ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মঞ্চে ওঠা সেই তরুণকে নিয়ে যা জানালেন আল জাজিরার জুলকারনাইন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশে থাকা এক তরুণকে নিয়ে চলছে আলোচনা। তার পরিচয় শনাক্তের আলোচনার মাঝে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি তার পরিচয় তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।  সেখানে সেই তরুণের পারিবারিক কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি।

সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি জানান, ওই তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী রবিনটেক্স গ্রুপের মালিক আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াতের ছেলে জাহিন। 

এ পোস্টের সঙ্গে বেশকিছু ছবি জুড়ে দেন এ সাংবাদিক। সেখানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপির সঙ্গে তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ছবি দেখা গেছে।

জুলকারনাইন সায়ের সামির ফেসবুক পোস্টটি একুশে টেলিভিশনের অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

‘আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী রবিনটেক্স গ্রুপের মালিক, আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াতের ছেলে জাহিন রোহান রাজিনকে গতকাল ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব দরবারে সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বেশ অবাকই হয়েছিলাম। হাজারের বেশি প্রাণের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঝেটিয়ে বিদায় করলো, সেই স্বৈরাচার সমর্থক এবং ওই দলের ডোনার ব্যক্তির সন্তানকে সমন্বয়ক হিসেবে স্টেজে তোলার আসল মজাটা কী? 

এদিকে জাহিন রোহানের বড়-ভাই রবিন রাজন সাখাওয়াত যমুনা ব্যাংকের পরিচালক আওয়ামী সরকারের সময় থেকেই। আরো শোনা যাচ্ছে, পলাতক সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পুত্র সাইদুল ইসলাম — যে কিনা এখনো যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন জাহিনের বড় ভাই রবিন রাজন সাখাওয়াত। 

আচ্ছা, কুখ্যাত আওয়ামী মন্ত্রী তাজুল ইসলাম কোথায় লুকিয়ে আছেন? কেউ কি তাকে রক্ষা করছে?’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে রাজিনকে ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ’ সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তাকে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা গেছে। ওই তরুণকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহফুজ আলম।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, তৃতীয় তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন। তিনি হাইড্রোকো প্লাস-এর প্রতিষ্ঠাতা। 

অন্যদিকে মঞ্চে ওঠার বিষয়ে জাহিন রোহান রাজিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে যখন ডাকলেন, তখন আমি দর্শক সারিতে ছিলাম। পাশে ছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন, তুমি বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমি কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গিয়েছি।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো আমি। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিতে আমি ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি আসবেন শুনে খুশি হয়েছিলাম এ কারণে যে, তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে।

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সঙ্গে ছবি ছড়ানো প্রসঙ্গে জানতে জাহিন বলেন, ২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একটা কাজ করে হাইড্রোকো প্লাস। সে কাজের জন্য মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল। সে সময় ছবিটি তোলা। এটি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলো তা জানি না। আন্দোলনের সময় দেশেই ছিলাম। এ আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।

মাহফুজ আলম অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠা তৃতীয় তরুণকে অনুপ্রবেশকারী বা ‘ইনট্রুডার’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ওই ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী এবং অসৎ। তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় এ আয়োজনে যোগ দেন।

অপর দিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না আমরা। তিনি ডেলিগেশন দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি। স্যার যখন আমাদের মঞ্চে ডাকেন, তিনি তড়িঘড়ি করে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে ছুটে যান। সন্দেহ হলেও তার মঞ্চে যাওয়া আমি আটকাতে পারিনি। বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্য অসহায় বোধ করছিলাম। মনে হচ্ছে, এটি ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত কাজ। আমি আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। 

ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবেন বলে উল্লেখ করেন মাহফুজ আলম।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের ডেকে নেন। তখন মঞ্চে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি ও জিহান। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন। 


এসএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি