৩৮তম প্রিলিমিনারি
মডেল টেস্ট দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে চাঙ্গা রাখুন
প্রকাশিত : ২৩:০৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৯:৫৮, ২০ নভেম্বর ২০১৭
কদিন পরেই ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। দেশের প্রায় তিন লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরির আশায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে এ পরীক্ষায়। এ সময়ে নিশ্চয়ই ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন বিসিএস প্রত্যাশী বন্ধুরা। কিভাবে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে পারেন-এ বিষয়ে ইটিভি অনলাইনের মাধ্যমে পাঠকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিবিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আশরাফুজ্জামান । তার টিপস নিয়ে লিখেছেন ইটিভি অনলাইনের রিপোর্টার মো. মাহমুদুল হাসান ।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হয় প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে। তাই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রিলিমিনারি থেকে বাদ পরলে লিখিত কিংবা মৌখিক পরীক্ষার কোনোটাতেই অংশ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশি ভালো করা সম্ভব। এজন্য প্রিলিকে বিসিএসের সিংহদ্বার বলা হয়। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ২০০টি প্রশ্ন থাকবে। তবে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ২০০ টি প্রশ্নের উত্তরই যে দিতে হবে তা কিন্তু নয়। ১০ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এ প্র্রশ্নগুলো করা হয়। তাই প্রস্তুতির নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি দখল আছে সে বিষয়টি প্রথমে শেষ করতে পারেন।
যে কয়দিন হতে আছে সে সময় প্রত্যেকদিন অন্তত একটি করে মডেল টেস্ট দিতে পারেন। কারণ, মডের টেস্ট দেয়ার মাধ্যমে ১০ টি বিষয় সম্পর্কে পড়া হয়ে যায়। এতে করে মস্তিষ্কে বিষয়গুলো চাঙ্গা থাকে। অন্যদিকে বিষয় ভিত্তিক পড়াশুনা করলে একটি বিষয় শেষ করে তা পুনরায় পড়তে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। এ সময় শরীরের ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে ঘুমের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটু কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে হবে। ইংরেজি সাহিত্যে অনেকেরই ভয় থাকে। কেননা বার বার পড়েও কবি সাহিত্যিকদের নাম মনে থাকে না। তাই এর পেছনে আনেক সময় খরচ করতে হয়।
তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ইংরেজি সাহিত্য বিষয়টি শুধু বিবিএস প্রিলিমিনারিতেই বেশি কাজে লাগে। লিখিত, ভাইভা কিংবা অন্যকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তেমন কাজে আসে না। তাই এ বিষয়টির জন্য পরীক্ষার আগে ২ থেকে ৩ দিন সময় নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। গণিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো-অনুশীলন ছাড়া গণিত বিষয়টিতে ভালো করা সম্ভব নয়। পরীক্ষাকে সামনে রেখে সম্প্রতিক সময়ে যে কোন একটি ‘জব সল্যুশন’-এর প্রশ্ন সমাধান করা যেতে পারে। এবার বিষয় ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বাংলা- ৩৫
সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির কবি-সহিত্যিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সম্ভব হলে নোট করে লিখে পড়লে ভালো হয়। বাংলা ও ইংরেজি প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, সন্ধি ও সমাসের ব্যতিক্রম উদাহারণগুলো পড়তে হবে। অন্যদিকে নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যকরণ বইটি-ই বিসিএসে ব্যাকরণ বিষয়ক প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট।
ব্যাকরণ অংশে ভালো করতে হলে বিসিএসসহ পিএসসির নন-ক্যাডার ও অন্যান্য সরকারি চাকরির ও বিভিন্ন ব্যংকে নিয়োগের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো আগে দেখে নিতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র থেকে অনেক প্রশ্ন কমন পড়ে।
বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমাস, বানানরীতি, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান ইত্যাদি বিষয়গুলো দ্রুত দেখে নিতে হবে। বাংলা বানানের জন্য বাংলা একাডেমি প্রণীত বানান রীতিগুলো আয়ত্ব করে ফেলতে হবে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক সম্পর্কে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে। তাই এ বিষয়েও ভালো করে পড়তে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যর উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জেনে রখতে হবে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে পড়া কম। তাই একটু ভালো করে পড়লে এ অংশে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়।
ইংরেজি- ৩৫
ইংরেজির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডার। গ্রামার সম্পর্কিত বিসিএস ও পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে। বিসিএসের ইংরেজি এতো বেশি কঠিন হয় না। ব্যাংক জবের তুলনায় বিসিএস পরীক্ষার ইংরেজি সহজ হয়। তাই ইংরেজির জন্য বিসিএসের সিলেবাসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রয়োজনে লিখে লিখে পড়া যেতে পারে। এতে গ্রামারের নিয়মগুলো সহজেই আয়ত্বে আসবে।
