ভিপি নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশিত : ১৮:১৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:২৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’র (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ অন্য আহতদের বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে ২৯ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগটি দায়ের করেন ডিএম সাব্বির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভিপি নুরুল হক নুরসহ ২৯ জন ছাড়াও এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ভিপি নুরসহ আসামিরা ২২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ আটজন গুরুতর জখম হন। এ সময় তাদের মানিব্যাগ, মোবাইল ও হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেন আসামিরা। হামলার সময় ১৫ থেকে ২০ জন লাঠি ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন।
মামলা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলম রিশাদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত করা হয়নি। মামলাটি করেছেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী ডিএম সাব্বির। তার এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
তবে অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন ও ছাত্রলীগের একদল কর্মী নুরসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর উপর হামলা করেন। ভিপি নুরসহ বেশ কয়েকজনের অবস্থা অশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, গত রোববার ডাকসু ভবনে নূর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে বাদী হয়ে মামলা করেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রইচ উদ্দিন। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসীম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব হাসান নিলয় এবং জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম।
এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্যকে সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয় মঙ্গলবার সকালে।
ভিপি নুরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে বলে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মিস্টার নুর ভালো আছেন। তাদের (আহত শিক্ষার্থীরা) চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। আমরা তাদের জন্য মোট ১৩ জনের একটি বড় মেডিকেল বোর্ড (প্রথমে ৯ জন পরে পর্যায়ক্রমে বোর্ডে ৪ জন সংযুক্ত) গঠন করি। এত বড় বোর্ড আগে কখনও হয়নি। তাদের যার যা চিকিৎসা প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে সেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
ভিপি নুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মিস্টার নুর ভালো আছেন। আজ হঠাৎ তিনি বললেন যে তার কনুইয়ে ব্যথা। আমরা তার এক্সরে করেছি। রিপোর্ট ভালো আসলে আমরা তাকে আজই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেব। এছাড়া আরও ২-৩ জনকে আজ ছেড়ে দেয়া হবে।’
আহত তুহিন ফারাবীর অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তুহিন ফারাবীর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তার এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরেও অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ভালো হচ্ছে, এ নিয়ে আমরা শতভাগ কনফিডেন্ট।’
গতকাল বুধবার হাসপাতাল চত্বরে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাশেদ খান অভিযোগ করেছিলেন আহতদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক বলেন, ‘আমি আটজনের শারীরিক অবস্থা বলেছি, এখানে কারো শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি করা হয়নি। তাদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ১১ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। পরে আরও দুজন বাড়িয়ে মোট ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এত বড় বোর্ড আর কোনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে গঠন করা হয়নি।’
জানা যায়, হামলার পর আহত ২৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ওই দিনই ১৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৪ জনের মধ্যে নয়জন ছাড়া পান সোমবার।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতাসহ ৩৭ জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন