ঢাকা, সোমবার   ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

ভয়াবহ রক্ত সংকটের মুখে ব্লাড ব্যাংক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৩, ৮ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৩:১৭, ৮ এপ্রিল ২০২০

করোনার প্রভাব এবার ব্লাড ব্যাংকগুলোতেও। যার জেরে বিপাকে পড়তে পারেন অনেক রোগী। রক্তের প্রয়োজনে ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হতে পারে রোগীর পরিজনদের। এমনই আশঙ্কা কয়েকটি ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। করোনা জেরে রক্ত আসছে না ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। ফলে রক্ত জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

গত ২৩ মার্চ সরকার সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে পরে এটিকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পাশাপাশি, জরুরি প্রয়োজন না হলে লোকজনকে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতে কোনওভাবেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা সম্ভব নয়। যার ফলে টান পড়তে পারে ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। আকাল হতে পারে রক্তের।

চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হতে যাচ্ছে রমজান। সংগঠনগুলো বলছে, রমজান মাসে সাধারণত রক্তদান নিম্নমুখী হয়। এর উপর যদি চলমান শাটডাউন দীর্ঘায়িত হয়, তবে থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সারের রোগীদের রক্ত ​​পাওয়া এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়- এমন রোগীদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনগুলো যোগ্য ব্যক্তিদের রক্তদান এবং জীবন বাঁচানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে ১০ থেকে ১১ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।

ডিজিএইচএসের হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ দাউদ আদনান জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো মোট চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে এবং বাকিগুলো সরাসরি অনুদান থেকে আসে। শীর্ষস্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংস্থা এবং ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিআরসিএস), কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, বাঁধন এবং পুলিশ ব্লাড ব্যাংক।

দাউদ জানান, তারা গত বছর বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাতাদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে ৮ দশমিক ৩৮ লাখ ব্যাগ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন সেনা হাসপাতাল এবং অন্যান্য ব্লাড ব্যাংক হতে সংগ্রহ করা রক্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে মজুদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে রক্ত হ্রাস পেয়েছে। তবে তিনি কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।

স্বাধীনতা দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সংগঠনগুলো দ্বারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে রেড ক্রিসেন্ট সাধারণত মার্চ মাসে সর্বাধিক সংখ্যক রক্ত ​​ব্যাগ সংগ্রহ করে। রেজিড ক্রিসেন্টের পরিচালক (রক্ত প্রোগ্রাম) তারেক হুসেন বলেছেন, তবে কোভিড -১৯ সংক্রমণের কারণে এই বছর রক্তদানের সব আয়োজন বাতিল করা হয়। গত ২৬ মার্চ থেকে বাইরের রক্তের সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ইনডোর সংগ্রহও হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও, রমজানে সাধারণত রক্ত ​​সংগ্রহ কম থাকে। এর ফলে গত মাসে রেড ক্রিসেন্ট ৭৪৭ ব্যাগ রক্ত ​​সংগ্রহ করেছে। গত বছর একই মাসে ২ হাজার ৫২৭ ব্যাগ সংগ্রহ করেছিল তারা। সংস্থাটি গত মাসে এক হাজার ১৭০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেছে। গত বছর মার্চে এই পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫৩৬ ব্যাগ।

তারেক হুসেন বলেন, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, কিডনি এবং জরুরি রোগী আমাদের নিয়মিত রক্ত ​​সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। এই অভাব তাদের জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে রোগীদের রক্ত ​​পরিচালনা একটি বড় সমস্যা হবে।

রক্তদান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী দাতাদের সংগঠন বাঁধন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে ৮০ শতাংশ কমেছে। সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁধনের সাধারণ সম্পাদক জোহাহিদ চাকদার। তিনি জানান, জেলাগুলোতে তাদের কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়া তারা দাতাদের কাছে ফোনে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তবুও সংগ্রহটি হ্রাস পেয়ে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান কর্মসূচির সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৫৭ ব্যাগ রক্ত ​​সংগ্রহ করেছিলেন। তবে এটি ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে ৪ হাজার ২২৯ এবং ৪ হাজার ১৯৫-এ নেমে এসেছে। গত বছর, তারা ৬৭ হাজার ৪৪৬ ব্যাগ রক্ত ​​সংগ্রহ করেছে এবং এক লাখ ১৪ হাজার ৮৩২ ব্যাগ বিতরণ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, যদি শাটডাউন দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে, তাহলে রক্ত ​​সংগ্রহ করা এবং বিতরণ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে।

পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, তারা সাধারণত রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সর্বাধিক পরিমাণ রক্ত ​​সংগ্রহ করেন। 

তিনি আরও জানান, এই বছর তারা দুই মাসে মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছেন, গত বছর এটি ছিল ২ হাজার ব্যাগ। আর গত বছর তারা মোট ১২ হাজার ব্যাগ রক্ত ​​সংগ্রহ করেছিলেন।

সন্ধানির ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইহসানুল করিম তানজিম বলেছেন, করোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রক্ত ​​সংগ্রহ ও বিতরণ হ্রাস পেয়েছে। দাতাদের সন্ধান করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রক্তদান শিবির আয়োজন হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রক্ত সংকট কতটা কাটবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ব্লাড ব্যাংকগুলো। কারণ থ্যালাসেমিয়াসহ অনেক রোগীদের নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। সেখানে চাহিদা থেকে গেলেও জোগান থাকবে না। তার ওপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে, তা নিয়েও কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে একটা টানাপোড়েন চলতেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি