আগারগাঁও ফুলের বাজার
ভালোবাসা দিবসে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট
প্রকাশিত : ১২:২৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৪৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক ফুলের চাহিদা কোনো কালেই কম ছিলো না। ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। সারা বছরই বিয়ে, জন্মদিন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ নানান অনুষ্ঠানে প্রয়োজন ফুলের। রয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভালোবাসা দিবসের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসবও। প্রতিবারের মতো এবারও তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ফুল বাজারগুলোতে লেগেছে ব্যস্ততার ছোঁয়া। ক্রেতার হাতে তরতাজা ফুল পৌঁছে দিতে এরইমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি ফুলের বাজার আগারগাঁওয়ে দিবসটিতে ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কয়েকটি ফুল বাজার আগারগাঁও, শাহবাগ ও ফার্মগেট ঘুরে জানা যায়, এবার রাজধানীর বেশির ভাগ ফুল যশোরের গদখালি থেকে কেনা হচ্ছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে সারা দেশে ফুলের চাহিদা হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া পরিবহন খরচ ফুলের বান্ডিল প্রতি অন্য সময়ের থেকে বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। যার প্রভাবে বাজারে ফুলের দাম একটু বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
আগারগাঁও পাইকারী ফুল বাজার সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ ফুল সমিতির সহ সভাপতি এ আর বাচ্চু খাঁ বলেন, বছরের কয়েকটি দিন আমাদের বেচাকেনার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়। এসব দিনগুলোর মধ্যে বিশ্বভালোবাসা দিবসে আমাদের সবচেয়ে বেশি বেঁচাকেনা হয়। দিবসটি ঘিরে যশোরের গদখালী, ঝিনাইদহ, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে ফুল আসবে। দিবসটিতে আমরা ক্রেতার কাছে তরতাজা ফুল পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। চাষীদেরকে ১৫ দিন আগের ফোটা ফুল, ১৫ দিন পরে না বিক্রির জন্য আগেই জানিয়ে দিয়েছি। আশা করছি এ দিনে শুধু রাজধনীর আগারগাঁও বাজারেই বিক্রি হবে ২০ কোটি টাকার ফুল।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগারগাঁওয়ের পাইকারী এ বাজারটিতে ১ হাজার গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ১ হাজার জারবেরা বিক্রি হচ্চে ৬০০ টাকা, একশ’ গোলাপ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বিভিন্ন ধরণের গ্লাডিয়াস গড়ে একশ’টির দাম পড়ছে ৭০০ টাকা, রজনী গন্ধা একশ’টির দাম ১ হাজার টাকা।
আগারগাঁও পাইকারী ফুল বাজার সমিতি ও বাংলাদেশ ফুল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হোসাইন বলেন, আজকের বাজারদর দিয়ে বিশ্বভালোবাসা দিবসের বেচাকেনা তুলনা করা যাবে না। ওই দিন আজকের তুলনায় আড়াই থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত দাম বেড়ে যাবে। কারণ ওই দিন চাহিদা থাকে অনেক। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা ফুল পেলেই খুশি। দাম বেশি হলেও তার জন্য ক্রেতার অভিযোগ থাকে না। আজকের যে গোলাপ ৮ টাকা, ওইদিন সে গোলাপ বিক্রি হবে হয়তো ১৬ থেকে ২০ টাকা।
বাজারে যশোরের গদখালি থেকে ফুল বিক্রি করতে আসা মাসুম রানা বলেন, আমি যশোরের গদখালিতে আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছি। মানিকগঞ্জের সিংগাইরও আড়াই বিঘা জমিতে জার্বেরা চাষ করেছি। আগামীকাল বাজারে ৪ হাজার জারবেরা বিক্রি করবো। আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগের দিনে বিক্রি করবো ৪০ হাজার ফুল।
একইভাবে বাজারে ঝিনাইদহ থেকে আসা ফুল চাষী মতিয়ার রহমান বোরবার বলেন, আমি আজ বাজারে ১ লাখ গাঁধা ফুল, ৫০ কেজি রজনী পাপড়ী ও ৩ হাজার দেশী চন্দ্র মল্লিকা এনেছি। ভালোবাসা দিবসে আমার ফুল সরবরাহের পরিমান এর চেয়ে ৫গুণ বেশি হবে।
পাইকারী এ বাজারের নিকটবর্তী আগারগাঁও বাসস্ট্যান্ড খুচরা ফুলের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে গোলাপের একটি স্টিক বিক্রি হচ্ছে রকম ভেদে ১২ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ২০ টাকা, রজনী গন্ধ্যা ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৫ থেকে ২০ টাকা, গাঁধা চেইন ১০ টাকা।
এছাড়া বাজারে প্রতি ২০ ইঞ্চি ফুলের ডালা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ৩০ ইঞ্চি ফুলের ডালা ১২’শ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৩৮ ইঞ্চি ২৫’শ থেকে ৩২’শ টাকা, ভিআইপি ৫ হাজার ৮ হাজার টাকা।
বাজারে নীলকণ্ঠ ফুল ঘরের স্বত্ত্বাধিকারী মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের রোজ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। তবে ওই দিন বিকিকিনি তিনগুণেরও বেশি বেড়ে যাবে বলে আশা করছি। আশা করছি ওই দিন আমার দোকানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হবে।
তবে বাজারে ফুলের দাম বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে ফুলের তৈরি অন্যান্য জিনিসেরও। এখন ফুলের তৈরি এনবুকে ১৩০ টাকা, গাদা ফুলের মালা প্রতি পিছ ২০ টাকা, কাঠবেলি মালা প্রতি পিছ ১০ টাকা, ফুলের রিং ২০ টাকা, ফুলের গয়না সেট ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
শাহবাগের ফুলবাহার পুষ্প কেন্দ্রের খুচরা বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে ফুলের দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়াতে হয়। কারণ ৪ থেকে ৫ টাকা লাভ না করলে তো ব্যবসা চলে না। এছাড়া আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা মূলত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা করি। এসময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস ছাড়াও বিয়ে ও কনসার্টের আয়োজন চলে। তখন ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট দামের বাইরে গিয়েও যে যার মতো ফুল বিক্রি করে।
দেশে উৎপাদিত ফুল নিয়ে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু হয়। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। মোট উৎপাদিত ফুলের ৩১ শতাংশ গ্লাডিওলাস, ২৪ শতাংশ গোলাপ, ১৯ শতাংশ রজনীগন্ধা।
আরকে// এআর