ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বড় অংকের কর ফাঁকি দিচ্ছে বিএটি

প্রকাশিত : ২১:৩৮, ১ মে ২০১৯

প্রতারণা করে মুনাফা স্থানান্তরসহ একের পর এক ঘুষ-দুর্নীতির তথ্যে ফেঁসে যাচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানটি ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া চাতুর্যপূর্ণ লেনদেনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে মুনাফা স্থানান্তর করেছে।
সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ নেটওয়ার্ক “ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক” এর বরাতে ব্রিটেনের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক বলছে, শুধুমাত্র বিদেশে অবস্থিত কোম্পানিগুলো থেকেই ৯৪ কোটি ১০ লাখ ডলার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিএটি হোল্ডিংসে সরানো হয়েছে। যা তাদের ওই বছরের কর-পূর্ব মুনাফার ১২ শতাংশ। এর ফলে কোম্পানিটির শুল্কবিল কমেছে, যেখানে আংশিক ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাজ্যের ১৯ শতাংশ করপোরেশন কর হার।

সংস্থাটির আনুমানিক হিসাবে বলা হচ্ছে, বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে চলতি বছর থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ কোটি ডলারের কর এড়াতে পারে বিশ্বের বৃহত্তম তামাক কোম্পানিটি। যেসব উন্নয়নশীল দেশ কর বঞ্চিত হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, গায়ানা, ব্রাজিল ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে উল্টো ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে দিয়ে এখন তদবির করাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের সিরিয়ার ফ্রড অফিসও প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে।

২০১৫ সালের শেষদিকে বিবিসি প্যানোরামা নামক একটি অনুষ্ঠানে বিএটির সাবেক কর্মকর্তা পল হপকিন্স দুর্নীতির কিছু তথ্য ফাঁস করেন। তিনি ১৩ বছর ধরে বিএটির কেনিয়া অফিসে কাজ করেছেন। অনুষ্ঠানে হপকিন্স বলেন, বিএটি ঘুষ ও দুর্নীতিকে ব্যবসা চালানোর ব্যয় হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। তার কাজ ছিল ব্যবসায়িক প্রতিযোগীরা যাতে বড় হয়ে উঠতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। এ তামাক কোম্পানিটি রাজনীতিবিদ, আমলাদের ঘুষ দিয়ে যাচ্ছে এবং হপকিন্স নিজেই তার ব্যবস্থা করে দিতেন। আর এটাই তার চাকরি ছিল। এরপর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সরকারগুলোকে তামাক কোম্পানিগুলোর মুনাফার হিসাব প্রকাশে বাধ্য করা উচিত, যাতে যেসব সম্প্রদায়ের কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা হচ্ছে, সেখানে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিএটি মুনাফা সরিয়ে যুক্তরাজ্যের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসে, যে সাবসিডিয়ারি বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তুলনামূলক অল্প করপোরেশন কর দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশেও অপর্কম চালিয়ে আসছে বিএটি। ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে রাজস্ব পরিশোধ না করে ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। ওই টাকা যাতে না দিতে হয়, সেজন্য হাইকোর্টে মামলা করেও হেরে যায় বিএটি। এ অবস্থায় কোম্পানিটির পক্ষে সমঝোতার চেষ্টায় নামেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। তিনি সম্প্রতি সরকারকে চিঠি দিয়ে বিএটিবিকে (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ) যাতে ওই টাকা দিতে না হয়, সে বিষয়ে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর আগে অ্যালিসন ব্লেককে সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে চিঠি দেন বিএটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেহজাদ মুনিম। এবারই প্রথম নয়, ২০১৫ সালে ব্লেক পাকিস্তানের হাইকমিশনার থাকাকালীন টোব্যাকো কোম্পানির পক্ষ নিয়ে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে কোনো ব্রিটিশ কূটনীতিক তামাক কোম্পানির হয়ে প্রচারণা বা তদবির করতে পারেন না।

অ্যালিসন ব্লেককে লেখা চিঠিতে বিএটিবির এমডি বলেন, এনবিআর যে ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা দাবি করছে, তা কোম্পানিটির এক বছরের কর-পরবর্তী মুনাফার তিনগুণেরও বেশি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সব কর্মকর্তার সঙ্গেই যোগাযোগ হয়েছে। আলোচনাকালে তারা সবাই স্বীকার করেছেন যে এটি একটি হয়রানিমূলক ঘটনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বিএটিবি বিচার পেতে ব্যর্থ হয়।

বিএটির এক মুখপাত্র বলেন, প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় যেভাবে কর ফাঁকির কথা বলা হয়েছে, তারা তাতে একমত নয়। যেসব দেশে বিএটি ব্যবসা পরিচালনা করে, সেসব দেশের কর আইন অনুসরণ করেই কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সরকারকে উল্লেখযোগ্য কর প্রদানকারী কোম্পানি হচ্ছে বিএটি।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকায় কংগ্রেসম্যানদের চাপের মুখে রয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন লয়েড ডগেট ও সিনেটর রিচার্ড ব্ল–মেনথান। তারা বলছেন, বিএটি ফরেন করাপ্ট প্রাকটিসেস অ্যাক্ট এবং এন্টি ব্রাইবারি আইনের লঙ্ঘন করছে।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি