ভাষাবিদ ড. রাজীব হুমায়ুনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ২০:০২, ৫ জুলাই ২০২১
ভাষাবিদ ও নজরুল গবেষক, নাট্যকার, শেখরসন্ধানী লেখক, সন্দ্বীপের কৃতিসন্তান ড. রাজীব হুমায়ুনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের ৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ১৯৫১ সালের ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, মাতা আজমতেন্নেছা বেগম। তিনি ১৯৬৬ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল থেকে গনিতে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ৫ম স্থান লাভ করেন।
১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বের মাধ্যমে ২য় স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। এরপরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সনও ছিলেন তিনি।
১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেটেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। সত্তরের দশকে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতেন তিনি।
রাজীব হুমায়ুন আন্তর্জাতিক কাউন্সিল অব টিচার এডুকেশন (সিটিই)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সিটিইর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গবেষক রাজীব হুমায়ুনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে নজরুল ও বিশ্বসংস্কৃতি, নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশের সাহিত্য, নজরুলের লেখার কৌশল, আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গ রচনা ও সংস্কৃতি চিন্তা, সমাজ ভাষাবিজ্ঞান, সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি। তার টেলিভিশন নাটকের মধ্যে রয়েছে মহাপ্রস্থান, নীলপানিয়া, মাগো তুমি কেমন আছো, ব্রীফকেস, একটি পরিবারের গল্প প্রভৃতি। তার একমাত্র মঞ্চ নাটক নীলপানিয়া। তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অধ্যাপক রাজীব হুমায়ুন শুধু একজন স্বনামধন্য শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি সংস্কৃতিসেবীও ছিলেন। তিনি মননশীল রচনার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল রচনায় সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখা ‘সন্দ্বীপের ইতিহাসঃ সমাজ ও সংস্কৃতি’ বইটি বিরল সৃষ্টি। এই গ্রন্থটি যুগে যুগে সন্দ্বীপের মানুষকে আপন আলয়ে ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। এটি নিজস্ব পরিচয়ের এটি একটি নিত্য ব্যবহার্য উপাদান।
উল্লেখ্য, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর হাতে নির্মম নির্যাতনে নিহত হন রাজীব হুমায়ুন ছোটভাই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম। তিনি মীর কাসেমের মামলার অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন। ঢাবির সিনেট ও নীল দলেরও সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারের পরিচালক মরহুম সামছুল হুদা চৌধুরীর ছোটভাই।
কেআই//