তারকালাপে সৈয়দ রুমা
‘ভালো কিছু করতে একটিভ থাকতে হবে’
প্রকাশিত : ১৬:২৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:২৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭
সৈয়দ রুমা। দেশের আলোচিত র্যাম্প মডেল ও কোরিওগ্রাফার। ২০০২ সাল থেকে শুরু। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। অসংখ্য দেশি বিদেশি পণ্যের মডেল হয়ে সফলতার চূড়ায় অবস্থান করছেন। শুধু মডেলিং নিয়েই নয়, কোরিওগ্রাফিতেও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে। চলচ্চিত্রে আইটেম গানে পারফর্ম করেও দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন মডেল রুমা। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইন’র সঙ্গে কথা হয় সময়ের ব্যস্ত এই তারকার। তাকে নিয়ে সাক্ষাৎকারটি লিখেছেন- সোহাগ আশরাফ
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপু কেমন আছেন?
সৈয়দ রুমা : ধন্যবাদ। ভালো আছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনি তো একযুগেরও বেশি সময় ধরে মিডিয়াতে কাজ করছেন। প্রথমেই একজন মডেলের কোন কোয়লিটিটা থাকা জরুরী?
সৈয়দ রুমা : এক কথায় ‘একটিভ’। একটিভ না থাকলে দীর্ঘদিন কাজ করা সম্ভব না। কাজের প্রতি একটিভ থাকতে হবে। আমিও খুব একটিভ ভাবে কাজ করেছি। আর একটা কথা হচ্ছে- টার্গেট থাকতে হয়। আমি কি করব, নিজেকে কোথায় দেখতে চাই তা আগে থেকেই নিদ্ধারণ করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : অনেকেই আছেন যারা একাই অনেকগুলো সেক্টরে কাজ করছে। যেমন- অভিনয়, মডেলিং, উপস্থাপনা ইত্যাদি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
সৈয়দ রুমা : আমি যেটা বলবো- আমি একটা সময় পর্যন্ত শুধু র্যাম্পই করেছি। দীর্ঘ সাত-আট বছর শুধু র্যাম্প এর পেছনেই সময় দিয়েছি। তবে পাশাপাশি ফটোশুট করেছি। কিন্তু র্যাম্পই ছিল প্রধান টার্গেট। এরপরে এক সময় ভাবলাম দেখি ভিন্ন সেক্টরে গিয়ে। নাটক করেছি, আইটেম সং করেছি। কিন্তু এর পরেও আমার কিন্তু টার্গেট ছিল র্যাম্প।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : এখনতো অনেক গ্রুমিং প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। আপনিও গ্রুম করছেন। এর কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে?
সৈয়দ রুমা : শতভাগ গুরুত্ব রয়েছে। মনে করেন একজন বাসায় থাকেন। অথবা লেখাপড়া করছেন। তার লাইফটা কিন্তু বাসা টু স্কুল। মিডিয়াতে কিভাবে চলতে হবে? ফ্যাশন জিনিসটা কি তা বুঝতে হবে? একজন মডেলের মধ্যে মানুষ কি দেখতে চায়? কেনো শিখবে?
আমি হয়তো সবার থেকে একটু আলাদা ভাবে চলাফেরা করি বলে ই অনেকের আইকন হতে পেরেছি। একজন মানুষকে কেনো অন্যরা দেখবে? মডেলকে কেনো দেখবে? কারণ তাদের স্টাইল, ধরণটা একটু আলাদা। তাদের ড্রেসআপ, তাদের মেকআপ, তাদের চলাফেরা সবকিছুতেই একটু ভিন্নতা থাকে। মনে করেন কারও সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু এক্সপ্রেশন ঠিক নাই। অনেকেই আছেন যারা সবার সঙ্গে সহজে মিশতে পারে না। কিন্তু মিডিয়াতে সবাই বন্ধুর মত। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হবে। অনেক পরিবেশে যেতে হবে। এগুলো সবই জানা থাকা জরুরী।
আর আমরা যখন গ্রুমিং করাই তখন শুধু মডেলিং নয়, নরমল লাইফের জন্যও গ্রুমিং করাই। ওরা কিভাবে ড্রেস পড়বে, কিভাবে কথা বলবে, কিভাবে মেকআপ করবে, হেয়ার স্টাইল কেমন হবে, রাতের পার্টির ড্রেস, দিনের পার্টির ড্রেস কেমন হবে সবই শেখানো হয়।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনার শুরুটা কি তাহলে র্যাম্প থেকেই?
সৈয়দ রুমা : হ্যাঁ। র্যাম্প থেকেই শুরু। ২০০২ সালে টেক নাইট একটা শো ছিল। সেখান থেকেই শুরু।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : নতুন যারা ফ্যাশান শো বা র্যাম্পে কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
সৈয়দ রুমা : নতুন যারা ফ্যাশান শো বা র্যাম্পে কাজ করতে অগ্রহী তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে প্রথমে জানতে হবে সে কি ধরনের কাজ করতে চায়। যেমন এখন অনেক ভাবে মিডিয়াতে জড়িত হওয়া যায়। যেমন : কেউ ক্যামেরাম্যান হতে চায়, আবার কেউ অভিনেতা, মডেল, কোরিওগ্রাফার, পরিচালক ইত্যাদি। তবে আমি বলব যে কাজই করতে চায় আগে সেই কাজ সম্পর্কে তাকে ভাল ভাবে জানতে হবে বুঝতে হবে তারপর তাকে অনেক পরিশ্রম ও তার মেধা দিয়ে তাকে তৈরি করতে হবে। তবে আমি মনে করি যদি আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রম করতে পারে তবে সে অবশ্যই মিডিয়াতে ভালো একটা জায়গা করে নিতে পারবে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : এতো কাজ থাকতে র্যাম্প কেনে বেছে নিলেন?
সৈয়দ রুমা : র্যাম্পে কাজ করার ব্যাপারে আমার কোন ইচ্ছে ছিল না। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হব কিংবা ল ইয়ার হব। ফ্যাশন সেক্টরে কাজ করার ব্যাপারে আমার বড় বোন রেশমার খুব শখ ছিল। পরিবারের বাঁধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সে তার শখ পূরণ করতে পেরেছিল। রেশমা বহুদিন র্যাম্পে কাজ করেছে। এখন র্যাম্প ছেড়ে সে পুরোদস্তুর ফ্যাশন ডিজাইনার। রেশমার ফ্যাশন শো থাকলে আমি তার হাত ধরে সেই শো গুলোতে হাজির হয়ে যেতাম। তখন আমি খুবই ছোট। ওদের কাজ আমার একটুও পছন্দ হতো না। খালি হাঁটাহাঁটি করে। হাঁটাহাঁটির জন্য সারাদিন ধরে এতো পরিশ্রম! এটা কোন কথা হলো! একদমই ভালো লাগতো না। ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকলাম অনেকেই আমাকে প্রস্তাব দিতে থাকলো রুমা তুমিও তো র্যাম্পে কাজ করতে পার। তখন আমি সেসব প্রস্তাব উড়িয়ে দিতাম। আমার পক্ষে এতো ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করা সম্ভব না। আমার ফড়িংয়ের মত স্বভাব। ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। একসময় সবাই আমার বড় বোনকে বলতে থাকলো আমাকে র্যাম্পে কাজ করানোর বিষয়ে। প্রস্তাব শুনে রেশমাতো খুব খুশি। আমাকে রাজি করিয়ে ফেলল। কোন কিছু ম্যানেজ করার ব্যাপারে রেশমা অসাধারণ ক্ষমতাবান। আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে কোন মেয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করেনি। প্রথম দিকে রেশমার বাইরে কাজ করার কথা শুনে আমি ভয় পেতাম। আমি রেশমাকে বলতাম আপু এটা করতে যেও না। দাদী মারবে, মা বকা দেবে। অথচ রেশমা ঠিকই দাদীকে আর মাকে ম্যানেজ করে ফেলল। রেশমার কারণেই আমাকে নতুন করে আর স্ট্রাগল করতে হয়নি। পথটা রেশমাই পরিস্কার করে রেখেছিল। মূলত রেশমার কারণেই আজ আমি র্যাম্প মডেল। একটা দুইটা শো করতে করতে আমি একসময় র্যাম্পের প্রেমে পড়ে গেলাম। র্যাম্পের বিষয়টাই এমন একবার যে শুরু করে সে আর ছাড়তে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মডেলরা র্যাম্পে কাজ করতে পারে। যদি এমন হতো সারাজীবন র্যাম্পে কাজ করা সম্ভব হতো তাহলে বোধ হয় আমি সারাজীবনই সেটা করতাম।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : একুশে টিভি অনলাইনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা : ইটিভি অনলাইনের সকল পাঠকদের জন্য শুভ কামনা। আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসএ/