ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

ভাঙল বিশ্ব সাহিত্যের মিলনমেলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০০, ১৮ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৪৮, ২২ নভেম্বর ২০১৭

‘উইমেন, আর্ট অ্যান্ড পলিটিকস’ শীর্ষক সেশনে বক্তারা

‘উইমেন, আর্ট অ্যান্ড পলিটিকস’ শীর্ষক সেশনে বক্তারা

তিন দিনের নানা কর্মসূচি শেষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক সাহিত্যের অন্যতম আসর ৭ম ঢাকা লিট ফেস্টে’র পর্দা নেমেছে। সময় দেশি-বিদেশী লেখক, কবি, চিন্তাবিদ, পাঠক, দর্শনার্থীসহ আয়োজকদের চোখ অনেকটা অশ্রুসজল হয়ে উঠে। তবুও সময়ের গতিধারা মেনে নিয়ে সবাই বিশ্ব সাহিত্যের মেলবন্ধনের আনন্দঘন পরিতৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরেন।

রাজধানীর বাংলা একাডেমির বিভিন্ন মিলনায়তনে আজ দিনভর ৩১টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে লিট ফেস্টের তৃতীয় তথা শেষ দিনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর দিনভর আলোচনা, আড্ডা ও কবিতা আবৃত্তি চলে।

আড্ডা অনুষ্ঠানের মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য গল্পের আসরটি অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে। এতে বিভা সিদ্দিকি ও ফারজানা আহমেদের স্নিগ্ধ কণ্ঠে রঙিন বইয়ে পাতায় চোখ রেখে মুগ্ধ হয়ে গল্প শোনে শিশুরা। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে সকাল ১০টায় এ আসর শুরু হয়। নজরুল মঞ্চের বটতলায় পাখ-পাখালির কাকলিতে শিশুদের পড়ে শোনানো হয় ‘বংকু দা সুপার ডগ’ ও  বনের গল্প’। কথকদের উপস্থাপনায় শিশুরা এ সময় গল্পের ভুবনে হারিয়ে যান। গল্প শেষে শিশুদের জন্য ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। অনুষ্ঠানে আগত বিভিন্ন স্কুলের শিশুরা এ সময় লেখকদের মজার মজার সব প্রশ্ন করে।

শিশুদের জন্য আরেকটি সেশনও সবাইকে মুগ্ধ করে।  ম্যাজিক অব ম্যাথ শীর্ষক এ সেশনে খুবই মজার এবং খেলার ছলে অঙ্ক শিখে শিশুরা। বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে এ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। শাহরিয়ার রহমানের উপস্থাপনায় এতে অংশ নেন ইমরান আহমেদ ও শ্রাবন্তী দত্ত।

সকাল সোয়া ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত ‘টকি টাম্বল’ নামের আরেকটি সেশনে গল্প শুনিয়ে শব্দের খেলায় শিশুদের চমৎকার কিছু সময় উপহার দেন ভারতীয় অভিনেত্রী, লেখক ও শিশু অধিকারকর্মী নন্দনা দেবসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি শিশুতোষ কার্টুন দেখানো হয়। এরপর নন্দনা শিশুদের জন্য তার লেখা ‘টকি টাম্বল অব জামবেল ফার্ম’ থেকে গল্প ও গল্প বলার ছলে শব্দ শেখার খেলায় সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। এ সেশনে নন্দনা তার পরিবারের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক অনেক পুরনো উল্লেখ করে বলেন, ‘বাবা অর্মত্য সেন ঢাকায় অনেক বছর ছিলেন।’

লিট ফেস্টের মঞ্চে আগত এক শিশুর সঙ্গে নন্দনা দেবসেন

আজকের সেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘উইমেন, আর্ট অ্যান্ড পলিটিকস’। সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘উইমেন, আর্ট অ্যান্ড পলিটিকস’ শীর্ষক সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। সেশনটি সঞ্চালনা করেন বি রাওলাট। এতে অংশ নেন লেখক ও অভিনেতা এস্থার ফ্রয়েড, স্পোকেন ওয়ার্ড আর্টিস্ট বিগো চিওল, লেখক ও অভিনেতা নন্দনা সেন এবং কবি-লেখক ও লিট ফেস্টের অন্যতম উদ্যোক্তা সাদাফ সায্। সেশনের শুরুতেই বাংলাদেশের সমাজে-রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন সাদাফ।। তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশের নারীরাও তত কর্মমুখী হয়ে উঠছেন। ১৯৭১ সালে এ দেশের নারীদের সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে চার লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্র সম্মানজনক স্বীকৃতি দিলেও সামাজিক অবস্থানের কারণে তাদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।’

বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনাতায়নে ‘ভাষার রাজনীতি, ভাষার অর্থনীতি’ শিরোনামে আরেকটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হকের সঞ্চালনায় এ সেশনের আলোচনায় অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ লেখক কিন্নর রায়, সেবন্তি ঘোষ প্রমুখ। সেবন্তি ঘোষ বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে বাঙালি রয়েছে। কিন্তু তারাও সেখানে বাংলার চর্চা করছে না। সবাই ইংরেজিমুখী। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভুলে গেলে চলবে না। নিজের ভাষাকে সঠিক চর্চার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

বিকাল ৪টায় নজরুল মঞ্চে ‘স্বরচিত কবিতা’ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সেশনে প্রায় ১০ জন কবি কবিতা আবৃত্তি করেন। এদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় কবি জহির সেন মজুমদার, জুয়েল মাজাহার, সজল আহমেদ প্রমুখ। বিকাল ৫টায় আরেক জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ তার অপ্রকাশিত দুটি কবিতা পাঠ করেন। তিনি অনেকটা অশ্রুসজল নয়নে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিদায় নেন। এ সময় অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী বছর আবারও লিট ফেস্টে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আপনারা এভাবে উপস্থিত হয়ে বৃহত্তর এ সাহিত্য আসরকে সাফল্যমন্ডিত করবেন।’

 

/ডিডি/ এআর

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি