ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভালোবাসা সবচেয়ে মধুর কোমল দুরন্ত মানবিক অনুভূতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১২:০৩, ৮ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর কোমল দুরন্ত মানবিক অনুভূতি। ভালোবাসা নিয়ে ছড়িয়ে আছে কত কত পৌরাণিক উপাখ্যান। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সর্বত্রই পাওয়া যায় ভালোবাসার সন্ধান। এর জন্য মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে। রাজা সিংহাসন ত্যাগ করে হাসিমুখে প্রেমিকার হাত ধরে। আজকের এই পাথর সময়ে ঈর্ষা-বিদ্বেষ আর হানাহানির পৃথিবীতে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছে অমর্ত্যলোকের কাহিনী।

কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছি। বিজাতি সংস্কৃতি লালন করার কারণে আমাদের সন্তানদের মধ্যে নৈতিকতা ও ভালোবাসা কমতে শুরু করেছে। ফলে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা সর্বোপরি মানবতার প্রতি ভালোবাসার আবেদন সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এমনটিই মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন: স্যার, আপনি ইংরজি ভাষা ও সাহিত্যের একজন অধ্যাপক। সাহিত্যিকও। ভালোবাসা নিয়ে আপনার অনুভূতি কি?

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর কোমল দুরন্ত মানবিক অনুভূতি। ভালোবাসা নিয়ে ছড়িয়ে আছে কত কত পৌরাণিক উপাখ্যান। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সর্বত্রই পাওয়া যায় ভালোবাসার সন্ধান। ভালবাসার জন্য মানুষ মৃত্যুকে তুচ্ছ করে। রাজা সিংহাসন ত্যাগ করে হাসিমুখে প্রেমিকার হাত ধরে। আজকের এই পাথর সময়ে ঈর্ষা-বিদ্বেষ আর হানাহানির পৃথিবীতে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছে অমর্ত্যলোকের কাহিনী।

কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে আমরা নিজেদের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছি। বিজাতি সংস্কৃতি লালন করার কারণে আমাদের সন্তানের মধ্যে নৈতিকতা ও ভালোবাসা কমতে শুরু হয়েছে। বিজাতীয় অপসংস্কৃতির উচ্ছৃংখল জীবনের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে বর্তমান তরুণ সমাজ। ফলে নির্মোহ ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক ভালোবাসা বাড়ছে। এগুলো পুঁজিবাদী সংস্কৃতির আগ্রাসনের ফল।

এক সময় ভাষা সৈনিকদের স্মরণে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতাম সকাল থেকে। সেটিই এখন করা হয় মধ্যরাতে। পুঁজিবাদী আগ্রাসনের কারণে।পুঁজিবাদী সংস্কৃতি একুশে উদযাপনকেও বাধাগ্রন্থ করছে। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজিবাদ আমাদের গ্রাস করে ফেলবে, এমন শঙ্কা তো রয়েছেই।

একুশে টিভি অনলাইন : বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি বাঙালী সংস্কৃতির অংশ? বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কোন মিল আছে কি না?

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এটা হলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। কিছু মানুষের স্বার্থের কারণে এ বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখনি আমরা সচেতন না হলে এর ভয়াল পরিণাম থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব নয়।

একুশে টিভি অনলাইন: অপসংস্কৃতি থেকে আমরা কিভাবে বের হয়ে আসবো?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসাটা সহজ হবে না। এর সঙ্গে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও পুঁজিবাদের দু:শাসন জড়িত। এটা থেকে তখনি বের হতে পারবো যখন আমরা আত্মসম্মানবোধসম্মত জাতি তৈরি করতে পারবো। আমাদের সন্তানদের সচেতন করতে পারবো। তখন আমরা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারবো।  

একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কি নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ আছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমাদের সংস্কৃতি লালন করার সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। পুঁজিবাদী সংস্কৃতি আমাদের সন্তানদের আক্রমণ করছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের সমষ্টিগত ভালোবাসা। আর ভালবাসা দিবস হচ্ছে ব্যাক্তিকেন্দ্রিক ভালবাসা। দুটোর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। বিশ্ব ভালবাসা দিবস ব্যক্তিকেন্দ্র্রিক। পারিবারিক ভালোবাসা ভিন্ন জিনিস। পারিবারিক ও সর্বজনীন ভালোবাসা লাভ করতে হলে আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভালোবাসা ও বিজাতীয় সংস্কৃতিকে প্রত্যাখান করতে হবে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: একুশে পরিবারের প্রতিও শুভ কামনা।

‘‘অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ইংরেজির ছাত্র হয়েও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গদ্যশিল্পী, মননশীল লেখক হিসেবে পরিচিত তিনি। সৃষ্টিশীল জীবনে প্রায় ৮০টিরও বেশি গ্রন্থের স্রষ্টা। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় থেকে অসংখ্য স্বপ্নবাজকে জন্ম দিয়েছেন সুন্দর পৃথিবীর বিনির্মাণে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অগণিত শিষ্য। সফল ও সার্থক জীবনে শুধু সাহিত্য রচনা ও শিক্ষকতায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। জাতির ক্রান্তিলগ্নে কলমের খুরধারায় মোকাবেলা করেছেন সব অপশক্তিকে।

ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৫০ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগোরিস হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েটে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। ১৯৫৬ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর নিজ এলাকা মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এসময় জগন্নাথ কলেজেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এ শিক্ষাবিদ। পরের বছর ১৯৫৭ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং লেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে তিনি মাসিক পরিক্রমা (১৯৬০-৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭২), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৪) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।’’

/ এআর /

 

 

  

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি