ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

ভালোবাসা দিবস যেভাবে দেশে দেশে এবং বাংলাদেশে

রাশেদ আহমেদ

প্রকাশিত : ১১:৪৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১২:০১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। এ দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষক সহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে ভালোবাসা জানায়। বর্তমানে বিশ্বে এই দিনটিকে খুবই আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো পরিপূর্ণ থাকে। এই দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকে। বিশ্ব ভালবাসা দিবসে আগে পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে এই দিবসটি দেশে দেশে আনন্দ উন্মাদনার সঙ্গে পালন হয়। আমরাও এই দিবসটি পালন করে থাকি তবে হয়তো অনেকেই জানিনা দিবসটি কিভাবে বা কোথা থেকে আসলো।

প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করতো। কারো করো মতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবে না। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট।রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে।

কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো।একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ বা ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (‘From your Valentine’)। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল। কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।

আরেকটি ভিন্নমত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন, প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন,মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করতো পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে। ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উদ্ভব হলেও এটি বিশ্বব্যাপী প্রথম দিকে তেমন প্রচার ও প্রসার লাভ করেনি। 

বর্তমান সময়ে এসে ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের কদর প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এই দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে। ভালবাসা দিবসের জন্য মানুষেরা কার্ড, ফুল, চকোলেট ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী কেনে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনে প্রায় আনুমানিক ৩ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান হয়।

বাংলাদেশে নব্বুই দশকের শুরুতে ভ্যালেন্টাইন্স দিবস পালন শুরু হয়। আমরা বেশ কজন তরুণ “বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন পরিষদ” এর ব্যানারে প্রকাশ্যে এর শুভ সূচনা করেছিলাম। অনুষ্ঠান হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে। পরদিন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রথম পাতায় আমাদের ছবিসহ সংবাদ প্রচার হয়েছিল। হেডলাইন ছিল “ঢাকায় ভালোবাসা দিবস উদযাপিত”। তখন অনেক সমালোচনাও হয়েছিল। কিন্তু একটি ভালো উৎসবের রং কেনো ছড়িয়ে যাবে না দিকে দিকে এই চেতনা কাজ করেছিল। এখন বাংলাদেশের শহরে শহরে এমনকি গ্রামেও ঘটা করে এই দিবস পালন হয়। এই সুযোগে কর্পোরেট হাউসগুলো এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া দিবসটি লুফে নিয়েছে। বর্তমান সংকীর্নতা, জটিলতা এবং হিংসা-অশান্তির এই সময়ে এই দিবস পালনের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। আমি বিশ্বাস করি শত্রুর মনও জয় করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে। কেউ পাথর ছুঁড়লে পাল্টা ফুল ছুঁড়ে দাও। তখন আর কেউ পাথর ছুঁড়বে না। ছুঁড়ে দেবে ভালোবাসা। এভাবেইতো গড়ে উঠবে ভালোবাসার বিশ্ব। 

শুভেচ্ছা ভালোবাসার।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি