ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভোগান্তির আরেক নাম শাটল ট্রেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩১, ১০ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৩৯, ১০ আগস্ট ২০১৮

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কঠোর সাধনা করেই চান্স পেতে হয় এখানে। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু এটি এখন ভোগান্তির আরেক নাম।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ২১৬ জন।পূর্ণ আবাসিক সুবিধা না থাকায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা কটেজ ভাড়া করে থাকেন। তাদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এ শাটল ট্রেনে বগি স্বল্পতার কারণে বসার জন্য একটা সিট পেতে হলে রীতিমত যুদ্ধ জয় করতে হয়। কখনও সে যুদ্ধ হয় একান্ত বন্ধুটির সঙ্গে।

সিট না পেয়ে অনেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে ইঞ্জিন কিংবা ছাদে উঠে পড়েন। অনেকে বসে পড়েন পা-দানিতে। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য দৃশ্যটা নিষিদ্ধ হলেও নানান সীমাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটাকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছেন।

আর এভাবেই প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা। আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি আপনজন ছেড়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীকে পড়ে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের কঠিন বেডে। কয়েকদিন পর যে পরিবারের হাল ধরবে সেই বেঁচে থাকছে অন্যের ধরা হালে।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রবিউল আলম। আগামী রোববার যার মাস্টার্স পরীক্ষা। শাটলের সিট ধরতে রেল লাইন ক্রস করার সময় পড়ে গিয়ে দুই পা হারিয়েছেন। ভবিষ্যতের রঙ্গিন স্বপ্নকে দূরে ঠেলে জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের বেডে শুয়ে করুণ দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আশেপাশের মানুষের দিকে। এভাবে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বিলিন হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি ছিল নয়টি করে বগি নিয়ে একজোড়া শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলবে। প্রথম দিকে চুক্তি অনুসারে চললেও পরে চিত্র পাল্টে যায়। কখনও ৮টি, ৭টি আবার কখনও ৬টি বগি দিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করে রেলেওয়ে কর্তৃপক্ষ। এখানেই শেষ নয়। কখনও আবার ৬-৭টি বগির মধ্যে যুক্ত করা হয় মালবাহী বগি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, রেলওয়ের নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হয়। তারা ৮টি করে বগি নিয়মিত করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে দ্বিতীয় মানের বগি কম থাকায় মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা হয় বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

শাটলে কেন মাল বগি দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে কতৃপক্ষ জানায়, দ্বিতীয় মানের বগি উৎপাদন কমে গেছে এবং কিছু বগি সংস্কারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগে গার্ডদের জন্য সংরক্ষিত আসনসহ বগি ছিল, এখন বগিগুলো নেই। গার্ডরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বসতে পারে না। তাই তাদের জন্য এ বগিগুলো দেওয়া হয়।

শাটলে যাতায়াতের দূর্ভোগ নিয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সায়াদাত বলেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন ঘুম থেকে উঠে লাইব্রেরীতে পড়তে বসে আমাদের তখন শাটলে সিট ধরার জন্য যুদ্ধ করতে হয়। আর সিট না পেলে তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে যেতে হয়।

শাটলের বগি বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ করে আইরিন বলেন, বগি কম থাকার কারণে প্রতিদিন আমাদের ছেলেদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে চলাচল করতে হচ্ছে। যদি প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বগি বৃদ্ধি কিংবা ডাবল রেল লাইনের ব্যবস্থা করতো তাহলে হয়তো এ রকম কষ্ট করে যাতায়াত করতে হতো না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি শাটলের সমস্যা নিয়ে রেলেওয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি এর দ্রুত সমাধান হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে স্টেশন রয়েছে তাতে ৯টি বগি মুভ করা সম্ভব না। এর সমাধানের জন্য দরকার স্টেশনকে আরও প্রসারিত করা। আর তার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। যার যোগান দেওয়া রেলওয়ে ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি