ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ভারত বাংলাদেশ যমজ ভাই’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৩৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জয়ন্ত রসিক। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান লেখক ও নাট্যকার।  প্রথম জীবনে চাকরি করেছেন সরকারের পুলিশ বিভাগে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  হিসেবেই অবসর নিয়েছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। এখনো পর্যন্ত তার ৭০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘদিন নাটক নিয়ে কাজ করা জয়ন্ত রসিকের ৪৫টি নাটক পশ্চিমবঙ্গে মঞ্চস্থ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মৌলিক নাটক নাট্য সাহিত্যে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে বলে সমালোচকদের অভিমত। তার লেখা `মাটি নাই`  মূলত একটি রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দুই বাংলায় বেশ সমাদৃত। তার লেখা উপন্যাস `ভুঁইয়াদের নাতবৌ`-এ তিনি দুই বাংলার সীমারেখার বিরোধীতা করে তোপের মুখে পড়েছিলেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে তিনি এখন ঢাকায়। দুই বাংলার সম্পর্ক, বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি, বিজেপি- তৃণমূল শাসন, সংখ্যালঘু ভাবনা- সব নিয়েই কথা হয় একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশকে কীভাবে দেখে?

জয়ন্ত রসিক: আমরা তো একটা দেশ ছিলাম। ভৌগোলিকভাবে এক ছিলাম। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবন যাপন পদ্ধতি, দৃষ্টিভঙ্গি সব এক। এখনো এক। ১৯৪৭- এ হঠাৎ করে রাজনীতির স্বার্থে ভৌগোলিকভাবে আমাদের আলাদা করা হলো। এটা কতবড় যাতনা যারা ভুক্তভোগি তারাই ভাল জানে। রেডক্লিফ কলমের এক আঁচড়ে দেশ ভাগ করেছে। কিন্তু তাতে স্বর্বশান্ত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। আমরা বংশ পরষ্পরায় এখনো সেই যাতনা বহন করি। ওই জায়গা থেকে বাংলাদেশ আমাদের যমজ ভাই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দুই বাংলার বর্তমান পারষ্পরিক সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি কী?

জয়ন্ত রসিক: দুই দেশের পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে যে জটিলতা তা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। অতিরিক্ত এত আনুষ্ঠানিকতার দরকার ছিল না। পাসপোর্ট ভিসা থাকলেও উভয় দেশের বর্ডারে নানা ধরনের দেখা দেখি লেখা লেখি এসব বিব্রতকর। দুই রাষ্ট্রের বিশ্বস্ততার ওপর ভিত্তি করে আমরা এসবের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ছিল।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাংলাদেশের সুখ দুঃখ কী পশ্চিমবঙ্গকে এখনো বিচলিত করে?

জয়ন্ত রসিক: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা কখনো শুধু বাংলাদেশের যুদ্ধ হিসেবে ভাবিনি। সেটা আমরা আমাদের যুদ্ধ হিসেবে ভেবেছিলাম। যেমন এখন আপনারা রোহিঙ্গা ইস্যুকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে ভাবছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানি কারাগার থেকে বেরিয়ে লন্ডন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। গড়ের মাঠে আমি মাত্র কয়েকহাত দূরে দাঁড়িয়ে তার বক্তৃতা শুনেছি। আমি তখন পুলিশে কর্মরত। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার খবরে আমি নিজে কলকাতায় অনেককে কাঁদতে দেখেছি। যারা কেঁদেছে তারা হয়তো অনেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। কিন্তু মানুষ হিসেবে নেতা হিসেবে তিনি অনেকের মনের সাম্রাজ্যে ছিলেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভারত হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র। একজন মুসলমান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে কতোটা সম নাগরিকত্ব ভোগ করেন?

জয়ন্ত রসিক: একেক সময়ে মনে হয় আমরা ভুল সময়ে ভুল দেশে জন্মেছি। কখনো কখনো সংখ্যালঘু হওয়ার দায় এড়ানো যায় না। তবে সরকারি চাকরিতে সেই বৈষম্য কখনো আসেনি। পুলিশ বিভাগের মতো স্পর্শকাতর চাকরি করেছি। এখানে আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন হয়েছে। মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আমি তার নিরাপত্তার দায়িত্বে দীর্ঘদিন বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করেছি। আমাকে নিয়োগ দেওয়ার সময় কেউ একবারো ভাবেনি তারা একজন মুসলমানকে নিয়োগ দিচ্ছে। কিন্তু এরপরও সামগ্রিকভাবে মনে হয় কোথাও যেন একটা `কিন্তু` আছে। এই সত্যিটা এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পৃথিবীর সব জায়গায় কী তাহলে একই চিত্র? সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু কী একই মূল্যায়নে আসবে না?

জয়ন্ত রসিক: খুব জোর দিয়ে এখনো পর্যন্ত দাবি করতে পারছি না। তবে আমি ভীষণ আশাবাদি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমরা এখানে বিভিন্ন সময়ে যে অভিযোগটা পাই, তা হলো ওখানে আযান দেওয়া, গরু কোরবানি করাসহ নানা বিষয় নিয়ে মুসলমানদের বাধার মুখে পড়তে হয়। এ অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?

জয়ন্ত রসিক: না, পশ্চিমবঙ্গে কখনো এরকম কোন পরিস্থিতি হয়নি। আমি নিজেও নিয়মিত গরুর মাংস খাই। তবে বিজেপি অধ্যুষিত কয়েকটি রাষ্ট্রে গোহত্যা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থানসহ কয়েকটি রাজ্যে কোরবানীর ওপর নিষেধাজ্ঞা করে আইন পাস হয়েছে। ওই রাজ্যগুলোতে বেসরকারিভাবে উটকো লোকদের দিয়ে গোরক্ষক সমিতি নামে সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা গরুকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বা এরকম কিছু দেখলে হামলা চালায়। এ পর্যন্ত এরকম ঘটনায় বেশ কয়েকজন মারাও গেছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কেন্দ্রে বিজেপির শাসন। আপনাদের মূল্যায়ন কী?

জয়ন্ত রসিক: নাগরিক হিসেবে বলব প্রত্যাশা পূরণে বিজেপি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা এখনো পর্যন্ত কোন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ছোট একটা উদাহরণ দিই। কংগ্রেস আমলে ব্যাংক আমাদেরকে ১০ শতাংশ টাকা মুনাফা দিত। আর এখন সেটা নেমে এসেছে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশের ঘরে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: তাহলে কী বলতে পারি, ভারতে গণতন্ত্র ভাল নেই?

জয়ন্ত রসিক: যেসব রাজ্যগুলো বিজেপি অধ্যুষিত সেখানে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি মমতা ব্যানার্জির প্রতি দুর্বলতা দেখাচ্ছেন। কিন্তু তিনি আমাদের তিস্তার পানি দেননি।

জয়ন্ত রসিক: আমি এ ব্যাপারে কিছু না বলি। এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। কেন্দ্র পানি দেওয়ার পক্ষে ছিল। সাধারণ মানুষও তিস্তার ব্যাপারে ইতিবাচক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবছেন সেটা তিনি ভাল জানেন। নিশ্চয় তারও একটা ব্যাখ্যা আছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের ভাবনা কী?

জয়ন্ত রসিক: শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, বরং সারাবিশ্বে শেখ হাসিনার সরকার একটি দৃষ্টান্ত। আপনারা দেশের ভেতরে থেকে হয়তো উপলব্ধি করতে পারবেন না। কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে ন্যালসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত বা মাহাথির মোহাম্মদের মতো আমরা এখন শেখ হাসিনার নাম নিই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?

জয়ন্ত রসিক: এদেশের মানুষ ভীষণ অতিথি পরায়ন।  আমি মুগ্ধ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনার বাংলাদেশ ভ্রমণ সুন্দর হোক।

জয়ন্ত রসিক: আপনাদের জন্যও শুভ কামনা।

এসএইচ/

 

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি