ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভুলে যাওয়াও এক ধরণের রোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিলোপ পাওয়াও এক ধরণের রোগ। বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে আলঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়া রোগ। পয়ষট্টি বছর বা তার থেকে বেশি বয়সী ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অতি পরিচিত ব্যক্তির নামও ভুলে যান। এমনকি ভুলে যেতে পারেন দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করা বাড়ির পথ।

কেন মানুষ আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত হয়- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মস্তিস্কের কোষ বা নিউরনগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্মৃতি লোপ পায়। আলঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়ার বিশেষত্ব হলো- ভুলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে। মস্তিস্কের সামনের অংশ ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। আলঝেইমার্স রোগে এই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে। পঁয়ষট্টি বছরের পর থেকেই অনেকে আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত হন।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৮০ বছরের পর থেকে মস্তিস্কে ছোট ছোট স্ট্রোকের ফলে কোষ শুকিয়ে যেতে থাকে। সে ক্ষেত্রে ৮০ বছরের পর থেকেই এই রোগের প্রভাব দেখা যায়। 

এ অবস্থায় আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- “আলঝেইমার্সের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হোন।` জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকোথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুকোষ নিউরনের ভেতর কিছু মুক্ত মৌলিক ধাতু জমতে থাকে। এই ফ্রি রেডিক্যালই নিউরন ক্ষতের অন্যতম কারণ। শরীরের ভেতর প্রতিকূল অবস্থায় ক্রটিপূর্ণ বায়োলজিক্যাল অক্সিডেশনের কারণে ফ্রি রেডিক্যাল সৃষ্টি হয়। এই ফ্রি রেডিক্যাল স্নায়ুকোষের পুরো আয়ুস্কাল নষ্ট করে দেয়। ফলে মস্তিস্কের নানা ধরনের কাজে বাধার সৃষ্টি হয়”। 

এই প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধকাল চলে আসার একটি থিওরি উল্লেখ করে ডা. মোহিত কামাল বলেন, “কোলাজেন ও ডিএনএ মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রোটিন। জীবনের জন্য অপরিহার্য এসব অণুর আড়াআড়ি সংযোগের কারণেও নিউরনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া কোষের মেটাবলিজমের পর সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থগুলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জমাট বাঁধা শুরু করে। এই জমাট বাঁধার পরিমাণ যত বেশি হয়, কোষ তত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে স্মৃতি লোপ পায়”।

ওয়ার্ল্ড আলঝেইমার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বিশ্বে প্রায় ৭৭ লাখ মানুষ আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া নতুন করে সেকেন্ডে ৬৮ জন এবং ৬৫ বছরের ওপরের বয়সী প্রতি ৯ জনে একজন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে এই রোগে কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত  অবশ্য নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬৫ বছরের ওপরের বয়সী শূন্য দশমিক এক শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম জানান, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে ৪০ বছরের পর থেকেই মস্তিস্কের ক্ষয় শুরু হয়। ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কের পুরুত্ব কমে যায়। মস্তিস্ক সংকুচিত হয়। সেরিব্রাল সালকাইগুলো চওড়া হয়ে যায়। ফলে বিকল্প মস্তিস্কের নিলয়ের আকার বাড়তে থাকে। এতে স্নায়ুর সংকেত সঞ্চালন ক্ষমতা হ্রাস পায়। অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

কীভাবে আলঝেইমার্স প্রতিরোধ করা যায়- সে সম্পর্কে জানতে চাইলে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ জানান বলেন, আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবার, মলমূত্র ত্যাগ ইত্যাদির ওপর নজর রাখতে হবে। এ সময় পুষ্টি বজায় রাখা খুব জরুরি। বিষাদে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। অ্যাসিটাইলকোলিন নিঃসরণ বাড়ানোর জন্য কোলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মান উন্নত করা গেলেও রোগের চলমান ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয় না। 

আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজির জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলঝেইমার্স প্রতিরোধে মাছের তেল বিশেষ উপকারী। কারণ মাছের তেল মানুষের স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিস্কের আকার বৃদ্ধি করে। 

অন্য এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাছের তেলে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মস্তিস্কের আকার বৃদ্ধি করে। বয়স্কদের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জিল্লুর রহমান খান বলেন, “বয়োবৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রায় অর্ধেক জেনেটিক নির্ভর। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের জেনেটিক কারণ গুরুত্ব হারাতে থাকে। ৮০ বছরের ওপরে বয়স- এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে জেনেটিক ফ্যাক্টর তেমন কাজ করে না। এ অবস্থায় একজন ব্যক্তি যত্নের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারেন। এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে শরীর ও মনবিষয়ক কিছু সুস্থ পরিচর্চা ও সচেতনতা”।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করবে।

//এস এইচ এস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি