ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে `স্বপ্নভঙ্গ`, ইরানের বিকল্প পথ কী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৫, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের মধ্যে দিয়ে অন্যতম এক মিত্রকে হারায় ইরান। এ যেন দেশটির ওপর একটি আঘাত। দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা ও কাসেম সোলাইমানির লন্ডভন্ড চিত্রে সেরকমই এক আঘাতের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল।

তবে, আসাদ সরকারের পতনের পর প্রথম ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকে বেশ সাহসী অবস্থান নিতে দেখা যায়। সেই ভাষণের সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দাবি করেছিলেন, ইরান মজবুত ও শক্তিশালী আছে। তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ভাষণে তাকে এক প্রকার বলিষ্ঠ কন্ঠেই বলতে শোনা গিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নেতৃত্বাধীন জোট 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স' আরও জোরালো হবে।

তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা অবশ্য ভিন্ন কথার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের দাবি, বাশারের পতনে মধ্যপ্রাচে ইরানের নেতৃত্ব ধরে রাখা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এছাড়া ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ধরে রাখাই কঠিন হবে।  

গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স এমন একটা সুবিধাবাদী নেটওয়ার্ক, যা ইরানকে কৌশলগত গভীরতা দেওয়া এবং সে দেশকে সরাসরি আঘাত ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। তবে, কৌশল হিসেবে এটা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের বর্তমান হালচাল প্রসঙ্গে ড. ভাকিল বলেন, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যে চাপ রয়েছে, তা থেকে বাঁচতে 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের' অবশিষ্টাংশকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাইবে ইরান।

ড. ভাকিল আরও বলেন, ইরান নিশ্চিতভাবেই তার প্রতিরক্ষা নীতির পুনর্মূল্যায়ন করবে, যা মূলত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল।

তার মতে, ইরান নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিবে এবং সরকারকে আরও বেশি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ওই খাতে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবে।

তবে ড. ভাকিলের মতামতের ভিন্ন মত প্রকাশ করেন কানাডিয়ান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে ইরানে তিন বছর দায়িত্ব পালন করা ডেনিস হোরাক। তিনি মনে করেন, এদের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা অনেক কিছুই করতে পারে।

ইরানকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখতে নারাজ ডেনিস হোরাকের যুক্তি মতে, ইরান এখনও মজবুত। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরান তার সেই শক্তি ব্যবহার করতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মি. হোরাক মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টায় ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি ইরানের সরকারের সহনশীলতা আরও কমে আসবে। হিজাব না পরা নারীদের শাস্তি আরও জোরদার করার নতুন ও দীর্ঘ পরিকল্পিত আইন শিগগিরই আসছে।

তার দৃঢ় পর্যবেক্ষণ, ইরানের লাখো নাগরিক যেমন এটা সমর্থন করে না, তেমনই সেখানকারই লাখ লাখ নাগরিক এখনও এটা সমর্থন করেন। আমি মনে করি না যে শিগগিরই শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো কোনো ঝুঁকি রয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, ইরানের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে বেশকিছু বিষয়ে জনমনে ক্রোধের পরিবেশ, সিরিয়ায় বর্তমানে তাদের অবস্থান শক্ত অবস্থান থেকে পিছলে যাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে ঘাটতি ইরানের শাসকদের সামনের পথ যেন বেশ জটিলতর হয়ে উঠছে। 

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এসএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি