ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার নয়

প্রকাশিত : ১১:৩৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ০০:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ভালোবাসার সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়। ভালোবাসার পরিসর মহাসাগরকে হার মানায়। ভালোবাসা সর্বএ বিরাজমান, ভালোবাসা অসীম,অন্তহীন, প্রবাহমান। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, বুড়োবুড়ির মধ্যেও গভীর ভালোবাসাবাসি থাকে। ভালোবাসা থাকে স্বামী- স্ত্রীতে, ভাইবোন ও সহপাঠীর মধ্যে।শিক্ষক শিক্ষার্থীও সহকর্মীদের মধ্যেও পারষ্পরিক ভালোবাসার বন্ধন গড়ে ওঠে। পশুপাখি,গাছপালা ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মায়। সন্তান-সন্ততির প্রতি মা বাবার অকৃএিম ভালোবাসাতো সর্বজনবিদিত।

তেমনি সন্তানেরও মা বাবার প্রতি। ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। পারষ্পরিক বোঝাপড়া ও অগাধ বিশ্বাসের মধ্যে ভালোবাসার জন্য।ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার উদ্ভব। এ ভালোবাসা শুধু মানুষ নয়, বিশ্বের যেকোন প্রাণির মধ্যে আছে।ভালোবাসা একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়।ভালোবাসা হচ্ছে ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ।ভালোবাসাকে দিবসকেন্দ্রিক করা মেটেই উচিত নয়। ভালোবাসা একটি সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন বিষয়। ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। ভালোবাসা মানুষের পাশাপাশি জগতের সব প্রাণির মধ্যে প্রচন্ড আবেগ- অনুভূতি সৃষ্টি করে। ভালোবাসা মানুষকে আত্নবিশ্বাসী ও আত্নত্যাগী হিসেবে গড়ে তোলে। ভালোবাসার মানুষের জন্যে মানুষ তাই যেকোন কিছু করতে পারে,জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।ভালোবাসার মানুষকে পেতে বিশ্ব ইতিহাসে যুদ্ববিগ্রহসহ বহু কামিনী আছে।

ভালোবাসার মানুষ বিশেষ করে স্নেহময়ী স্ত্রী মমতাজ মহলের জন্যে মোঘল সম্রাট শাহজাহান পৃথিবীর সপ্তম আশ্চার্যের এক দৃষ্টিনন্দন ইমারত নির্মাণ করেছিলেন- যা আগ্রার তাজমহল হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত।তবে ভালোবাসা এক তরফা কোন বিষয় নয়,বিশেষ কারণেই দু`জনের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা তৈরি হতে পারে।মানব শিশুর প্রতি যেকোন মানুষের সহজাত স্নেহ - ভালোবাসা প্রকাশ পায়।এটি অবশ্য মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।মানুষ জন্মগত ভাবে স্বার্থপর। কোন না কোন স্বার্থের কারণে মানুষের মধ্যে পারষ্পরিক বন্ধন তৈরি হয়।

স্বার্থের রকমফের থাকতে পারে।আত্নমানবতার সেবার পেছনেও এক ধরণের স্বার্থ লুকায়িত থাকে। সমাজসেবার পেছনেও কাজ করে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য।যেকোন কাজের পেছনে কোন না কোন স্বার্থ থাকে।তা ব্যক্তিগত হোক কিংবা জনস্বার্থ। ভালোবাসার পেছনেও এক ধরণের স্বার্থ থাকে।অবস্থানগত কারণে ভালোবাসার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।মন্ত্রীপাড়ার ভালোবাসা আর বস্তির মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ একরকম নয়।কালের বিবর্তনে ভালোবাসার ধরনও পাল্টে যায়।

সেকালের রাধিকারা কৃষ্ণের বাঁশির সুর শোনেই ঘর থেকে বের হয়ে আসতো।কিন্তু এ যুগের রাধিকারা দামি গাড়িরা হর্ণ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চান না।সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসায়ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে বৈষম্য দেখা যায়।যে সন্তান বেকার তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা একরকম অন্যদিকে যে সন্তান ভালো আয় উপার্জন করে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি ভালোবাসা ভিন্ন রকম হয়।পারষ্পরিক চাহিদা পূরণের ওপর ভালোবাসার মাএা ওঠানামা করে।

প্রেম ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও আন্তরিকতা সবই ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের ওপর নির্ভরশীল। চাহিদারও আবার ভিন্নতা আছে।দুবেলা দুমুটো খাওয়ার চাহিদা আবার দামী মোটরগাড়ির কেনার চাহিদা।চাহিদার একটু হেরফের হলেই ভালোবাসায় ছন্দপতন হয়।অভাবের সংসারে তো ভালোবাসার অস্তিত্ব অবশ্লিষ্ট থাকে না।

আমার এক প্রিয় কলেজ শিক্ষক প্রয়াত হিরণায় চক্রবর্তীর ভালোবাসা সম্পর্কিত একটি কথা আমার আজও মনে আছে।তা হচ্ছে " অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।"

পরিশেষে বলতে চাই,প্রেম ভালোবাসা প্রকাশ বিশেষ দিবস কেন্দ্রিক হওয়া কোনভাবেই বাঞ্চনীয় নয়।

ভালোবাসা শুধু প্রমিক প্রেমিকা আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নয় জগতের সকল প্রাণির মধ্যে পারষ্পরিক ভালোবাসা সঞ্চারিত হতে হবে। প্রতিটি জীবকে আমাদের আন্তরিকভাবে ভালোবাসতে হবে।তাইতো বলা হয়, `জীবে দয়া করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর`।

 

লেখকঃ শিক্ষক ও সাংবাদিক


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি