরে হামলার পূর্ব প্রস্তুতির সময়ে জঙ্গি প্রতিহত করা এই সকল ঘটনা গুলোতে একটু সচেতন দৃষ্টি আলোকপাত করলেই খেয়াল করবেন আসলে কারা জঙ্গিবাদ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনে নাম লিখাচ্ছে।

বড় বড় ডিগ্রী নেওয়াই শিক্ষার মূল কথা নয়। আজ যে সকল তরুন জঙ্গিবাদের কালো থাবায় পড়ে পথচ্যুত হয়েছে তারা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই হোক না কেন, যে ডিগ্রীধারী হোক না কেন তাদের ডিগ্রী তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেনি অথবা তারা তাদের পরিবার থেকে মানবতার সঠিক শিক্ষা নিয়ে মানুষিক পরিপক্কতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ভুলে গেলে হবে না যে যতো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আপনি পড়ুন না কেন শিক্ষা যদি আপনার আচরণকে সমাজ কাংখিত ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত করতে না পারে তাহলে আপনি ডিগ্রী অর্জন করলেও প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেননি। যেমন- পুস্তকে পড়ছেন মানুষ হত্যা মহা পাপ; আর সেই মানুষই নির্বিচারে হত্যা করছেন। এখানে পুস্তক থেকে কিছু তথ্য আপনি ধারণ করেছেন হয়তো কিন্তু কিছু শিখে আচরণের পরিবর্তন করতে পারেননি। সূতরাং এই শিক্ষা আপনার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়নি।

আর ঠিক এই সুযোগই নিচ্ছে জঙ্গি সংগঠন গুলো। জঙ্গিরা ইসলামের দোহাই দিয়ে এমন সব তরুণদের তাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত যাদের ধর্মীয়, সামাজিক, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ক জ্ঞান খুবই সীমিত। অর্থাৎ তারা পরিবার থেকে প্রকৃত মানুষ হয়ে মানবতার জয়গান গেয়ে সবাই একত্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রয়োজন তা সঠিক ভাবে অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই কারনেই এসব তরুনদের জঙ্গিরা খুব সহজেই ব্রেইন ওয়াস করে বিপথগামী করে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, পরিবার থেকে সামাজিক জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ তরুনরা যখন এমন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিয়েছে যেখানে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক চর্চা করার সুযোগ নেই বললেই চলে সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এনং জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক।

আমার ভাবতে অবাক লাগে, যে দেশের মানুষের বুকের তাজা রক্ত এবং মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ আমরা পেয়েছি; সে দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে না ???

আমাদের দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনা অবাদে চর্চার সুযোগ নেই সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামক স্বাধীনতা বিরোধী ঘাটি পাকিস্তানে থাকতে পারে কিন্তু আমাদের সোনার বাংলায় নয়। অপর দিকে আপনার সন্তানের দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আপনার সন্তান আপনার অগোচরে জঙ্গিবাদে নাম লিখিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করবে আর আপনি শুধু দুঃখ প্রকাশ করবেন এমনটা কখনোই কাম্য নয়। বাড়িভাড়া দেওয়ার সময় কাকে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন সে বিষয়ে তথ্য নেওয়া আপনারই নাগরিক দায়িত্ব। আপনার বাসায় ভাড়া থেকে জঙ্গি কর্মকান্ড পরিচালনা করলে তার দায় আপনি কখনোই এড়াতে পারেন না। আপনি যদি ধর্মের সঠিক শিক্ষা দিয়ে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা আপনার সন্তানকে দিতে ব্যর্থ হন তাহলে এ দায় অবশ্যই আপনার।

মনে রাখবেন, যে বাঙালি জাতি ৫২ তে রক্ত দিয়েছিল ভাষার জন্য, যে বাঙালি জাতি একাত্তরে প্রাণ দিয়েছিল স্বাধীন ভূখন্ডের জন্য; সেই বাঙালি জাতি কখনোই জঙ্গিবাদের কাছে মাথা নত করবে না। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার জন্য; আবার প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা`র ডাকে যুদ্ধ করবে জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য।বাঙালি জাতি যেমনি কারো প্রতি অন্যায় করেনি এ কথা যেমন সত্য তেমনি ইতিহাসের এক ধ্রুব সত্য যে বাঙালি জাতি কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে তার কাছে মাথানত করেনি।

(লেখক পরিচিতিঃ সংস্কৃতি সম্পাদক, ডাকসু,
সাহিত্য সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
সাধারণ সম্পাদক, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।)

আআ//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি