ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মাছের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার খুব সহজ বিষয় না

প্রকাশিত : ১৮:১১, ২১ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২২:৩০, ২৮ আগস্ট ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশে বর্তমানে মাছের রোগ প্রতিরোধ এবং মাছের জাত উন্নয়নে কতিপয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মাছের বিদ্যমান ফাঙ্গাস রোগ প্রতিরোধ করা গেলেও তা রফতানির মানসম্পন্ন হচ্ছে না। যে কারণে চিংড়ির পাশাপাশি অন্য মাছ রফতানির তালিকায় স্থান করে নিতে পারছে না। তবে আশার কথা শোনালেন  নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান (Oystein Evensen)। তিনি নরওয়ের নর্থইস্ট একুয়্যা নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে অটোজেনাস ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন। এই ভ্যাকসিন ব্যবহারে মাছের গুনাগুণ অটুট থাকবে বলে মনে করছেন তিনি। এছাড়া মৎসসম্পদ নিয়ে তার রয়েছে বিস্তর গবেষণা। গত ১৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশে এসেছেন গবেষণার কাজে। রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে কথা হয় ইটিভি অনলাইনের।  

শুরুতে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের মৎসসম্পদ নিয়ে।

বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসা দিয়ে শুরু করে মৎসসম্পদের ক্ষেত্রে এদেশের উজ্জল ভবিষ্যতের কথা জানান তিনি। ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান বলেন, এ ক্ষেত্রে কতিপয় নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি যাতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। পর্যটকদের জন্য যেমন কোলাহলমুক্ত এবং অপেক্ষাকৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে রিসোর্ট স্থাপন করা হয় তেমিন মাছ চাষের জন্যও পৃথক ও নিরাপদ স্থান জরুরি। এজন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা, মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপনা এবং চূড়ান্ত নিয়ানুবর্তিতা দরকার। এর মধ্যে রয়েছে উপযোগী পরিবেশ তৈরি, সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা, রোগ বালাই প্রতিরোধে ব্যকটেরিয়া মুক্ত পরিবেশ।

উল্লেখ্য, তিনি বাংলাদেশে এসে সর্বপ্রথম ময়মনসিংহের চারটি মৎসখামার পরিদর্শন করেন। এর কোনোটিতেই তিনি মাছ চাষের নিরাপদ প্রক্রিয়া দেখতে পাননি। এমনকি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খামারেও একই পরিস্থিতি দেখেছেন বলে জানান।  

বাংলাদেশে মাছের রোগবালাই দূরীকরণে ব্যাপকহারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। এ ব্যাপারে কতটুকু মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

উত্তরে ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান বলেন, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার খুব সহজ বিষয় না। এটা এপিজোটিক আলসিরেটিভ সিনড্রোম (ইইউএস) এর বিষয়। জার্মেটিক থিওরি যথাযথ প্রয়োগ জরুরি, পানির যৌগিক মিশ্রন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সর্বোপরী  মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে অনেক আগে মাছের ফাঙ্গাস বা অন্য রোগ তেমন দেখা যেত না, কিন্তু কৃষিকাজে যখন থেকে ব্যাপকহারে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার শুরু হয় তখন থেকে মাছের শরীরে ঘা দেখা দিলো। এটাই কি মূল কারণ?

ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান : আসলে মাছের সবকিছু নির্ভর করে পানির অবস্থার উপর। রাসায়নিক সারে সাধারণত: নাইট্রোজেন, এমোনিয়াসহ অন্যান্য উপাদান থাকে। এটা পানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। তবে মাছের ফাঙ্গাসের এটাই মূল কারণ নয়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, তাপমাত্রা,  মাছ চাষের খামারের পরিবেশ ইত্যাদি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তবে যেহেতু বাংলাদেশে মাছ চাষ অধিকাংশ সময় খোলামেলা হয়ে থাকে সেহেতু এসব কারণেও মাছ বেশি পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।

বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর বর্তমানে দেশে তেলাপিয়ার চাষ হচ্ছে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে তেলাপিয়াকে রফতানির তালিকায় আনতে করণীয় সম্পর্কে যদি বলেন।

ওয়েস্টাইন ইভেনসান : দেখুন, মাছ যারা কিনবে তারা যেসব মান যাচাই করবে সেগুলো বজায় রাখা প্রথম শর্ত। এক্ষেত্রে তেলাপিয়া চাষের শুরু থেকে প্রত্যেকটি ধাপে মান বজায় রাখতে হবে। পোনা বড় করার উপযুক্ত পরিবেশ, স্থান ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ খাবার পরিবেশন, খাবারে কেমিকেল না দেওয়া, খাবার কিংবা চাষের কোনো অবস্থায় ব্যাকটেরিয়া আক্রমণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। কারণ, ইউরোপীয়ান দেশ কিংবা অন্য কোনো দেশ মাছ আমদানী করার আগে যাচাই করবে সেটা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কিনা। যদি কোনো কারণে, মাছের মধ্যে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক উপাদানের সংশ্লিষ্টতা থাকে তবে সে মাছ রফতানির অযোগ্য হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ইলিশ মাছ বর্তমানে পুকুরে চাষ করার চেষ্টা চলছে। পুকুরে ব্যাপক আকারে ইলিশ মাছ চাষ করা সম্ভব কি না।

ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান : আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে, ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার সময় লোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে যায়, ডিম দেয়। মিঠা পানিতে ডিম থেকে বাচ্চা হয়। পরে পুনরায় মা এবং পোনা মাছ সাগরে চলে যায়। যেহেতু এই মাছটির লাইফ সাইকেল একটু বিচিত্র সেহেতু মিঠা পানিতে ইলিশ চাষ সম্ভব। তবে এজন্য অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে।

বাংলাদেশে স্যামন মাছের ব্রিড করা সম্ভব কি না?

ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান : নাহ্ মোটেও না। কারণ, স্যামন মাছ বাংলাদেশে এতো বেশি তাপমাত্রায় বাঁচবে না।

আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. ওয়েস্টাইন ইভেনসান : আপনাকেও ধন্যবাদ, আবার দেখা হবে।

প্রসঙ্গত, আজ সোমবার নরওয়ে অ্যাম্বেসিতে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি মাছের স্বাস্থ্যবিষয়ক রোগ, প্যাথলজি এবং ভ্যাকসিন বিষয়ে বক্তব্য দেন। সেমিনারে নারিশ, কাজী ফার্ম, ওয়ার্ল্ড ফিসসহ এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

ডব্লিউএন

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি