ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ভোক্তাই শক্তি প্রাণের’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৮, ১৩ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:২০, ২২ নভেম্বর ২০১৮

ইলিয়াস মৃধা

ইলিয়াস মৃধা

১৯৮১ সালে আমজাদ খান চৌধুরীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। শুরুতে কৃষিজাত পণ্য নিয়ে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানটিই এখন পরিচিত প্রাণ-আরএফএল নামে।

প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পর অর্থ্যাত ১৯৮৬ সাল থেকে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯২ সালে নরসিংদীর ঘোড়াশালে নিজেদের প্রথম ফুড প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করে প্রাণ।

এর পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশে ১০টি ক্যাটাগরিতে ২০০টিরও বেশি পণ্য রফতানি করছে প্রাণ। এতদিনের যাত্রাপথে বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও সবসময় গ্রাহকদেরকেই নিজেদের শক্তি মনে করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান প্রাণ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা। সাক্ষাৎকার নেন সহ সম্পাদক শাওন সোলায়মান

ইটিভি অনলাইন: প্রাণ দেশ ও বিদেশের বাজারে পরিচিত একটি ব্র্যান্ড। আমরা বিভিন্ন সময় খবরে দেখি যে, প্রাণ বা অন্যান্য ব্র্যান্ডের নামে নকল ও ভেজাল পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি?

ইলিয়াস মৃধা: প্রথমত বলি যে, এটা আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। বাংলাদেশে যে যে পণ্য বা ব্র্যান্ডগুলো সফল সেগুলোকেই কিছু সুবিধাবাদি মহল নকল করে অত্যন্ত নিম্নমানে বাজারজাত করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো অন্যের সুনামকে কাজ লাগিয়ে নিম্নমানের পণ্য দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা।

ইটিভি অনলাইন: এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাণ এর পক্ষ থেকে কী ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

ইলিয়াস মৃধা: আমরা যা করি তা হলো আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং প্রশাসনকে সচেতন রাখি। তারা যদি এ ধরণের কিছু জানতে পারে তখন আমাদেরকে তথ্য দেয়। তখন সেটিকে আমরা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফুড সেফটিসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। এর পাশাপাশি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য সংস্থা যেমন- র‍্যাব, ভ্রাম্যমাণ আদালত যেন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করতে পারে তার জন্য তথ্য দিই।

বিএসটিআই, ফুড সেফটি অথরিটি, ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর, মিউনিসিপাল কর্পোরেশন বিভিন্ন সময় এ ধরণের নকল পণ্য কিন্তু জব্দ করেছে। তারপরেও মানুষ সবসময়ই একটু সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।

ইটিভি অনলাইনঃ এ ধরণের অপরাধ বন্ধে আপনার পরামর্শ কী?

ইলিয়াস মৃধাঃ দেখেন একটা মহল তো এই বিষয়কে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করবে। আমরা যখন তথ্য পাই তখন যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। সেই অনুযায়ী অভিযানও হয়। কিন্তু এসব অভিযান করে এসব বন্ধ করা যাবে না। আমি মনে করি এর জন্য সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। সরকার আন্তরিক, আরও আন্তরিক হতে হবে।

আইনকে কঠোর করতে হবে। কিছুদিন আগে মাদক বিরোধী যেমন কঠোর অভিযান হলো তেমন কিছু একটা করতে হবে। এতে করে আমরা যেমন নকলবাজদের হাত থেকে মুক্ত হবো তেমনি করে ভোক্তারা যেকোনো পণ্য আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করতে পারবে।

ইটিভি অনলাইন: এতে তো ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হচ্ছে...

ইলিয়াস মৃধা: অবশ্যই। আমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হই। ব্যবসায়িক দিক থেকে বলেন আর ব্যবসার সুনামের দিক থেকে বলেন; আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। যুগপৎভাবে গ্রাহক ও ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। একজন গ্রাহক একটি দোকান থেকে একটি পণ্য আমাদের পণ্য মনে করে কিনলেন। কিন্তু পণ্যটি আসলে নকল ও ভেজালযুক্ত। এখন সেই পণ্য ভোগ করে ভোক্তা প্রতারিত হলেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হলেন। আবার উনি হয়তো ভাবলেন আমাদের পণ্যেই সমস্যা। উনি হয়তো জানলেনও না যে, পণ্যটি নকল কিন্তু আমাদের ব্যাপারে তার একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হলো।

ইটিভি অনলাইন: প্রাণের কোনো পণ্য নকল কি-না তা গ্রাহকরা কিভাবে বুঝবেন?

ইলিয়াস মৃধা: প্রথমত বলি যে, কোনো খাদ্যপণ্য যখন কোনো ভোক্তা কিনবেন তখন তিনি এটা আগে দেখবেন যে, পণ্যের মোড়ক সিলগালা অর্থ্যাৎ মোড়ক পুরোপুরি বন্ধ করা কি-না? মোড়কে কোনো লিকেজ বা ব্রোকেজ থাকলে সেটি গ্রাহকদের না খেতে বলি আমরা। এরকম বিষয়সহ কোনো পণ্য নিয়ে যদি কোনো গ্রাহকের সন্দেহ হয় তাহলে আমরা গ্রাহকদের বলি আমাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ করেন।

আমাদের প্রতিটি পণ্যের মোড়কে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের একটি নম্বর দেওয়া থাকে। সেটিতে কল করে আমাদের কাছ থেকে পণ্যের বিষয়ে জানতে পারবেন গ্রাহকেরা। কোনো পণ্য নিয়ে যদি কোনো গ্রাহকের বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় তাহলে তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমাদের টিম সেটি তদন্ত করতে ঝাপিয়ে পড়বে। এভাবে গ্রাহকেরা চাইলে পণ্যের বিষয়ে জানতে পারেন।

ইটিভি অনলাইন: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণের বিভিন্ন পণ্যের বিপক্ষেই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে আমরা এমন কিছু সংবাদ দেখছি। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি?

ইলিয়াস মৃধা: আমাদের ব্র্যান্ড নিয়ে বলব না, একটা বিশেষ মহল সেটার নামও আমি বলব না; তাদের সম্পর্কে মিডিয়া জগতের সবাই কম-বেশি জানে। তারা তাদের স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমাদের বিপক্ষে কিছু প্রতিবেদন করেছে। এসব প্রতিবেদন নিতান্তই ফটোশপ করে করা, ভিডিও পাইরেসি এবং অন্যান্য বিভিন্ন মাধ্যমে এগুলা করা। মিডিয়া জগতের সবাই এগুলো বুঝে। আমি আপনাদের মাধ্যমে এটূকু শুধু বলব যে, আমাদের কোনো লাইসেন্স বাতিল হয় নাই। আমাদের রফতানি, উন্নতি সব কিছু ঠিক আছে। প্রাণ প্রোডাক্ট বাংলাদেশে জনপ্রিয়, ভারতেও জনপ্রিয়। আমাদের পণ্যের ওপর ভোক্তা ও গ্রাহকের আস্থা আছে। তারা সামনেও আস্থা রাখবে।

আমরা আমাদের যত ভালো কাজ সেগুলো অব্যাহত রাখব। এতে করে ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ যদি কিছু করে তাদেরকে আমরা অনুরোধ করবো যে, এতে করে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে। অতএব বাংলাদেশ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। তাই দেশের ক্ষতি করবেন না, কৃষকের ক্ষতি করবেন না। একইসঙ্গে দেশের নেতিবাচক ব্র্যান্ডিং করবেন না। আমাদের এটিই আবেদন তাদের কাছে।

একইসঙ্গে অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোর কাছে আমাদের অনুরোধ আপনারা ‘সঠিক সত্য’ তুলে ধরবেন।

ইটিভি অনলাইন: আসল বা সঠিক সত্য কি তাহলে?

ইলিয়াস মৃধা: আসল সত্য হচ্ছে, আমাদের কোন পণ্যে কোনো কিছুই হয়নি। বিশেষ মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে।

ইটিভি অনলাইন: তারপরেও এমন প্রতিবেদনে প্রাণ নিয়ে গ্রাহকেরা বেশ চিন্তিত। প্রাণের একটি বড় ‘লয়্যাল কনজিউমার’ শ্রেণী আছে। তাদের উদ্দেশ্যে আপনারা কি বার্তা দেবেন?

ইলিয়াস মৃধা: তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব যে, আপনারা আগে থেকে যেভাবে আমাদের ওপর আস্থা রেখে আসছেন এখনও সেভাবে আস্থা রাখুন। কোনো কিছুই হয়নি। আশা করি আকাশ থেকে মেঘ কেটে যাবে; কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা আমাদের ভালো কাজ অব্যাহত রাখব।

ভোক্তাদের ওপরই আমাদের আস্থা। তারাই আমাদের সম্পদ, তারাই আমাদের শক্তি। কাজেই তাদের স্বার্থ রক্ষায় আমৃত্যু আমরা কাজ করে যাব।    

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি