ভারতে মুসলিম নারীকে ‘বোরকা খুলে হেনস্তা’, যা জানা যাচ্ছে
প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৪৯, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর এলাকায় এক নারীকে রাস্তায় হেনস্তা করা হয়েছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
মুজফফরনগরের রাস্তায় প্রকাশ্যে ওই নারীর বোরকা খুলে নিতে এবং তাকে অপদস্থ করতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে। ওই নারীর সঙ্গে যে ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, তাকেও হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সঙ্গে থাকা সেই ব্যক্তির নাম শচীন। তিনি ব্যাংকের একজন কর্মী।
যে নারীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে তার মা বলেছেন, "তারা ভুল সন্দেহ করে আমার মেয়েকে মারধর করেছে এবং আমার সহকর্মীর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে। আমি তাদের কখনোই ক্ষমা করব না।"
"আমার মেয়ের মানসিক অবস্থা এখন ভালো নয়, সে কথা বলতে পারবে না। তবে আমরা দোষীদের শাস্তি চাই," বলেন তিনি।
এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ এপ্রিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হেনস্তার শিকার ওই নারীর মা নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তাদের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলছিলেন, তার মেয়ে অন্য সম্প্রদায়ের একজনের সঙ্গে কাজে গিয়েছিল, সেকারণে সন্দেহবশত তার বোরকা খুলে নেওয়া হয় এবং মারধর করা হয়।
ঘটনার দিন অর্থাৎ, ১২ই এপ্রিলের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে হেনস্তার শিকার ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে সরতাজ, শাদাব, মহম্মদ উমর, আর্শ, শোয়েব ও শামি নামে ছয়জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিগ্রহের শিকার ওই নারীর পরিবার যে এলাকায় বসবাস করেন, গ্রেফতারকৃতরাও একই এলাকার।
ডিএসপি রাজু কুমার সাব জানিয়েছেন, ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং তাদেরও শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১৫ (২), ৩৫২, ১৯১ (২) এবং ৭৪ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই ধারাগুলোয় মারধর, গালিগালাজ করা, দাঙ্গা ও শ্লীলতাহানি সম্পর্কিত অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ওই নারী এবং তার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে।
ওই নারীর মা জানান, "আমার মেয়ের সঙ্গে কী কী হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই তা ভিডিওতে দেখেছেন। এখনও বিয়ে হয়নি আমার মেয়ের। ঘটনার পর থেকে খুবই আতঙ্কে রয়েছে সে।
তিনি আরও বলেন, "আমার ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আমার স্বামী আট বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাই সংসারের সব খরচ আমাদেরই চালাতে হয়।"
তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে ব্যাংকে কাজ করছেন শচীন নামে ওই ব্যক্তি। ওইদিন তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাজে যান শচীন। তারপরই এই ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনাটি যে দোকানের সামনে ঘটেছিল, সেই দোকানের মালিক নওশাদ। তিনি জানিয়েছেন, তার দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নওশাদের দাবি, তার দোকানে কর্মরত দুইজন হেনস্থার শিকার ওই নারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, "কিছু লোক জোর করে আমার দোকানে ঢুকে ভিক্টিমকে (হেনস্থার শিকার নারীকে) মারধর করছিল। আমার কর্মচারীরা তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।"
স্থানীয়দের বক্তব্য
যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানকার কাউন্সিলর নওশাদ পাহলওয়ান বলেন, "মা-মেয়ে একটি স্মল ফিন্যান্স কোম্পানির ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজের জন্য এই এলাকায় আসতেন। একজন ব্যাংক কর্মীর সঙ্গে মেয়েটিকে দেখে ভুল বোঝাবুঝির ফলে তাকে (মেয়েটিকে) মারধর করা হয়।"
শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অভিযুক্তরা তাদের মারধর করে বলে জানান তিনি।
এই ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। স্থানীয় এক দোকানদার জানিয়েছেন, ঘটনাটি তাড়াহুড়োর মধ্যে ঘটেছিল। তার কথায়, "মেয়েটির সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অন্যায়।"
স্থানীয় বাসিন্দা মুশাহিদ আলম খান এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই এলাকার আরেক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, "আমাদের শহর শান্ত, এমন আকস্মিক ঘটনায় আমরাও দুঃখিত। কিন্তু যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স কম।"
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ
আরও পড়ুন