ভ্রুণের বিকাশের কাহিনি
প্রকাশিত : ১১:৩৫, ২৮ আগস্ট ২০১৮
গর্ভাবস্থায় ভবিষ্যৎ সন্তানের লিঙ্গ জানতে উৎসাহী হন অনেক বাবা-মা৷ সেই তথ্যের অপব্যবহারের দৃষ্টান্তও কম নয়৷ কিন্তু কীভাবে ধীরে ধীরে প্রাণের মৌলিক রূপ পুরুষ অথবা নারী হয়ে ওঠে, সেই প্রক্রিয়া সত্যি বিস্ময়কর৷
মায়ের শরীরে নতুন প্রাণ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে৷ ভ্রূণের বয়স ৩০ দিন হলে আকারে তা প্রায় ৬ মিলিমিটার দীর্ঘ হয়ে ওঠে৷ মেরুদণ্ড দেখা যায়, হাত ও পায়ের গঠন শুরু হয়৷ এই পর্যায়ে তার কাঠামো হয় পুরুষ অথবা নারীর জননেন্দ্রিয় গঠন করে৷
কোষের নিউক্লিয়াই-এর মধ্যে একজোড়া এক্সএক্স ক্রোমাজোম থাকলে ভ্রূণটি জীববিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী নারী হিসেবে বেড়ে ওঠে৷ একজোড়া এক্সওয়াইথাকলে পুরুষ হয়ে ওঠে৷
কিন্তু প্রক্রিয়াটি আসলে আরও জটিল৷ জিন ও হরমোনের মধ্যে আদানপ্রদান ও অন্য কিছু বিষয়ের উপর লিঙ্গ নির্ভর করে৷ ষষ্ঠ অথবা সপ্তম সপ্তাহে ভ্রূণ প্রায় এক সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে ওঠে৷ প্রাথমিক অণ্ডকোষ টেস্টিস হয়ে উঠলে পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলোর বিকাশ শুরু হয়৷ টেস্টিস টেস্টোসটেরোন হরমোন ছাড়ে৷ জীববিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরুষের বিকাশের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷
অন্যান্য কিছু বিষয়ের সঙ্গে এই হরমোন ভ্রূণের মধ্যে ভাস ডেফেরেন্স, সেমিনাল ভেসিকলস ও প্রস্টেট গ্রন্থি সৃষ্টির কাজে জড়িত থাকে৷ একইসঙ্গে জননেন্দ্রিয়র র কাঠামো গ্ল্যান্স বা শিশ্নাগ্র, লিঙ্গ ও লিঙ্গত্বকে পরিণত হয়৷ মৌলিক গোনাড ডিম্বাশয়ে পরিণত হলে জীববিদ্যার সংজ্ঞা অনুযায়ী নারীর বিকাশ শুরু হয়৷ সেগুলো এস্ট্রাডায়ল নামের এক হরমোন উৎপাদন করে৷ টেস্টোসটেরোন হরমোন ছেলেদের বিকাশের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করে, মেয়েদের ক্ষেত্রে এস্ট্রাডায়ল সেই কাজ করে৷ তার প্রভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউব, জরায়ু, ও যোনির উপরের অংশটি সৃষ্টি হয়৷ অ্যাট্রোভা এবং ভগাঙ্কুর, আয়াবিয়া ও মূত্রনালী সৃষ্টি হয়৷
এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখিয়ে দিচ্ছে, যে প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের কাঠামো হয় পুরুষ অথবা নারীর জননেন্দ্রিয় সৃষ্টি করতে পারে৷ জিন ও হরমোন তার পরের বিকাশ নির্ধারণ করে৷
লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়ার উপর অন্য কিছু বিষয়ও প্রভাব রাখতে পারে৷ যেমন অ্যান্ড্রোজেন ইনসেনসিভিটি সিন্ড্রোম৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন উভলিঙ্গ অবস্থা দেখা যায়৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের বিকাশ জিনগত পুরুষের মতো ঘটে৷ তার এক্সওয়াই ক্রোমোজোম থাকে৷ ভ্রূণের মধ্যে টেস্টিস সৃষ্টি হয়৷
টেস্টটিস যথারীতি টেস্টোসটেরোন ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু জননাঙ্গের কাঠামোর মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর ত্রুটিপূর্ণ থাকায় সেই হরমোন কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না৷ ভ্রূণ এস্ট্রাডায়ল সৃষ্টি করার ফলে নারীর হরমোন আধিপত্য বিস্তার করে৷ তার ফলে এক্সওয়াই ক্রোমোজোম হওয়া সত্ত্বেও ভ্রূণের মধ্যে নারীর বৈশিষ্ট্য আরো প্রকট হয়ে ওঠে৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
একে//