ইংরেজী সাহিত্য বিষটি শুধু বিবিএস প্রিলি ছাড়া রিটেন, ভাইভা কিংবা অন্যকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তেমন কাজে আসে না। তাই এ বিষয়টির জন্য পরীক্ষার আগে ২ থেকে ৩ দিন সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে ইংরেজি সাহিত্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিখ্যাত সাহিত্যিকদের নাম, সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্যে তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে হবে। কিছু ক্ল্যাসিকাল বইয়ের নাম ও লেখকের নাম, বিতর্কিত বই ও লেখকের নাম জেনে নিতে হবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা -(১৫+১৫)
গণিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো-অনুশীলন ছাড়া গণিত বিষয়টিতে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন গণিত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া উচ্চতর গণিত, ধারা, শতাংশ, পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতা, বিন্যাস ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য কোনো গাফলতি না করে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণীর গণিতসহ উচ্চতর গণিত বইটি ভালোভাবে শেষ করতে হবে। গণিত অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কেননা পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
মানসিক দক্ষতা অংশে ভালো করার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগসহ পড়তে হবে। এজন্য বাজারে প্রচলিত জব সল্যুউশনগুলোর একটি বইটি ভালোভাবে সমাধান করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান- ৫০
সাধারণ জ্ঞানের বাংলাদেশ বিষয়টি প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা তিনটি পরীক্ষার জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-দু’টাকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিগণের সম্পর্কেও যাবতীয় তথ্য জানতে হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো করার জন্য নবম ও দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইটি পড়া যেতে পারে।
নিয়মিত দৈনিক ও মাসিক পত্রিকা পড়তে হবে। বাংলা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতা, সম্পাদকীয় ও মতামত, আন্তর্জাতিক, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিষয়গুলো পড়তে হবে। পত্রিকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও সরকারি বিভিন্ন জরিপের প্রয়োজনীয় অংশ পড়তে হবে। বাংলাদেশ অংশের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রাচীন স্থাপত্যের উপর বেশি জোর দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো করার জন্য মানচিত্রের জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের যখন যে অংশ পড়া হবে সঙ্গে সঙ্গে মানচিত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে পড়লে তা অনেক বেশি কাজে আসবে। পড়ার সময় যে বিষয়টি কঠিন মনে হবে সে বিষয়টি মার্ক করে পড়া যেতে পারে। তবে লিখে লিখে পড়লে তা বেশি কাজে আসবে বলে আমি মনে করি। এর মাধ্যমে রিটেনে আপনি এগিয়ে থাকবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি- (১৫+১৫)
বিগত বছরে পিএসসির অধীনে যে প্রশ্ন এসেছে তা ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে। আমি মনে করি বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে পারলে বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো করা সম্ভব। তবে নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। এছাড়াও সৌরজগৎ, আগ্নেয়গিরি, শিলা, ভূত্বক, প্রণালী প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভবে পড়তে পারলে আইসিটি বা কম্পিউটার বিষয়ে ভালো করা সম্ভব । তবে বাস্তব জ্ঞান লাভের মাধ্যমে অনুশীলন করতে পারলে শতভাগ কমন পড়া সম্ভব।
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা - ১০
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। বিশ্বের কোনো দেশ কোথায় অবস্থিত সেটা জানা না থাকলে এই অংশে মোটেও ভাল করা সম্ভব নয়। তাই বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। নবম দশম শ্রেণির ভুগোল বইটি পড়ে নিলে ভালো হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে ।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন- ১০
এ বিভাগের প্রশ্নের উত্তরের অপশনগুলো কাছাকাছি হওয়ার করণে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ বিভাগের প্রশ্নের উত্তর শতভাগ নিশ্চিত হয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়াও এ অংশে ভালো করতে হলে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, আইনের শাসন, মুল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা নিতে পাড়লে ভালো হয়।
সর্বপরি, এ সময়ে সুস্থ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শরীরের প্রতি যত্নশীল হবেন। বিশেষ করে ঘুমের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। অন্যদিকে প্রিলি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সময় ব্যবস্থাপনা। পরীক্ষার পূর্বে তাই মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে সময়ের ব্যাপারে প্রস্তুত রাখুন। অন্যদিকে এ সময়ে কোন চাপ নেয়া যাবে না । বেশি চাপ নিলে জানা বিষয়েও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজের উপর বিশ্বাস রেখে প্রস্তুতি নিতে থাকুন সফলাতা আশবেই। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
লেখক: মো. আশরাফুজ্জামান
৩৬ তম শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি)
আরও পড়ুন