ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বড়দের শুল্ক যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুযোগের দুয়ার খুলেছে?

জাহিদ আল আসাদ

প্রকাশিত : ১৮:১৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দ্বিতীয় যুগ শুরু হয়েছে বাণিজ্য ও শুল্ক যুদ্ধের মাধ্যমে। ট্রাম্প নিয়মিতই একে ওকে হুমকি ধামকির মধ্যে রাখছেন। তার এসব হুমকি ও পদক্ষেপ বড় অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য। রাজায় রাজায় এই শুল্ক লড়াইয়ের ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে ফল ভোগ করতে হবে। এই শুল্ক যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কতটুকু আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ হয়ে এসেছে তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

৩৩ ট্রিলিয়িন ডলারের বিশ্ব বাণিজ্য যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের প্রতি ট্রাম্পের সুর চড়া। চীন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপর ক্ষেত্র বিশেষে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। এতে এসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করবে তার দাম হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তাই যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করবে।

চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ছাড়াও আশ্চর্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের আওতায় পড়তে যাচ্ছে তাদের পরম মিত্র কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

যদিও বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে লড়াইয়ে বিশ্ববাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এর ফলে বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। 

তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নতুন করে বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। তুলনামূলক কম (১২.৫%) শুল্ক সুবিধায় চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্য পশ্চিমা ভোক্তাদের কাছে দামে সাশ্রয়ী হবে। 

আবার বাংলাদেশের কম শুল্কের সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডাসহ অনেক দেশই বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে। এতে তারা বাংলাদেশের সার্টিফিকেট অফ অরিজিন ব্যবহার করে পরস্পরের বাজারে ঢুকতে পারবে।

বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পারস্পরিক শুল্ক লড়াই যত তীব্র হবে, ততই কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের। এসব কথা বলেছেন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলছেন, সঠিক কৌশল নিয়ে এগোতে না পারলে সুযোগ হাত ছাড়া হবে।  

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একই হারে মার্কিন পণ্যেও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। ধারণা করা হচ্ছে, কানাডার অনুসরণে মেক্সিকো ও চীন একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। এর ফলে তাদের পারস্পরিক বাণিজ্য কমবে। তবে তৈরি পোশাকের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করবে। এটাই বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ। কারণ আমরা মার্কিন বাজারে তৃতীয় বৃহত্তর পোশাক রপ্তানিকারক।

তবে একইসাথে কিছু বিপদও হাজির হতে পারে। যেমনঃ বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরোপেও রপ্তানি কমতে পারে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে পারে। 

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে চীন ও মেক্সিকো থেকে অনেকেই বিনিয়োগ স্থানান্তর করবেন। সেসব বিনিয়োগের বিকল্প গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের মতো দেশ। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিবিধানের আনুষ্ঠানিকতা কমিয়ে দ্রুত বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে৷ তাহলেই ট্রাম্পের খ্যাপাটে শুল্ক যুদ্ধের সুবিধা ঘরে তুলতে পারবে বাংলাদেশ।  

লেখকঃ শিক্ষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি