ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভালো কাজের বিনিময় খাবার মেলে যেখানে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৬, ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ২০:৪১, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

সাধারণত হোটেলে খাবার খেতে হলে দিতে হয় টাকা, কিন্তু রাধানীতে এমন এক হোটেল আছে যেখানে খেতে কোন পয়সা লাগে না। শুধুমাত্র একটি ভালো কাজের বিনিময়েই মেলে খাবার।

বিনামূল্যে ‘ভালো কাজের বিনিময় খাবার’—এমন মহৎ উদ্যোগ ইতিমধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে কমলাপুর, তেঁজগাও, সাত রাস্তা, বনানী, কারওয়ান বাজার এলাকায় ফুটপাতের দেয়ালে লাল রঙে বড় করে লেখা ‘ভালো কাজের হোটেল’। এর সামনেই খোলা আকাশের নিচে একটি করে ভালো কাজের বিনিময়ে অসহায়, দুস্থ, পথচারী, দিনমজুরদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ নামক সংগঠন। বছরের অন্যান্য সময়ে দুপুর অথবা রাতের খাবার দেওয়া হলেও রমজান মাসে তাদের কার্যক্রমে রয়েছে ভিন্নতা। এ সময়ে তারা ইফতার ও সেহরি খাওয়ান ভালো কাজের বিনিময়ে।

এই হোটেলে খাবার খেতে আসা বেশিরভাগ মানুষই নিম্নআয়ের শ্রমজীবী, কুলি, পথচারি এবং ভিক্ষুক। রোজায় এসব স্থানে দেওয়া হয় ইফতারি। কিন্তু সেহরি দেওয়া হয় বিভিন্ন বস্তি, রেলস্টেশন ও ভ্রাম্যমান মানুষকে। 

ভালো কাজের হোটেলের উদ্যোক্তা মো. আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ‘সবুজ ছায়া’ নামের একটি নাটক দেখেছিলাম। তখন খুব সম্ভবত ক্লাশ সিক্সে পড়ি। ঐ নাটকে অভিনেতা জাহিদ হাসান প্রতিদিন অন্তত একটি করে ভালো কাজ করতেন। ছোটবেলায় নাটকটি দেখে আমি তখন থেকেই নিজে নিজে কিছু ভালোকাজ করার চেষ্টা করতাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে মনে হলো একা কেনো এ কাজটি করবো? আমার সঙ্গে সবাই এমন কাজ করলে সমাজটা বদলে যাবে। এভাবেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এবং আমার কিছু বন্ধু মিলে এই ভালো কাজের হোটেল চালু করি।’

যাত্রা শুরুর দিকে মাসে ১০-১২ দিন কার্যক্রম চালালেও বর্তমানে প্রতিদিনই এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রতিদিন প্রায় হাজারের উপরে মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করছে সংগঠনটি। শুধু খাবার নয়, পথ শিশুদের পড়ালেখা শেখাতে তারা গড়ে তুলেছেন দুটি স্কুল। যেখানে বিনামূল্যে দরিদ্র শিশুরা পড়া লেখা করতে পারে।

খাবার বিতরণের আগে সংগঠনের একজন সেচ্ছাসেবক কলম-কাগজ নিয়ে এক এক করে সবার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেন, আজকের দিনে কে কী ভালো কাজ করেছেন; এবং সেসব খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তবে কেউ যদি ঐদিন কোনো ভালো কাজ নাও করে থাকেন, তাহলেও তার নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ঐদিনে কোনো ভালো কাজ করা ছাড়াও তাকে খালি মুখে সে হোটেল থেকে ফিরে আসতে হবে না। পরদিন একটা ভালো কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেই মিলবে খাবার।

‘ডেইলি টেন মেম্বারস’ নামে ফেসবুকে উদ্যোক্তাদের গ্রুপে প্রায় দেড় হাজারের মতো সদস্য রয়েছেন; এছাড়াও অনেক সদস্য রয়েছেন গ্রুপের বাইরে। সব মিলিয়ে ২৩শ এর মত সদস্য আছেন যাঁরা প্রতিদিন ১০টাকা করে জমা করেন। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে ব্যাংক আছে, তাতেই তারা এ টাকা জমা করেন। মাস শেষে যে টাকা হয়, এ টাকা দিয়েই আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এছাড়াও অনেক শুভাকাঙ্খী রয়েছেন যারা ভালো কাজের হোটেলের জন্য উদ্যোক্তাদের কাছে অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন। 

আরিফুর রহমান আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে যন্ত্রণাকর হলো ক্ষুধার কষ্ট! এই ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে অসংখ্য মানুষ খারাপ পথ বেছে নেয়— এ বিশ্বাস থেকে ক্ষুধা ও অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা ২০১৯ সাল থেকে ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ সংগঠনের অধীনে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। সবচেয়ে আনন্দ ও ভালো লাগার ব্যাপার হলো, সারাদিন পরিশ্রমের পরে, যখন আমাদের দেয়া খাবার তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পর মানুষের মুখে হাসি দেখি, তখন খুশিতে আমাদেরও মন ভরে যায়।’

তিনি জানান, ঢাকার পাঁচটি জায়গা ছাড়াও চট্টগ্রামে তাদের আরও একটি শাখা রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ভালো কাজের বিনিময়ে অসহায়-দরিদ্র মানুষদের খেতে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে তাদের এ কার্যক্রমে প্রায় ৪ হাজার ৮শ’ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন, যারা কোন প্রকার অর্থ ছাড়াই নিজের পরিশ্রম দিয়ে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শুধুমাত্র রান্নার কাজে নিয়োজিত বাবুর্চি ও খাবার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকজন ভ্যান চালক রয়েছেন যাদের বেতন দিতে হয়। বাকি সবাই মানুষের জন্য সেবার মন নিয়ে এ কাজে যুক্ত রয়েছেন।

আরিফুর রহমানের আহ্বান তার এই কাজে যে কেউ চাইলেই যুক্ত হতে পারেন শ্রম, মেধা অথবা অর্থ দিয়ে। কারণ সমাজকে বদলে দেওয়া একার পক্ষে সম্ভব না, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। যেখানে কেউ অন্তত খাদ্যের জন্য কষ্ট পাবে না। 
এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি