মা-বাবার সেবা উত্তম ইবাদত
প্রকাশিত : ১৪:৩৯, ১৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৫:০১, ১৮ মে ২০১৯
আমাদের মধ্যে ইবাদত সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে। আল্লাহর ইবাদতকে জীবন থেকে পৃথক করে দেখি, আর এটা এক ধরনের ভ্রান্তি।
এরপর আল্লাহ যাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা হলেন বাবা-মা। বাবা-মা যদি সন্তানের ব্যবহারে কষ্ট পান সে সন্তানের ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না সে কথা আল্লাহ তাঁর কোরআনে এবং রাসূল (সঃ) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
সূরা লুকমানে ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- আমি তো মানুষকে পিতামাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। কেননা, মা সন্তানকে অসীম কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ান দু’বছরে। সুতরাং, আমার প্রতি এবং পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-তোমরা আল্লাহর প্রতি ইবাদত করবে ও কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশি, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে।
আজকে আমরা যারা মুসলামান আমরা আল্লাহকে খুঁজি মসজিদের চার দেয়ালের মাঝে। আর আল্লাহ বলেন, আমাকে খুঁজে পাবে বাবা-মা’র সেবায় এবং সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, মুসাফির এবং দাস-দাসীদের প্রতি সদয় আচরণের মাঝে। এ জন্য কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে জোর প্রদান করা হয়েছে।
কোথাও বলা হয়েছে- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতের অধিভুক্ত হবেনা।
উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও, কোরআনের বহু জায়গায় পিতামাতার খেদমত করতে সন্তানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূরা বনি ইসরাইলে প্রতিটি মানুষকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ ঘোষণা দেন- তোমার প্রতিপালক তোমাকে আদেশ করেছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।
তাদের একজন বা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো।
এমন আদেশের পর কোরআনের অসাধারণ কাব্যিক চরণের মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তা পিতামাতার জন্য কিভাবে দোয়া করতে হয়, তাও শিখিয়ে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন- ‘ওয়াখফিজ লাহুমা জানাহাজ্ জুল্লি মিনার রাহমাতি ওয়া কুর রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়া-নি সাগিরা’।
অর্থাৎ, মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতায় চোখ অবনমিত করো এবং বলো হে আমার প্রতিপালক তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।
সুতরাং কোরআনের এ আয়াতগুলি থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বাবা-মার প্রতি মমতা এবং ভালবাসার সঙ্গে আচরণের কী অসীম গুরুত্বই না আরোপ করা হয়েছে।
শুধু কোরআন নয়। রাসূল (সাঃ) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও সেবা করার তাগিদ দিয়েছেন।
হযরত আব্দুর রহমান বিন মাসউদ থেকে বর্ণিত এ হাদিসে (বোখারি) বলা হচ্ছে, একবার এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আল্লাহকে ভালবাসার জন্য আমাকে কী আমল করতে হবে?
রাসূল (সাঃ) বলেন- ওয়াক্তমত নামাজ আদায় কর।
লোকটি বললো- তারপর?
তিনি বললেন- পিতামাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।
-তারপর?
ধর্মকে কায়েম রাখার জন্য জ্বেহাদ কর।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে বলা হচ্ছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন-আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি যারা ঈমান আনে তারা যেন বাবা-মায়ের সেবা করে।
আজকের দুনিয়ায় যারা ধর্মকে জীবন থেকে পৃথক করে মসজিদের ভেতরে নিয়ে গেছে-যাদের ধর্ম কেবল লেবাস আর আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ তারা, একবার চোখ খুলে দেখুক ধর্ম এবং জীবন একই সুতোয় গাঁথা একটি মালা।
যার নাম ধর্ম তারই নাম জীবন। জীবন ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু হতে পারেনা। অবশ্য সে যদি কুরআন নির্দেশিত মানুষের জীবন হয়।
সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।