মধুর বসন্ত এসেছে ফাগুনের আগুনে
প্রকাশিত : ০৮:৫৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১২:০৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
শীতের হাওয়ার নাচন থামতে না থামতে ঋতুরাজ এসে হানা দিয়েছে। প্রকৃতি আজ দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। ভ্রমরও করছে খেলা পাখা তুলে। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। আজ পহেলা ফাল্গুন-১৪২৫, ঋতুরাজের প্রথম দিন। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই প্রাণচঞ্চলতা, কচিপাতায় আলোর নাচন।
হিম শীতে ঝকঝকে রোদে সকালটা আজ শুরু হয়েছে। বসন্তের আবহে চাদরমোড়া শীতকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গত কয়েকদিনে। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে স্বমহিমায়। আর শহুরে বসন্তেও যেন সেই আত্মীয়তা থাকে। কানে কানে বলে যায়, আজ ভুলিয়ো আপন পর ভুলিয়ো। ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’।
আজ বর্ণিল পোশাক আর ফুলের বর্ণচ্ছটা গায়ে মাখিয়ে তরুণ-তরুণীরা বইমেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চারুকলার বকুলতলা মাতিয়ে রাখবে। দিনটির শুরু চারুকলার বকুলতলায় প্রথম প্রভাতে বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। দিনভর চলবে নানা উৎসব।
বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রঙকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায় না গ্রাম্যজীবনও। আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে গ্রামে বসন্তের আমেজ একটু বেশিই ধরা পড়ে। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করে।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের আট ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বাংলায় বসন্ত উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হলেও এর শুরুর একটা ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে, যা অনেকের অজানা।
মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এছাড়া তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধানমন্ডি লেক, বলধা গার্ডেন মাতিয়ে রাখবে সারাদিন।
আজ বেজে উঠবে সুরে সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান‘ফুলে ফুলে দুলে দুলে বহে কে বা মৃদু বায়ে/ কে জানে কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়।’ রেকর্ডে বেজে উঠবে লতা মুঙ্গেশকরের সেই গান-‘পাখি আজ কোন সুরে গায়/ কোকিলের ঘুম ভেঙে যায়/ আজ কোনো কথা নয়/ শুধু গান/ আরো গান/ আজ বুঝি দু’জনের মন/ কতো সুরে করে আলাপন/ আজ কোনো কথা নয়/ শুধু গান আরো গান...।’
এসএ/