ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মনের পশুর কোরবানি দিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৫, ২৮ জুলাই ২০২০

একটি নির্দিষ্ট সময়ে বছরান্তে আমাদের মাঝে ফিরে আসে ঈদুল আজহা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ সময় যাদের উপর ওয়াজিব হয়েছে তারা সাধ্যমতো পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। গরিব-দুস্থদের মধ্যে গোশত বিলি-বণ্টন করে থাকেন। তবে এ ছাড়াও এই কোরবানির অন্য একটি বৃহৎ তাৎপর্য রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই আমরা সেই তাৎপর্যটি বেমালুম ভুলে যাই। পশু কোরবানি দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের মনের পশুটিকেও কোরবানি দিতে হয়। কিন্তু সমাজে আমরা ক’জন সেই মনের পশুটির কথা একটিবার চিন্তা করি! 

মনের পশু তো দূরের কথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে সেটাই ভুলে যান অনেকে। আমাদের সমাজে কারও কারও ক্ষেত্রে কোরবানি বিষয়টি পরিণত হয়েছে একটি লোক দেখানো উৎসবে। অনেক মানুষই হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি কিনে দু’চার দিন আশপাশের দু’চারপাড়া-মহল্লা ঘুরিয়ে তারপর কোরবানি দিয়ে থাকেন।

এই কাজটি করে থাকেন শুধুমাত্র নিজের বিত্তবৈভব ও প্রতিপত্তি জাহির করার প্রয়াসে। বর্তমান সমাজে এ রকম অহরহ ঘটছে। কিন্তু আল্লাহ এই কোরবানির কথা সম্পর্কে কি বলেছেন? হযরত ইব্রাহিম (আ.) কি এভাবে কোরবানি করেছেন? মুসলিম সমাজের এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)। তিনি সে পরীক্ষায় পাস করেন। সৃষ্টি করেন আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ করার এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

কোরবানির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু মনে করে প্রতীকী অর্থে পশু কোরবানি করা। এ ধর্মীয় উৎসব তাই ত্যাগের মহিমা বিজড়িত।

আল্লাহর জন্য, তার সৃষ্টির জন্য, মানবতার জন্য ত্যাগেও যে আনন্দ আছে, তা ব্যতিক্রমী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসবে প্রতিফলিত হয়। সে জন্য কোরবানির পশুর সব মাংস কোরবানিকারীকে খাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এর এক-তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনকে, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজনকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কোরবানির উদ্দেশ্য পশু জবাই করে তার মাংস রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করা নয়।

আমাদের দেশে দেখা যায় কোরবানি ঈদের আগে ফ্রিজ রেফ্রিজারেটর কেনার মহোৎসব পড়ে যায়। কি নিয়তে মানুষ এ রকম করেন? শুধু কোরবানির গোশতগুলো মজুদ করে সারা বছর খাওয়ার জন্য? এটাই কি ত্যাগ? 

আত্মত্যাগ হওয়া উচিত মনের পঙ্কিলতা, বিদ্বেষ ও হিংস্রতার। ঈদুল আজহার তাৎপর্যও তাই। আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের কোরবানি তখনই কবুল হবে, যখন আমরা যৌথভাবে বনের ও মনের পশুকে একত্রে জবাই করতে পারব। 

শুধু একটি গরু বা ছাগল জবাই করে দিলাম এই প্রথাগত কোরবানি নয়। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি দিতে হবে। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও আমাদের অনুধাবন করতে হবে। মনের সব জটিলতা, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে ঈদকে করতে হবে আরও মানবিক ও অর্থবহ। তবেই সেই কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। 

যারা কোরবানি করবেন, তাদের উচিত হবে ওই পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনের মধ্যে যে হিংসা, ঘৃণা, পরশ্রীকাতরতা, অহমিকা, স্বার্থপরতা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অন্যের স্বাধীনতা এবং অধিকার হরণের যে পশু বসবাস করছে তাকেও একই সঙ্গে জবাই করা। তবেই এর মধ্য দিয়ে কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। আর এ শিক্ষার মধ্য দিয়ে নৈতিকতা, মানবিকতা, প্রেম, ভালোবাসা ও সততার পথে ফিরে আসাও সম্ভব হবে।

কাজেই আসুন, আমরা সবাই ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করি ধর্মীয় উৎসব কোরবানিতে। বনের পশুর সঙ্গে মনের পশুকেও জবাই করে সমাজে শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। এ কাজ করতে পারলেই শুধু আত্মত্যাগ শিক্ষার ধর্মীয় উৎসব কোরবানি সার্থকতা পাবে।
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি