ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪

মাইকেল জ্যাকসনের খ্যাতি কি হুমকির মুখে?

প্রকাশিত : ১০:১০, ১২ মার্চ ২০১৯

মাইকেল জ্যাকসনকে অনেক দশক ধরে ‘পপ সম্রাট’ নামে  ডাকা হয়েছে। তিনি হলেন সর্বকালের সেরা তারকাদের একজন। কিন্তু ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রচারের পর তার সেই সুনাম এখন প্রশ্নে মুখে পড়েছে।

এ সপ্তাহে প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছে যে, জেমস সেফচাক এবং ওয়েড রবসন নামের দুইজন ব্যক্তি দাবি করেছেন, শিশু থাকাকালে তাদের নির্যাতন করেছেন এই গায়ক।

যদিও মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু এই অভিযোগ তার নামের ওপর বিশাল এক কালো ছায়া তৈরি করেছে।

ওই তথ্যচিত্রে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা নি:সন্দেহে অনেককে বিব্রত এবং অস্বস্তিতে ফেলবে। ওই দুইজন ব্যক্তি মাইকেল জ্যাকসনের দ্বারা নির্যাতনের যে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, তা অনেককেই হতবাক করে দিতে পারে।

তবে এই গায়ক দোষী নাকি নির্দোষ, তা নিয়ে সেলিব্রেটি এবং দর্শকদের মধ্যে বিভক্ত মতামত তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, ওই তথ্যচিত্রে মাইকেল জ্যাকসনকে একজন শিশু যৌন নির্যাতনকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে।

তবে অন্যরা এখনো তার পক্ষে রয়েছেন এবং মনে করেন যে, তিনি নির্দোষ। তবে পিআর কোম্পানি রাইট অ্যাঙ্গেলসের প্রতিষ্ঠাতা পল ব্লানচার্ড মনে করেন, মাইকেল জ্যাকসনের উত্তরাধিকারের ওপর এর কি প্রভাব পড়বে, তা এখনি বলা কঠিন।

জ্যাকসনের ব্যাপারে এসব অভিযোগ শক্তভাবে নাকচ করে দিয়েছে তার পরিবার। তারা বলছে, এসব অভিযোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্যাকসনের সম্পত্তি থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।

তার ভাগ্নে তাজ জ্যাকসন গণমাধ্যমকে বলেন, মাইকেল জ্যাকসন বেঁচে থাকলে এসব অভিযোগ শুনে কেঁদে ফেলতেন। তবে জ্যাকসনের মা এবং বোন এখনো এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করেননি।

তার মেয়ে প্যারিস জ্যাকসন ওই তথ্যচিত্র প্রচারের পর থেকেই মিডিয়ার বাইরে রয়েছেন এবং এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি।

তবে বৃহস্পতিবার একটি টুইট বার্তায় তিনি তার সমর্থকদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজে যতটা না নিয়েছি, তার চেয়ে তোমরা আমার জীবনকে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছো।’

তিনি বলছেন, ‘অবিচার এবং হতাশার বিষয়ে আমি জানি এবং কিন্তু ক্ষোভ বা রাগের বদলে শান্ত মনকে ধরে রাখা বেশি যুক্তি সঙ্গত....বরং মনকে কোমল করলেই বেশি ভালো লাগে।’

ওই তথ্যচিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শন করার এইচবিও-র বিরুদ্ধে ১০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছে মাইকেল জ্যাকসনের এস্টেট।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডাসহ বিশ্বের বেশ কিছু রেডিও স্টেশন মাইকেল জ্যাকসনের গান প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের রেডিও স্টেশনগুলো এখনো এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়নি। গণমাধ্যম বলছে, তারাও ওই গায়ককে নিষিদ্ধ করেনি এবং তার গানগুলো বিবিসির অনুষ্ঠানে চলতে পারে।

তবে মাস্ট ওয়াচ বিবিসি পডকাস্টের উপস্থাপক স্কট ব্রায়ান বলেছেন, তথ্যচিত্রটি দেখার পর তিনি তার আইফোন থেকে মাইকেল জ্যাকসনের ১৫টি গান মুছে ফেলেছেন।

‘কয়েকদিন পরে আমি একটি ক্যাফেতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম আর তখন মাইকেল জ্যাকসনের একটি গান বাজতে শুরু করে। তখন আমি হেডফোন তুলে কানে লাগাতে বাধ্য হলাম, কারণ আমি কাজ মন দিতে পারছিলাম না। আমার খানিকটা অস্বস্তি লাগছিল।’

তবে রেডিও ১ শ্রোতা ক্রিস্টিন মনে করেন, মানুষ এখনো মাইকেল জ্যাকসনের গান শুনবে। ‘তিনি হচ্ছেন পপ সম্রাট। আমি এমনকি ভাবতেও পারিনা যে, কতজন গায়ক তাকে নিজের রোল মডেল হিসাবে নিয়েছে।’

‘তার চমৎকার কিছু একক গান আর অ্যালবাম আছে। সুতরাং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানার সুযোগ দিতে হবে যে, তাদের অতীত গানগুলো কোথা থেকে এসেছে?’

সিম্পসনের একটি পর্বে লিওন কম্পোওস্কির জন্য ১৯৯১ সালে কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। তবে ওই এপিসোডটি এখন সব স্ট্রিমিং সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সিম্পসনের নির্বাহী প্রযোজক জেমস এল ব্রুকস বলছেন, ‘আমাদের সামনে এই একটি মাত্র পথই খোলা রয়েছে।’ ব্রিটেনের জাতীয় ফুটবল জাদুঘর থেকে মাইকেল জ্যাকসনের একটি ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তবে জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি ব্রার মনে করেন, এই তথ্যচিত্রের ফলে মাইকেল জ্যাকসনের ব্রান্ড ইমেজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি একটি ছাপ থেকে যাবে।

আর ইন্টারনেটের কারণে মাইকেল জ্যাকসনের নামের সঙ্গে এসব অভিযোগ সবসময়েই দেখা যাবে।

‘আমি তার গান শুনে শুনে বড় হয়েছি এবং আমার তিনটি ছোট সন্তান রয়েছে। কিন্তু এত কিছু জানার পরেও তাদের আমি জ্যাকসনের গান শুনতে দেবো কিনা,তা নিয়ে আমাকে আবার ভাবতে হবে ’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি