ব্রিটেনে যেসব কারণে করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যু হার বেশি
প্রকাশিত : ১১:০২, ৪ জুন ২০২০ | আপডেট: ১১:২৩, ৪ জুন ২০২০
ইংল্যাণ্ডের জনস্বাস্থ্য দফতর পিএইচই’র এক জরিপে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জরিপে লা হয়, বিশেষত বয়স্ক মানুষ ও পুরুষদের করোনাভাইরাসে মারা যাবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এরপর বলা হয় বয়স ও লিঙ্গ বাদ দিলে কোভিড-১৯তে মারা যাবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা। খবর বিবিসি’র
পিএইচই’র জরিপে বলা হয়, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কেসগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়– বয়স, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিতের প্রভাব বাদ দিলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের তুলনায় দ্বিগুণ।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ব্রিটেনের কৃষ্ণাঙ্গ, চীনা, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও অন্যান্য এশীয়দের মতো জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকদের করোনাভাইরাসে মারা যাবার ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। এছাড়া কিছু পেশা যেমন- নিরাপত্তা রক্ষী, ট্যাক্সি বা বাস চালক, স্বাস্থ্য কর্মী, সমাজকর্মী তাদেরও করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বেশি। তাদের মতে, এই দুটি স্বাস্থ্য সমস্যাই তাদের কোভিড সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হবার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয়দের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে আগে থেকেই ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বেশি ছিল।
ক্যাম্ব্রিজের এ্যাংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেহে ভিটামিন ডি-র স্বল্পতার সঙ্গে কোভিড-১৯তে মারা যাবার ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া গেছে ২০টি ইউরোপিয়ান দেশে। তবে যুক্তরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয়দের মধ্যে ভিটামিন-ডির স্বল্পতা খুবই সাধারণ ঘটনা।
কিছুদিন আগে ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর ওএনএস এক জরিপে প্রায় একই রকম ফলাফলের কথা বলেছিল। সেই জরিপে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ১ দশমিক ৯ গুণ। তারপরই আছেন বাংলাদেশিরা। তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি।
ম্যানচেস্টারের চিকিৎসক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এনাম হক। তিনি বিবিসিকে বলেন, “কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা যায়, এজন্য তাদের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।” তবে ডা. হক এটাও বলেন যে, এসব উপাত্ত দিয়ে পুরো ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে, কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয়রা ব্রিটেনে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে থাকে সেটাই তাদের গুরুতর কোভিড সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেকজন চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ জাকারিয়া বলেছেন, “এটা স্পষ্ট যে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির একটা বড় অংশ যে ধরনের কম মজুরির কাজ করেন, তাতে তাদের বাস-ট্রেনের মতো গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়, অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। যার ফলে তাদের কোভিড ১৯তে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি সমাজের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল অংশের চাইতে বেশি।”
ডা. জাকারিয়া আরও বলেন, আরেকটি কারণ হলো বাংলাদেশিরা অনেকেই বড় পরিবার বা যৌথ পরিবারের সাথে থাকেন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি এক্ষেত্রেও বেশি। অনেকে দারিদ্র্যের কারণেও উপযুক্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে পারেন না, এটাও একটা কারণ।
ব্রিটেনে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চালানো এক জরিপের পর ইংলিশ হাউজিং সার্ভে বলছে, এক বাড়িতে গাদাগাদি করে অধিক সংখ্যক লোক থাকার হার বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে সবচেয়ে বেশি। দেখা যায়, বাংলাদেশিদের ৩০ শতাংশ বাড়িতেই অতিরিক্ত সংখ্যক লোক থাকেন। পাকিস্তানি বাড়িগুলোতে এ হার ১৬ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্রিটেনের শ্বেতাঙ্গদের বাড়িতে অতিরিক্ত লোক গাদাগাদি করে বাস করছে এমন হার মাত্র ২ শতাংশ।
সরকারি জরিপে বলা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে বহু কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ানই যে ধরনের কাজ করেন তাও কোভিড-১৯তে আক্রান্ত হবার অতিরিক্ত ঝুঁকির একটা বড় কারণ। তারা সুপার মার্কেটের চাকরি, ট্যাক্সি চালানো, ডেলিভারি ড্রাইভার এ ধরনের কাজ শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অনেক বেশি করেন।
এএইচ/
আরও পড়ুন