ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মহাসপ্তমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে উৎসব

প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:১০, ২ অক্টোবর ২০১৭

দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙানোর বন্দনার মধ্য দিয়ে গতকাল শুরু হলো শারদীয় দুর্গোত্সব। গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী, আজ বুধবার মহাসপ্তমী। গতকালের তুলনায় আজ বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তদের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে আসছে। উৎসবপ্রিয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় মেতে উঠেছে পূজার আনন্দে। মণ্ডপগুলো ঝলমলে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে উঠেছে। মন্দিরগুলো উলুধ্বনিতে মুখরিত। এর সঙ্গে রয়েছে শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য। পূজাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মণ্ডপগুলোতে কড়া নিরাপত্তা দিচ্ছে। সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।

রাজধানীর হাতিরঝিল ও বিটিভি সংলগ্ন রামপুরা উলন পূজা মণ্ডপে দেখা যায়, মণ্ডপটিতে গতকালের তুলনায় আজ বুধবার পুণ্যার্থীদের আগমন বেড়েছে। পুণ্যার্থীদের অনেকে দেবীকে পূজা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বাচ্চাদের বায়না মেটাতে মণ্ডপকে ঘিরে গড়ে উঠা মিষ্টি, বিভিন্ন খাবার ও খেলনার দোকানে কেনাকাটা করছেন।

উলন মণ্ডপে কথা হয় পূজা দিতে আসা বিথি রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি আমার এক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে এসেছি। আগামীকালও আসবো এখানে। এবার পূজার প্রথম দিন থেকে দেখছি মানুষের ভিতরে একটা উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে।

মণ্ডপটির নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কী ধরণের প্রস্তুতি আছে জানতে চাইলে রামপুরা থানার এএসআই ইকবাল হোসেন বলেন, সোমবার সকাল ৮টা থেকে আমরা মণ্ডপটির নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ শুরু করেছি। থাকবো বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত। আমাদের সঙ্গে বিশেষ আনসার সদস্য আছেন ৮ জন। যাদের মধ্যে ২ জন নারী আর ৬ জন পুরুষ। আর পুলিশ সদস্য আছেন ৭ জন। যাদের ২ জন নারী পুলিশ ও ৫ জন পুরুষ। এছাড়া ২ জন গোয়েন্দা বিভাগের লোকও আছেন। আশা করছি কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ঘটবে না।

রামপুরা উলন পূজা উৎযাপন কমিটি ও মণ্ডপ কমিটির সভাপতি শ্রী প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা ধর্মীয় উৎসব পালন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা এ উৎসবে সবার অংশগ্রহণ চাই। কিন্তু কোনো ধরণের অহিংসা চাই না। পূজাকে ঘিরে পুলিশের প্রস্তুতি সন্তুষ্টি পর্যায়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। তারা কোনো বিশৃঙ্খলা হতে দিবেন না।

মণ্ডপ কমিটির সদস্য শান্তি রঞ্জন দাস জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে সারা দেশে ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিত পূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোত্সবের সূচনা হয়। মাতৃবন্দনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকাল ৯টায়। নানা উপচারে ডালা সাজিয়ে মাতৃমণ্ডপে আসতে থাকেন ভক্তরা। অশুভ শক্তির বিনাশে ‘মঙ্গলময়ী’দেবীর জাগরণে জগতে সুর শক্তি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা করেন তারা।

মণ্ডপটির নিকটবর্তী মেরুল বাড্ডা পূজা মণ্ডপেও একই চিত্র দেখা যায়। পুণ্যার্থীরা মণ্ডপে আসছেন। পূজা দেওয়ার পর কেউ সেখানে অবস্থান করছেন। আবার কেউ চলে যাচ্ছেন।

মেরুল বাড্ডা পূজা মণ্ডপে আসা বিকাশ দাস বলেন, এবার পূজায় নিরাপত্তা যেন একটু বেশি। সে কারণে ভালো লাগছে। কারণ ভয় না থাকলে প্রতিদিন পূজা দিতে আসা যায়।

জানা গেছে, শারদীয় দুর্গোত্সবের আজ মহাসপ্তমী। আজ শুরু হচ্ছে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মূলত: দুর্গোত্সবের মূল পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে আজ সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। আগামীকাল মহাষ্টমী। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ মিশনে কাল মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা।

পূজা উদযাপন কমিটির ১১ দাবি : শারদীয় দুর্গাপূজায় তিন দিন সরকারি ছুটির ঘোষণাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন পূজা কমিটির সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল ভবনে জাতীয় উত্সবের আঙ্গিকে পাঁচ দিন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা, পূজামণ্ডপ ও মণ্ডপগামী সড়কগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, পূজার পাঁচদিন সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত, বিজয়া শোভাযাত্রায় সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

আরকে/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি