মাছ চাষে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান
প্রকাশিত : ১৭:১৬, ৬ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৭:২১, ৬ মার্চ ২০১৯
যশোরের শার্শা উপজেলায় মাছ চাষ করে পাঁচ হাজার পরিবারে সুদিন এসেছে। আর এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। উপজেলার মাছের চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এখানকার মাছ। স্থানীয় উদ্যোগের ফলে তৈরি হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে দেশের প্রথম ‘ফরমালিন মুক্ত’ মাছের বাজার।
উপজেলার ১৫টি বাঁওড়, ২৭১টি ঘের, ১০টি বিল ও ছয় হাজার ৬১৯টি পুকুর মিলে ৬ হাজার ২শ’৩৯ হেক্টর জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান।
তিনি বলেন, এখানে চাহিদার তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিবছরে মাছের চাহিদা সাত হাজার পাঁচশত ৭২ মেট্রিক টন। আর উৎপাদিত হয় ২২ হাজার চারশত ৮৫ মেট্রিক টন। মাছ চাষ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন, বাজারজাতকরন, পরিবহন ও বিপননে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার।
উপজেলার বাগআঁচড়া মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক আওছাফুর রহমান বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই উপজেলার চাষিরা মাছ চাষ করছেন। বছরে প্রতি একরে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। আর মাছ বিক্রি করতে পারছেন আট লাখ টাকার। এই এলাকায় প্রধানত দেশি রুই-কাতলার পাশাপাশি দ্রুত বর্ধনশীল সিলভার কার্প, মিনারকার্প, জাপানি রুই, গাসকার্প, মাগুর, কই, পাঙ্গাস, লাইলোটিকা, তেলাপিয়া, মনোসেক্স ও বাটা মাছ চাষ হয়। তিনি বলেন, ইদানিং বিলুপ্ত প্রায় পাবদা, শিং, মাগুর ও গুলশা মাছের চাষে লাভ বেশি হওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।
শার্শার বড় বসন্তপুর গ্রামেরকে এম ফিরোজ মামুন ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ডিগ্রী অর্জনের পর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকুরি নেন। কর্মক্ষেত্র ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশাল। সেখানে মাছ চাষ দেখে চাকুরি ছেড়ে ২০১০ সাল থেকে নিজ গ্রামে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমে একটু সমস্যায় পড়লেও বছর যেতে না যেতেই এর সুফল পেতে শুরু করেন তিনি। আজ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।
ফিরোজ বলেন, ১৫ বিঘা জলকরের ৪টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। মাসে ৭ হাজার টাকা বেতনে দু’জনকে ওই পুকুরে সার্বক্ষনিক দেখাশুনার জন্য রেখেছি। মাছ ও পানির গুনাগুন বুঝে এদের সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্যই আজ আমার সফলতা এসেছে।
চারটি পুকুরে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে তার খাদ্য,ওষুধ ও তদারকিতে গতবছর খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। তবে মাছ বিক্রি করে পেয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টাকা। বছর শেষে আসে প্রায় ১১ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া গুলশা মাছের একটি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে পাবদা, শিং, মাগুর ও গুলশা মাছের চাষ করছি। বিলুপ্ত প্রায় এসব মাছের চাষ করে আজ আমি সফল।
শার্শার বাগুড়ি গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ১০ বিঘা জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন। শিক্ষিত কর্মঠ যুবক ইব্রাহিম মাছ চাষ করে পরিবারে সুদিন ফিরিয়ে এনেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে খাদ্য ও পুষ্টির জন্য ওষুধের প্রয়োজন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির কোম্পানি ভেজাল খাদ্য ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছেড়েছে। আমরা ওই সব ভেজাল জিনিস কিনে প্রতারিত হচ্ছি। সরকার যদি প্রশাসনিক ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে মাছ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।
কেআই/
আরও পড়ুন