বড় জেঠুকে যেমন দেখেছি
প্রকাশিত : ২২:৫২, ২৭ জুন ২০২৪ | আপডেট: ২২:৫৫, ২৭ জুন ২০২৪
বড় জেঠু স্বর্গীয় অমৃত লাল দে'র জন্ম শতবর্ষে দাদু ও ঠাকুমাকে শতকোটি প্রণাম পঞ্চপান্ডব-কে উপহার দেবার জন্য।
প্রথমে মেজদা ভানু লাল দে এবং কাকু বিজয় কৃষ্ণ দে'র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যথাক্রমে এই লেখার জন্য প্রেরণা এবং গীতা পড়ার উৎসাহ দেবার জন্য।
গীতায় আমরা সবাই পান্ডবদের সম্পর্কে শুনেছি, কিন্তু আমি এইজীবনে পান্ডবদের সাহচর্য পেয়েছি এবং পাচ্ছি।
এখানে বড় পান্ডব স্বর্গীয় অমৃত লাল দে একাধারে যুধিষ্ঠির এবং কৃষ্ণ, যে বাকিদের জন্য পথদ্রষ্টা।
আজ লিখতে বসে মাথায় অনেক স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার ভিড়, তবুও স্বল্প পরিসরে কিছু লিখি।
প্রথমেই তাঁর অসীম সাহস এবং দুরদৃষ্টির বাহবা দিতে হয়, যার প্রমান আমি নিজে। বড় জেঠুর উদ্যোগেই তার চতুর্থ ভাই স্বর্গীয় মনিন্দ্র চন্দ্র দে (বাবা) কে স্কুল গন্ডির পরই কলকাতায় (বর্তমানে ভারত) পাঠায়, জীবন যুদ্ধে বিস্তার লাভের জন্য। একবার ভাবুন পোস্ট কার্ডের যুগে পরিবার পরিজন ছেড়ে নতুন জায়গা, ভাষা, পরিবেশ সবকিছুই আলাদা এবং বরিশাল থেকে অনেক দূরে কষ্ট করে শুধুমাত্র বড়দার (বড় জেঠু) নির্দেশ এবং আদেশ মান্যতা দিয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আজ আমি বাবার জন্য গর্ববোধ করি, অমৃত পরিবারের ভারত দর্শন ও পরিচিত করার কান্ডারী হবার জন্য।
আমার জন্ম কলকাতায় হওয়া সত্ত্বেও আমি বারংবার আমার পিতৃভূমি বাংলাদেশ তথা বরিশালে শুধুমাত্র সেই মাটির সুগন্ধ নেওয়ার জন্য আসি, যেখানে আমার বাবা, কাকু ও জেঠুদের অদম্য লড়াইয়ের কাহিনী দাড়িয়ে আছে। বরিশালের কোন গলি নেই যেখানে আমি সাইকেল চালাইনি, মাঠ নেই যেখানে আমি খেলিনি। আজকের "অমৃত ভবন" আমার কাছে একটি অমূল্য সংগ্রহশালা। যেখান থেকে আমার জীবন চালিকা শক্তি পাই।
ছবিতে- দানবীর অমৃত লাল দে ও তার চার ভাই।
বড় জেঠুর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দমদমে (কলকাতা) আমার ছোট প্রতিষ্ঠানের নামকরণ এবং অদ্ভূত ব্যাপার বড় জেঠু দমদমে যে বাড়িতে মারা যাবার পর শায়িত ছিলেন, ঠিক সেখানেই আমার প্রতিষ্ঠানের শুরু। যা আজও তাঁর আশির্বাদে বহমান।
কলকাতায় আসলে এবং আমার ক্লাস ছুটি থাকলে বড় জেঠুর জন্য আমার দুটি কাজ বাঁধা ছিল
১) সরষের তেল মেখে স্নান করানো।
২) গাড়ি চালিয়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।
তাঁর অবসর কাটানোর প্রিয় অভ্যাস ছিল তাস খেলা (পেশেন্স) যেটা আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে শিখেছি।
অনেক কথার মাঝে তাঁর দুটো উপদেশ আমার অন্তরে গেঁথে আছে এবং আমার মনে হয়েছে, যা বর্তমান সময়ে সবার জন্য উপযুক্ত।
১) আমি প্রথমে যেদিন কলেজে যাই, জেঠু তখন কলকাতায় উপস্থিত। তাকে প্রণাম করতে গেলে কারণ জিজ্ঞেস করে এবং পাশে বসিয়ে বলে "জীবনে যা কিছু ভালো এবং খারাপ তা এই ১৮-২৪ বয়সের মধ্যেই হয়। যদি এই ক'বছর নিজের ফোকাস ধরে রাখিস জীবনে কিছু হবার জন্য, তাহলে পেছনে তাকাতে হবে না।
২) তখন আমার ছোটভাই রাহুল হামাগুড়ি দেয়, তন্ময় হাঁটতে শিখেছে, মেজদা (ভানু) সম্ভবত কলেজে পড়ে। জেঠু বলেছিল ওদের কখনো জেঠাতো কাকাতো ভাই ভাববি না, ভাববি নিজের ভাই দেখবি ঠকবি না।
আজ যেখানে সংসার তথা সমাজে এতো হতাশা, হিংসা, ঝগড়া সেখানে এই কথার গুরুত্ব আমার কাছে আজও অপরিসীম। বাংলাদেশে এই প্রথা আছে কিনা জানিনা কিন্তু ভারতে আছে। তাই আমি আমার বড় জেঠুকে "মরণোত্তর সাদা মনের মানুষ উপাধি দিলাম", যার জন্য সে সব দিক থেকেই উপযুক্ত ছিল।
শুরু করেছিলাম গীতা তথা মহাভারত দিয়ে আর শেষ করি রামায়ণ দিয়ে। সবাই রামভক্ত হনুমানের কথা শুনেছেন আর আমি দেখেছি। তিনি স্বর্গীয় বেণী মাধব দে যার কথা না বললে বড় জেঠু রাগ করবে। মামা মামীদের পিতামাতা জ্ঞান করা এবং তাদের আদেশ পালন করতে আমি তাকে দেখেছি। যেখানে আজ স্বার্থপর সমাজে নিজের সন্তান পিতামাতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, সেখানে আমার দাদা স্বর্গীয় বেণী মাধব দে এক অসামান্য উদাহরণ।
সবশেষে আমি তিন পান্ডব হারিয়েছি। আমার দুই পান্ডব রাখাল চন্দ্র দে (সেজ জেঠু) এবং বিজয় কৃষ্ণ দে (কাকু)'র জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তোমাদের জন্ম শতবর্ষে আমি সাথে পাই। আসুন সকলে মিলে তাদের জন্য প্রার্থনা করি।
সূত্র-অমৃত শতবর্ষ -আমি পঞ্চপান্ডবকে যেমন দেখছি।
লেখক-সঞ্জয় দে, অমৃতলালদের ভাতুষ্পুত্র।
কেআই//