ব্রাজিলকে নেইমার নির্ভরতা ছাড়তে হবে: জিকো
প্রকাশিত : ১১:৪৭, ২৪ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৪৬, ২৪ জুন ২০১৮
কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচে জয় ব্রাজিলিয়ানদের রোমাঞ্চিত করেছেন নি:সন্দেহে। ওই ম্যাচে গোল করেছেন সেনসেশন নেইমার ও কুতিনহো। তবে ওই ম্যাচে কুতিনহোকে নায়ক মানছেন ব্রাজিল ফুটবলের কিংবদন্তী জিকো। তিনি মনে করেন, ব্রাজিলকে বিশ্ব ফুটবলে কর্তৃত্ব করতে হলে অবশ্যই নেইমার নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজারে লেখা এক কলামে এমনটি লিখেছেন জিকো। কলামটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
আমার প্রথম কলামেই লিখেছিলাম, ব্রাজিলকে অতিরিক্ত নেইমার-নির্ভরতা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা যে একেবারে বাজে কথা নয়, শুক্রবারের ম্যাচটাতেও বোঝা গিয়েছে। আমার মতে, কোস্টারিকা ম্যাচে ব্রাজিলের সেরা ফুটবলারের নাম নেইমার নয়, ফিলিপে কুতিনহো। যদি এ রকম খেলে যেতে পারে কুতিনহো, তাহলে কিন্তু প্রতিপক্ষ যারাই থাকুক না কেন, ব্রাজিলকে ঠেকানো কঠিন হবে।
নেইমার আমাদের প্রধান অস্ত্র হোক। কিন্তু ওকে ঘিরে যে নাটকীয়তা আর বিতর্ক চলছে, সেটা কমাতে পারলে দলের মঙ্গল হবে। কোস্টারিকার সেরা অস্ত্র ছিল ওদের গোলকিপার কেলর নাভাস। দুর্দান্ত কিছু ‘সেভ’ করেছে ও। নেইমারের প্রচেষ্টাকে একাধিকবার রুখে দিয়েছে। দুই অর্ধে অন্তত দু’বার একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে নেইমার পেয়ে গিয়েছিল গোলকিপারকে।
দু’বারই কিন্তু নাভাস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। নেইমার একটা দুর্দান্ত সোয়ার্ভিং ভলি নিয়েছিল। অল্পের জন্য যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রেও নাভাসের উপস্থিত বুদ্ধিকে কৃতিত্ব দিতে হবে। গোলের মুখটা ছোট করে দিয়েছিল ও। যে কারণে দুরূহ কোণ বেছে নিতে বাধ্য হয় নেইমার।
সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাধারণ মানের পারফরম্যান্সের পরে এই ম্যাচটাতেই নেইমারকে ফিরে আসতে হতো। সেন্ট্রাল পজিশনে শুরু করে পুরো দলটাকে সুন্দরভাবে খেলাচ্ছিল নেইমার। শুরুতে বেশ ক্ষিপ্র দেখাচ্ছিল ওকে। কিন্তু যত সময় যেতে থাকল, ততই গোল না পেয়ে যেন হতাশা গ্রাস করতে শুরু করল ওকে। কুতিনহোর একটা দারুণ পাস থেকে গোল করার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হল।
কোস্টারিকা এর পরেই বুদ্ধি করে খেলাটাকে মন্থর করে দিল। ওরা জানত, ব্রাজিলকে তাদের গতিতে খেলতে দিলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। এই বিশ্বকাপে অনেক ছোট দলই শক্তিশালী দলগুলির বিরুদ্ধে এই রণনীতি নিচ্ছে। কোস্টারিকাও একই রক্ষণাত্মক রণকৌশল নিয়ে ব্রাজিলকে অনেকক্ষণ আটকে রাখতে সফল হয়েছিল। বিশেষ করে নেমারের প্রভাব কমিয়ে আনার ব্যাপারে সফল হচ্ছিল তারা। প্রথম ম্যাচে সুইৎজারল্যান্ডের মতো কোস্টা রিকাও নেমারের উপর শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করতে ছাড়েনি।
আর এখানেই কুতিনহো উঠে এল ব্রাজিলের নতুন রক্ষাকর্তা হিসেবে। গোলের অভাবে ওর দলকে যখন অধৈর্য দেখাতে শুরু করেছে, তখন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কুটিনহো চাপটা রেখে গেল কোস্টা রিকার উপর। নেমারের মতো চাকচিক্য হয়তো নেই ওর। তাই প্রচারের আলো সে ভাবে না-ও পড়তে পারে ছেলেটার উপর। কিন্তু প্রকৃত ফুটবল বোদ্ধারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, এই বিশ্বকাপে হিরে আবিষ্কার করেছে ব্রাজিল। আর সেই হিরের নাম ফিলিপে কুতিনহো। এত অসাধারণ বল ‘ডিস্ট্রিবিউশন’ আমি অনেক দিন কোনও ব্রাজিলীয় ফুটবলারের মধ্যে দেখিনি। কোস্টা রিকা ম্যাচে উইঙ্গার আর স্ট্রাইকারদের একের পর এক অবিশ্বাস্য বল সরবরাহ করে গেল কুটিনহো।
আরও একজনকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে খুব ভাল খেলতে থাকা গ্যাব্রিয়েল জেসুস। শুক্রবার ভাল খেলতে পারেনি, ওর একটা বল পোস্টে লেগে ফিরেও এল। আর একবার অতিরিক্ত উত্তেজনায় দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করল। জেসুসকে বুঝতে হবে, বিশ্বকাপ আর ইপিএল এক নয়। ওকে উত্তেজনা প্রশমিত করে আরও মনঃসংযোগ করার প্রক্রিয়া শিখতে হবে। রণনীতির দিক থেকে একটা কথা বলতে চাই। আমার মনে হয়েছে, বল নিজেদের দখলে রাখতে গিয়ে ব্রাজিল বড্ড বেশি টাচ খেলছে।
/ এআর /