ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘ব্যাংকের টাকা শেয়ারবাজারে আনতে প্রজ্ঞাপন স্থগিত ঠিক হবে না’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

Ekushey Television Ltd.

স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলের কাতারে বাংলাদেশের প্রবেশ, বিশাল এ অর্জনের পেছনে চ্যালেঞ্জ ও তা টপকানোর উপায়, পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা, জনশক্তি রফতানি, জনসংখ্যার বোনাসকাল, কর্মসংস্থানসহ ব্যাংকের সুদের হার, ঋণ, ঝুঁকিসহ অর্থনীতির আরো সব অনুসঙ্গ নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের

তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্ণর হিসাবে দায়িত্ব নেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের এ জায়গাটায় এসেছি সেটি ধরে রাখা। আমাদের এ অর্জনে ৪৭ বছর লেগেছে। তারমধ্যে গণতান্ত্রিক সরকার আছে ১৯৯০ থেকে। সে হিসেবে প্রায় ২৮ বছর লেগেছে। কিন্তু এতো সময় লাগার কথা ছিল না। তাই এখন আমাদের উন্নয়নের দিকে দ্রুত এগোতে হবে। উন্নয়নের গতি আরো বাড়াতে হবে। এটাই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বড় চ্যালেঞ্জ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব আজ প্রকাশিত হলো-

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের এক্সপোজার  বা বিনিয়োগসীমা নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, সেখানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভিত্তিতে গণনা করার নিয়ম বেধে দেয়া হয়। যার কারণে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহের ক্ষেত্রে অধিকতর সংকোচনমূলক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করলেই শেয়ারবাজার চলমান সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন। আপনিও কি তাই মনে করেন?

সালেহ উদ্দিন: ব্রোকাররা এটা বলবেই যে ব্যাংকের টাকা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসো। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ব্যাংকের টাকা কিন্তু ব্যাংকের না। ওটা আমানতকারীদের টাকা। আমানতকারীরা চান না যে তাদের টাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো জায়গায় বিনিয়োগ হোক। কারণ ব্যাংক লোকসান করলে বলবে যে আমরা আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারছি না। কারণ ওইটার প্রত্যক্ষ কোনো লাভ আমানতকারীরা পায় না।

শেয়ারমার্কেট হলো একটা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। রিটার্ন বেশি আবার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শেয়ার মার্কেটে ব্যাংকগুলোর টাকাটা আসতে রিল্যাক্স করাও ঠিক হবে না। বরং পুজিঁবাজার সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে তাদের যে ইনসাইডেড ট্রেডিং, তাদের যে কারসাজি এগুলো বন্ধ করতে হবে। তবে সাধারণের আস্থা বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি দিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকারদের নেওয়া ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে ব্যাংকই শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী না। আরো অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে।

 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতে সুদের ব্যবধান বেশি এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বর্তমানে তা আরো বাড়ছে, এর কারণ আসলে কী?     

সালেহ উদ্দিন: এগ্রেসিভ ব্যাংক করার কারণে এমনটি হয়। ব্যাংক ঋণে সুদের ব্যবধান ৫ এর উপরে কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ব্যবধান নেই। জাপানে জিরো ইন্টারেস্ট রেট। এগুলো কমাতে নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের বোঝা- এ খাতটির জন্য যেন একটি অভিশাপ। যা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। আসলে এ থেকে বেরিয়ে আসতে করণীয় কি হতে পারে? 

সালেহ উদ্দিন: খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মামলার আশ্রয় নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক আদালতে জমে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা ঋণ নিয়ে না দিয়ে পার পাওয়ার প্রবণতায় আছে তাদেরকে প্রবণতা থেকে বের করে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা করা চলবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে এতো শিক্ষিত যোগ্য লোক, অথচ পোশাক শিল্পসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিদেশি এক্সপার্টদের বেশি বেতনে আনা হচ্ছে। কেন আমরা সে জায়গাটা নিতে পারছি না?

সালেহ উদ্দিন: আমাদের কোন ক্ষেত্রে কি পরিমান লোকবল লাগবে সে তথ্য নেই। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের অভাব। আর সে জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে বিদেশিরা। বিদেশিরা যাতে এ জায়গাগুলো যাতে না যাতে পারে তার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা  নীতির পরিবর্তন আনতে হবে। নিজ দেশের দক্ষ লোক খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের বিদেশিদের তুলনায় গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। তবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেখানে প্রচুর লোকের দরকার সেই জায়গাগুলোর জন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখেরও বেশি। বিবিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক বছরে আরও ৮০ হাজার বেকার বেড়েছে। দেশের এই বিশাল জনশক্তিকে আমরা কেন কাজে লাগাতে পারছি না? কেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরও চাকরি মিলছে না?

সালেহ উদ্দিন: নি:সন্দেহে শিক্ষায় ত্রুটি আছে। আজ যারা এসএসসি পাশ করে তাদের সঙ্গে আগের দিনের ম্যাট্রিক পাশ করা ব্যাক্তির তুলনা করে দেখেন তো। শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে এখন অনেক পিছিয়ে পড়েছি। তাছাড়া শিক্ষাকে জীবনমুখী করতে হবে। বাজারে চাহিদা আছে এমন শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার্থী যদি বাস্তব জীবনের কিছু দিক শিক্ষা জীবনেই বুঝে নিতে পারে। তবে শিক্ষা শেষে তাকে বেকার থাকতে হবে না।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। বিষয়টিকে আপনিও কতটা যৌক্তিক মনে করেন? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তো চাকরিতে প্রবেশের বয়সের এতোটা কড়াকড়ি নেই।

সালেহ উদ্দিন: আমি মনে করি চাকরির বয়সের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা উচিত। এখন দেশে বিশাল জনসংখ্যা। সেশনজট আছে। আবার পাশ করার পর দ্রুত সার্টিফিকেট পায় না। আবার নিয়োগের ক্ষেত্রেও দ্রুত নিয়োগপত্র পায় না। সে ক্ষেত্রে বয়সের কড়াকড়ি একটু কমানো উচিত বলে মনে করি। সেটা ৩৩ বছর করা যেতে পারে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সালেহ উদ্দিন : একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা।

আরকে//

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি