ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

মন্দিরে মাকে রেখে পালিয়ে গেলেন ছেলে

প্রকাশিত : ২১:৩২, ৭ মার্চ ২০১৯

আশি বছরের বৃদ্ধা মাকে মন্দিরের কাছে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলেন ছেলে। ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিব চতুর্দশী মেলায়। এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড সহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপক ঝড় তুললে এক পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় মাকে আবার ফেরত নেন ছেলে সৃজন চক্রবর্তী।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সীতাকুণ্ড শিব চতুর্দশী মেলায় মাকে নিয়ে তীর্থ ভ্রমনে আসেন সৃজন চক্রবর্তী নামে এক যুবক। পরে সে মাকে চন্দ্রনাথ ধামে ভীড়ের মধ্যে অপেক্ষা করতে বলে পালিয়ে যায়।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা এ মা যাকেই পাচ্ছিলেন তাকেই ছেলের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকুতি করছিলেন। অসহায় এ মা ছেলের নাম বলতে পারলেও চট্টগ্রাম শহরের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বলতে পারছিলেন না।

এ ঘটনায় তাঁর ছেলেদের বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। পরে এলাকার কয়েকজন যুবক এই মাকে সীতাকুণ্ড কলেজ রোডস্থ বটতলী কালী মন্দিরে এনে রাখেন।

যে যুবকদের সহায়তায় তিনি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের একজন সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সদস্য ও শিব চতুর্দশী মেলা কমিটির সদস্য নিতাই দে রিপন। সর্বপ্রথম তিনি এ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপরেই স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিতাই দে রিপন- এর সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধা মা নিজের নাম ও পরিবারের সদস্যদের নাম বলতে পারছেন। তার নাম পারুল চক্রবর্তী। তার স্বামীর নাম মৃত গোপাল চক্রবর্তী। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার এনায়েতপুর গ্রামে।

বৃদ্ধার কথার সূত্র ধরে নিতাই দে রিপন জানান, এই মায়ের পাঁচ ছেলে মেয়ে আছে। তিনজন মেয়ে ও দুই জন ছেলে। এরা হলো সৃজন চক্রবর্তী, সুমন চক্রবর্তী, সীমা, রুমকি ও শিলনী চক্রবর্তী। তাঁরা সবাই বিবাহিত। সৃজন চক্রবর্তী একটি টেইলার্সের দোকান পরিচালনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই বৃদ্ধা মা দুই ছেলের সাথে চট্টগ্রামের মেয়র গলিতে বাস করছেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর শফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সীতাকুণ্ডে চন্দ্রনাথ দর্শনের কথা বলে সোমবার সৃজন চক্রবর্তী নামে এক যুবক সীতাকুণ্ড নিয়ে আসেন। এরপর কাজের অর্ডার বেশি আছে, অনেক জামা-কাপড় সেলাই করতে হবে জানিয়ে ছেলে চলে যায়। যাবার সময় মাকে বলে যায়, সে আবার এসে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অসহায় বৃদ্ধা মাকে ফেলে রেখে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। এর মধ্যে কয়েকজন তাকে নিয়ে আসে এই কলেজ রোডস্থ বটতলী কালী বাড়িতে। বৃদ্ধা এ সময় স্থানীয় যুবকদের কাছে আকুতি করছিলেন তাকে টেক্সিতে তুলে দেওয়ার জন্য। তাহলে তিনি ছেলের কাছে চলে যাবেন। তবে ছেলের ঠিকানা চট্টগ্রামের মেয়র গলি বলতে পারলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি।

স্থানীয় যুবকদের মাধ্যমে ঘটনাটি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা`র নজরে আসে। তিনি মায়ের বক্তব্যের সূত্র ধরে সৃজন চক্রবর্তীর টেইলার্সের দোকানের খোঁজ লাগান। পরে পুলিশের সহায়তায় আজ (বৃহস্পতিবার) ছেলে এসে মাকে নিয়ে যান।

জানা যায়, আজ সকাল এগারোটার দিকে সৃজন চক্রবর্তী শিব চতুর্দশী মেলার কার্যালয় থেকে তার মাকে বুঝে নেয়। কেন সে তার মাকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, ভরণ পোষণের খরচ জোগাতে সে হিমশিম খাচ্ছিল। তাই সে তার মাকে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল।

আআ/এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি