ভাল মশার বংশ বিস্তারে বিজ্ঞানীরা!
প্রকাশিত : ১২:৪০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৫:০৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
দেখতে খুবই ছোট কিন্তু মানুষকে সহজেই অতিষ্ঠ করে তুলতে বেশ পারঙ্গম। এরা কামড়িয়ে রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এরা ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, জিকার মতো রোগের ভাইরাসও বহন করে থাকে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এটি কী? সেই মশার বিস্তারে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা, তবে ভাল মশার।
মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব পদ্ধতি প্রচলিত আছে, তার মধ্যে অন্যতম হল কীটনাশকের প্রয়োগ। কিন্তু কীটনাশক মানুষ, অন্য প্রাণী এবং পরিবেশেরও ক্ষতি করে। আবার মশারাও কিছু দিন পরে কীটনাশকের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে।
এক্স-রশ্মি বা গামা-রশ্মি প্রয়োগ করে মশার বংশবিস্তারের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। তবে এটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বার বার করতে হয়, নইলে ফল পাওয়া যায় না। আর একটি পন্থা হল, মশাদের জিনগত পরিবর্তন ঘটানো। এই পদ্ধতি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
তাই বাধ্য হয়ে মশাকে ‘ভাল মশায়’ পরিণত করার পথে হাঁটছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কট ও’নিল একটি বিশেষ ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্য নিলেন, যার নাম ওয়াবাকিয়া। এই ওয়াবাকিয়া নতুন কিছু নয়। ৬০ শতাংশ পোকামাকড় যেমন- মৌমাছি, মথ, প্রজাপতি, কয়েক ধরনের মশা— এদের শরীরে ওয়াবাকিয়া ছিলই এবং বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে আজও আছে।
যেসব মশার শরীরে ওয়াবাকিয়া আছে তারা মানুষকে কামড়ালেও রোগ সংক্রমণের কোন ভয় থাকে না। কিন্তু স্কট ও’নিল লক্ষ্য করলেন, এডিস এজিপ্টাই মশার শরীরে এই ব্যাক্টেরিয়া নেই। আর তাই তারা ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, জিকা-র মতো রোগ সংক্রামিত করে। যদি এডিস এজিপ্টাই’র শরীরে ওয়াবাকিয়া প্রবেশ করিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, জিকা ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগের জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করবে ওয়াবাকিয়া। ফলে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি যেমন বন্ধ হবে, তেমনি বন্ধ হবে রোগ ছড়ানোও।
মশার শরীরে ওয়াবাকিয়া প্রবেশ করিয়ে দিলে জিনগত কোন পরিবর্তন হয় না, কিন্তু তারা ভাল মশায় পরিণত হয়। অর্থাৎ তারা অসুখ সংক্রমণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে বংশ পরম্পরায়। এই পদ্ধতিতে গবেষণাগারে বেশ কিছু স্ত্রী ও পুরুষ মশার শরীরে ওয়াবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া অনুপ্রবেশ করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওয়াবাকিয়াবাহী পুরুষ মশা অন্য স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে মশার ডিম ফোটে না। ওয়াবাকিয়াবাহী স্ত্রী মশা অন্য পুরুষ মশাদের সঙ্গে মিলিত হলে বা ওয়াবাকিয়াবাহী স্ত্রী এবং পুরুষ মশা মিলিত হলেও নতুন প্রজন্মের শরীরে ওয়াবাকিয়া ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতেই থাকে, তাহলে বাড়তে থাকবে ওয়াবাকিয়াবাহী মশা। আর তাতে বাঁচা যাবে মশাবাহিত নানা রোগ থেকে।
স্কট ও’নিলের এই পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো, নিউ ক্যালিডোনিয়া, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশে।
সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গু-আক্রান্তের সংখ্যা ব্রাজিলেই সর্বাধিক। চিকুনগুনিয়ার আক্রান্তের সংখ্যাও ভয়াবহ। সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পরে ব্রাজিলে ২০১৪ সালে ওয়াবাকিয়াবাহী মশা ছাড়ার শুরু হয় রিয়ো ডি জেনেইরোতে। ১১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এর আওতায় আসেন। পাঁচ বছর পরে দেখা গেল ওই এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ৬৬-৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এশীয় দেশগুলো আপন করে নিচ্ছে ওয়াবাকিয়া মশাকে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভারতে প্রাথমিক স্তরে ওয়াবাকিয়াবাহী মশা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার
এএইচ/